দফায় দফায় বৈঠকেও জট কাটেনি: টলিপাড়ায় জারি কর্মবিরতি, তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ চান পরিচালকরা

সকাল থেকে দফায় দফায় বিভিন্ন পক্ষের বৈঠক। কিন্তু রাত নটার পরে জানা গেল কাটেনি জট। টলিপাড়ায় জারি অচলাবস্থা। মঙ্গলবারেও চলবে কর্মবিরতি। সোমবার রাতের বৈঠকের পরে জানালেন পরিচালক-প্রযোজকরা (Director-Producer)। একইসঙ্গে সমস্যার সমাধানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চান তাঁরা।রাহুল মুখোপাধ্যায়ের (Rahul Mukhopadhyay) উপর নিষেধাজ্ঞার জেরে স্তব্ধ টলিপাড়া। এই পরিস্থিতিতে এদিন বেলা গড়াতেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ‘উৎসব’-এ একে একে জড়ো হন পরিচালকরা। টলিপাড়ায় এই পরিস্থিতির জন্য নিয়মের বেড়াজালকেই দায়ী করেন তাঁরা। এই বিষয়ে সমাধানের জন্য ফেডারেশনের কোর্টেই বল ঠেলেন পরিচালকরা। এর পর বিকে চারটেয় বৈঠকের পরে ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়, “কলাকুশলীরা কাজ বন্ধ রাখেনি। রবিবার গোটা রাত এবং সোমবার বেলা পর্যন্ত কোথাও কোথাও শুটিং হয়েছে। যে টেকনিশানরা করেছেন, তাঁরাও আজকের ফেডারেশনের বৈঠকে রয়েছেন।” উল্টে পরিচালকদের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান, টেকনিশিয়ন নন, মুষ্টিমেয় পরিচালকের জন্যই টলিপাড়ায় শুটিং বন্ধ।

দুপুরেই রাজ চক্রবর্তীরা জানিয়েছিলেন, রাতে আবার বৈঠকে বসবেন তাঁরা এবং তারপরে সাংবাদিক বৈঠক করবেন। প্রায় সোয়া নটা নাগাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পরিচালক, প্রযোজকরা (Director-Producer) জানিয়ে দিলেন, জট কাটেনি। সুতরাং কর্মবিরতি তাঁরা প্রত্যাহার করছেন না।

এক্ষেত্রে জট কাটাতে পরিচালকরা ‘নিরপেক্ষ’ তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁরা বলেন, কাজ বন্ধের পক্ষে নন। কাজ তাঁরা বন্ধ করেননি। চাপ দিয়ে কাজ বন্ধ করানো হয়েছে। অঞ্জন দত্ত জানান, “আমরা তো সিনেমা করি। তাই যে সিনেমা বোঝে। নিরপেক্ষ। আইন বোঝে। এমন কাউকে এই তৃতীয় পক্ষ করা উচিত।” এই তালিকায় কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আমলাও থাকতে পারেন বলে জানান পরিচালকরা।

পরিচালক-অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য জানান, “কর্মবিরতির পাশাপাশি আমরা আলোচনার দরজাও খোলা রাখছি। আমরা তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে চাই। যাঁরা আমাদের এই আবেদন নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।” অনির্বাণও জানান, “সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।” রাজ চক্রবর্তীর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন, যে কাজ যাতে বন্ধ না হয়। কিন্তু টেকনিশিয়ানরাই প্রথম কাজ বন্ধ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার প্রথম থেকেই ফেডারেশনকে আলোচনা জন্য বার্তা দিয়ে এসেছি। আমার ভেবেছিলাম ফেডারেশন একটা বার্তা দেবে আজকে। দেখলাম ওরা এমন কিছু বলেছে, এমন কিছু বিষয় তুলে ধরেছে, তার সব কিছুই নিয়ে আলোচনা হোক।” সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়ে দেন রাজ চক্রবর্তী।

অরিন্দম শীল জানান, এটা এখন আর একজন পরিচালকের বিষয় নয়, প্রায় ২০০ জন পরিচালককে অপমান করা হয়েছে। এখানে কোনও আমরা-ওরা নেই। সবাই মিলেই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষোভের সঙ্গে জানান, “আমার কতটা দুঃখ পেয়েছি, কতটা অভিমান হয়েছে, সেটা নিয়ে আর আলোচনা করছি না। ফেডারেশনের একটা বৈঠক হয়েছে। ডিরেক্টর গ্লিডের বৈঠক হল। দুটো পরিবেশ আলাদা। এভাবে স্লোগানে আমরা অভ্যস্থ নই।” এখানে একটা ডিভাইড এন্ড রুল চালু করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন কৌশিক। তাঁর কথায়, “এটা আমার সমর্থন করছি না। এটা অনভিপ্রেত। এখানে এই সব প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এটা একটা পরিবার। কিন্তু তার সঙ্গে পেটে লাথি মারা হচ্ছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তাদের মনে রাখা উচিত আমাদেরও পেট আছে।”

ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর মতে, “তারা কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন? আমাদের মধ্যে যে মতবিরোধ তৈরি হচ্ছে, তার সমাধানের জন্য তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে সামনে আনা হোক। দিন দিন এত নিয়মের বেড়াজালে তৈরি করা হচ্ছে। নতুন নতুন আইন তৈরি করে আমাদের ছোট ছোট ডিরেক্টর প্রোডিউসারদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এই নিয়ম চালু করছে ফেডারেশন। তারা কিসের ভিত্তে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? সবটাই এক পেশে চলছে। আমার চাই থার্ড পার্টি হস্তক্ষেপে বিষয়টা সমাধান হোক। ফেডারেশন ঠিক করে দেয় একটা কাজে কত লোক লাগবে। এটা কি চলতে পারে। ভারতবর্ষে কোথাও চলে?”

অর্থাৎ দিনের শেষে দফায় দফায় বিভিন্ন পক্ষের বৈঠকের পরেও টলিপাড়ার জট কাটলো না। মঙ্গলবারও কর্মবিরতি চলবে পরিচালকদের। কবে আবার লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের ধ্বনি উঠবে স্টুডিও পাড়ায়- তা জানা নেই কারোরই।