‘অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড’: মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো মঙ্গলে বিধানসভায় পেশ

ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি রোধে কড়া আইনের পক্ষে সওয়াল করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই জন্য আইন আনার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার, বিধানসভার বিশেষ অভিবেশনে ‘অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড’ বিল আনা হবে। এই বিল আনার জন্যই সোমবার থেকে বিধানসভায় (Assembly) দুদিনের বিশেষ অধিবেশন শুরু  হয়েছে।

ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি-১০ দিনের মধ্যে বিধানসভায় বিল আনছেন। বুধবার, মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই নিয়ে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে আইন পাশ করানো হবে বলে জানিয়ে মমতা বলেন, “ধর্ষণের মামলায় দোষীর ফাঁসির বিল আনব বিধানসভায়। তাতে রাজ্যপালকে সই করতেই হবে। না হলে রাজভবন ঘেরাও করবে বাংলার মহিলারা। টানা ধর্না চলবে।” এই আইনের পক্ষে সওয়াল করে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রে এই আইন আনতে প্রয়োজনে নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের কথাও বলেন তিনি। ধর্ষণ বিরোধী আইন প্রনয়ণে ক্ষেত্রে সংসদে ‘প্রাইভেট মেম্বার বিল’ আনার কথা জানিয়ে অভিষেক বলেন, “কেন্দ্রের সরকার যদি এই বিল না আনে, তাহলে প্রাইভেট মেম্বার বিলের মাধ্যমে এই আইন নিয়ে আসতে বাধ্য করব দিল্লির সাংসদদের। প্রত্যেক সাংসদের অধিকার আছে, প্রাইভেট মেম্বার বিল মুভ করিয়ে সেটা বিল হিসাবে আইনসভায় পাশ করিয়ে আইন তৈরি করার। বাংলার মানুষ আমাকে এই অধিকার দিয়েছে।”

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা মতোই, সোমবার থেকে বিধানসভায় দুদিনের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। এদিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করে অভিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। তবে, ‘অপরাজিতা উইম্যান অ্যান্ড চাইল্ড ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিন্যাল লস সংশোধনী বিল ২০২৪’ বিলের খসড়া বিধায়কদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিল নিয়ে আলোচনা।

প্রস্তাবিত এই সংশোধনীতে ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে ধর্ষিতা মারা গেলে অথবা জড় অবস্থায় পৌঁছে গেলে অপরাধীর বাধ্যতামূলকভাবে মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং জরিমানার সংস্থান থাকছে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রেও ধর্ষণকারীদের আমৃত্যু কারাবাস করতে হবে। বয়স নির্বিশেষে যেকোনো ধর্ষণের মামলাতে একই ধরনের শাস্তির বিধান থাকছে। ধর্ষিতার পরিচয় প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর তিন থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে। আদালতে চলা এই সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে কোনো তথ্য অনুমতি ছাড়া প্রকাশ্যে আনলেও একই শাস্তি দেওয়া হবে।

গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে এক মাসের বদলে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। মূল আইনে যেখানে এক বছরের মধ্যে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা ছিল, তা সংশোধন করে এক মাসের মধ্যে করা হবে। মূল আইনে কোনও থানায় ঘটনা নথিভুক্ত করার পর দু’মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা ছিল। এই সংশোধনীতে তা কমে ২১ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হচ্ছে। যদি কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় পুলিশ ২১ দিনে তদন্ত শেষ করতে পারছে না, আরও ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোন আধিকারিক স্বয়ং ওই ঘটনার তদন্ত করবেন।

গত বুধবার মেয়ো রোডের সভা থেকে ধর্ষণে ফাঁসির দাবিতে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “রাজ্যের হাতে আইন থাকলে আমরা অনেক আগেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন আনতাম। কিন্তু অনেক অপেক্ষা করেছি। আর নয়। এবার বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফাঁসির বিল আনব।” এদিন, বিশেষ কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে, মঙ্গলবার বিল নিয়ে ২ ঘণ্টা ধরে আলোচনা চলবে। মুখ্যমন্ত্রী যেমন ভাশণ দেবেন, তেমন মত জানাবেন বিরোধী দলনেতাও।

নয়া আইন BNS-এ ধর্ষণে ফাঁসির সাজা রাখা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ”এখন আইনানুযায়ী, ধর্ষণের অপরাধের ফাঁসি হয় না। কিন্তু ধর্ষণ করতে গিয়ে যদি মৃত্যু হয়, তাহলে ফাঁসি হতে পারে। রাজ্য সরকার আইন পাল্টাতে পারে। তবে আগের ঘটনায় ধর্ষকদের সাজা সংশোধিত আইন অনুযায়ী করা যাবে না।” অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত জানান, “ফৌজদারি আইন ভারতীয় সংবিধানের ৭তম সিডিউলের কনকারেন্ট লিস্টেড। দুটি আইন ছিল, কেন্দ্র নতুন দুটি আইন প্রণয়ন করেছে। ফলে কোনও অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার ক্ষেত্রে আইন করতে গেলে ক্ষমতা সীমিত। কেন্দ্রীয় আইনের ধারার বিরোধী কোনও আইন প্রনয়ণ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রপতির পূর্ব অনুমোদন সাপেক্ষ।” এখন বিল পাশের পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলে কি না সেটাই দেখার।











Previous articleমাঝ আকাশে নিখোঁজ রাশিয়ার চপার, মিলল ভাঙা অবস্থায়; মৃত ২২
Next articleফিল্মি কায়দায় ট্রাকে হামলা! দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা খালাসি, চাঞ্চল্য মগরাহাটে