চা বাগানের বোনাস জট শেষ পর্যন্ত কাটাল শ্রম দফতর, বিজ্ঞপ্তি জারি

শ্রমিক নেতাদের দাবি, উৎপাদন খানিক কমলেও, চা পাতার দাম বেড়ে যাওয়ায় মুনাফায় টান পড়েনি।

মালিক-শ্রমিকদের ‘দরাদরি’র মাঝামাঝি অঙ্ক রেখে চা বাগানের বোনাস জট শেষ পর্যন্ত কাটাল শ্রম দফতর। মঙ্গলবার লেবার কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, ১৬ শতাংশ হারে এবার পুজোর বোনাস পাবেন শ্রমিকরা। আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্যে সেই অর্থ তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তরাই-ডুয়ার্সের মতো পাহাড়ে অর্থাৎ দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পংয়ের চা বাগানের শ্রমিকদেরও ১৬ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হবে এবং তা ৪ অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকদের হাতে তুলে দিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ অনুযায়ী যার যা প্রাপ্য, সেই হারে সকলকে বোনাস দিতে হবে। এছাড়া শ্রমিকদের আরও যা যা দাবি ছিল, সেসবও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে। যেমন চা বলয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, রুগ্ন চা বাগানগুলিতে গুরুত্ব দেওয়া-সহ একাধিক বিষয় নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। কোনওরকম সমস্যা হলে পুজো পরবর্তী বৈঠকে ফের এনিয়ে আলোচনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে শ্রম দফতর।

চা বাগান পরিচালকদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, এ বছর পাতার উৎপাদন কমেছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় পাতার মানও ভাল হয়নি। তা ছাড়া, যে সময় পাতা তোলা শেষ হয় তার চেয়ে এক মাস এগিয়ে চলতি বছর নভেম্বরের পরে পাতা তোলা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে চা পর্ষদ। সব মিলিয়ে চা শিল্প সমস্যায়। সে কারণে গত বারের থেকে কম হারে বোনাস দেওয়া ছাড়া, উপায় নেই। অন্যথায়, চা শিল্পের রাজস্বে ক্ষতি হবে, যার প্রভাব পড়বে বাগানে। গত বছরে একাধিক বাগানে ১৯% হারে বোনাস দেওয়া হয়েছিল।

শ্রমিক সংগঠনগুলি উৎপাদন কমে যাওয়ার যুক্তি মানলেও, তাদের দাবি, কলকাতা এবং শিলিগুড়ির চা নিলাম কেন্দ্রে চলতি বছরে চা পাতার ভাল দাম মিলেছে। প্রথম ‘ফ্লাশ’ বাজারে আসার পরে খোলা বাজারে চা পাতার দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। শ্রমিক নেতাদের দাবি, উৎপাদন খানিক কমলেও, চা পাতার দাম বেড়ে যাওয়ায় মুনাফায় টান পড়েনি।

বোনাস নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপ নিতে হবে সে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই পদক্ষেপ করে নবান্ন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্রম দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত বোনাস জট কাটাতে। আর আজ, মঙ্গলবারই সমাধান বের করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে।

দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং পাহাড়ে অবস্থিত চা বাগানে চলতি  আর্থিক বছরের জন্য শ্রমিকদের বোনাস বিতরণের জন্য ধারাবাহিক বৈঠকগুলি পরিচালিত হয়েছিল রাজ্য শ্রম বিভাগ। চা শিল্প ব্যবস্থাপনা এবং অপারেটিং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই বৈঠক হয়। যেখানে,  সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে তারা ২০% এর কম বোনাস গ্রহণ করার অবস্থানে নেই। ধারাবাহিক আলোচনার পরে, তাদের ১৩% বোনাসের চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়, কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা তা গ্রহণ করেনি।

যেহেতু, দুর্গাপুজো এবং দশেরা উৎসব খুব কাছে এবং এটি জরুরি ও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে যে চা বাগানের শ্রমিকদের বোনাস দ্রুত সংশ্লিষ্ট চা বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবিলম্বে বিতরণ করা হবে।  চা বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা ও বিভ্রান্তির কথা বিবেচনা করে এবং আসন্ন উৎসব মরসুমের পরিপ্রেক্ষিতে, রাজ্যের শ্রম দফতরের অভিমত যে এই ধরনের অচলাবস্থার কারণে শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলিকে তাদের উৎসব থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।