মহারাষ্ট্রে আসন জটে জেরবার দুই শিবিরই সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না

মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট দোরগোড়ায়, প্রার্থীদের মনোনয়ন পর্ব শেষ ৷ এই পরিস্থিতিতে শাসক বা বিরোধী—আসন জটে জেরবার দুই শিবিরই। মোট আসন ২৮৮টি। মঙ্গলবার এই সব আসনে মনোনয়ন পেশ করার ছিল শেষদিন। এই ২৮৮টি আসনের জন্য শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের তরফেই সরকারিভাবে এপর্যন্ত যে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সব কটিতেই প্রার্থীই দিতে পারল না তারা। এর পিছনে শরিকি কোন্দলকেই দায়ি করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

মহারাষ্ট্রে আসন জট ছাড়াতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মত প্রভাবশালী নেতারও৷ মহারাষ্ট্রে শাসক জোট ‘মহায়ুতি’র আসন জট ছাড়াতে গত কয়েক দিনে দিল্লিতে বিক্ষুব্ধ এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার ও মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন শাহ৷

তার হস্তক্ষেপে ৩৭টি আসনের মধ্যে ২৫টিতে জট ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি৷ কিন্তু এখনও সমস্যা থাকা এক ডজন আসনে কোনও ভাবে জটিলতা দূর করা যায় নি। গুরুত্বপূর্ণ এই ১২টি আসনে বিক্ষুব্ধ এনসিপি ও শিবসেনা নেতারা বিজেপির রফা সূত্র মানতে নারাজ৷ ফলে তৈরি হয়েছে জটিলতা৷ এমনই একটি কেন্দ্র ওরলি৷ জানা গিয়েছে, এই আসনে প্রার্থী হিসেবে বিজেপির প্রথম পছন্দ ছিল সাইনা এনসি৷

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার চাপে ওরলি আসনে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরাকে টিকিট দিতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি৷ কিন্তু উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্যের বিরুদ্ধে শিন্ডে শিবিরের প্রার্থী মিলিন্দ কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷

স্থানীয় দুই দল শিবসেনা ও এনসিপি দুই শিবিরে ভাগ হয়েছে। এরই সঙ্গে একদিকে রয়েছে বিজেপি, অন্যদিকে কংগ্রেস। বিজেপি একনাথ শিন্ডের শিবসেনার সঙ্গে লড়ছে। সেই জোটেই রয়েছে অজিত পাওয়ারের এনসিপি। নাম দেওয়া হয়েছে মহাজুটি। আর অন্যদিকে বিরোধী শিবিরে রয়েছে কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও সমাজবাদী পার্টি। নাম দেওয়া হয়েছে মহাবিকাশ আগাড়ি।

মহারাষ্ট্রের যেকোনও রাজনৈতিক শিবিরে এখন কান পাতলেই শোনা যাবে শরিকি দ্বন্দ্বের কথা। মনোনয়ন শেষ হওয়া পর্যন্ত ২৮৮-র সবকটিতে প্রার্থীই দিতে পারল না দুই শিবির। শাসক গোষ্ঠী অর্থাৎ মহাজুটি প্রার্থী দিয়েছে ২৮৪টি আসনে। এই ২৮৪-র মধ্যে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা প্রার্থী দিয়েছে ৮০-টি আসনে, বিজেপি ১৫২টি ও অজিত পাওয়ারের এনসিপি ৫২টি আসনে। অন্যদিকে মহাবিকাশ আগাড়ির তরফে মোটে ২৮০টি আসনে মনোনয়ন পেশ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা লড়ছে ৮৭টি আসনে, শরদ পাওয়ারের এনসিপি প্রার্থী দিয়েছে ৮৭টি আসনে ও সমাজবাদী পার্টি ৩টি আসনে।

অন্যান্য বড় রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জিততে বিজেপি যে ‘কার্পেট বম্বিং’ ফর্মুলা গ্রহণ করে, এ বার মহারাষ্ট্রে এখনও পর্যন্ত সেই ফর্মুলা অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখছেন৷ তার পরও বিজেপির ভোটপ্রচার তুঙ্গে ওঠেনি৷ এর মূলেও শরিকি জটিলতা।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী মহাজুটি ওই ৪টি আসনে আর মহাবিকাশ আগাড়ি ও ৮টি আসনে প্রার্থী দেবে না? দুই শিবিরই জানিয়েছে, এই আসনগুলিতে ছোট শরিক দলকে জায়গা দেওয়া হবে। কিন্তু কারা সেই শরিক দল, কারাই বা মনোনয়ন জমা দিল, সে বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।