Sunday, August 24, 2025
উৎপল সিনহা

মেয়েটি যাবে মঙ্গল গ্রহে । ফিরবে না আর কোনদিন । সে নাকি বলিপ্রদত্ত মানব জাতির স্বার্থে । ভাবলেই অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে । মানবসভ্যতার জন্য এতো বড়ো ত্যাগ ? নিজের জীবন উৎসর্গ ? এমন ঘটনাই নাকি ঘটতে চলেছে অদূর ভবিষ্যতে !

কে এই মেয়ে ? কেন তার নিজের জীবনের প্রতি একটুও মায়া নেই ? কীভাবে তার মাথায় এই ভাবনা এলো ? কিসের টানে সে পাড়ি দিতে চায় মঙ্গলে ? তার বাবা-মা , তার পরিবারের অন্যান্য সকলে কীভাবে দেখছেন এই ব্যাপারটা ?

আশ্চর্য সিদ্ধান্ত ! নাম তার অ্যালিসা । ছোট্ট অ্যালিসার স্বপ্ন ছিল একটাই। একদিন সে যাবে লালগ্রহে । ছোটবেলায় একটা অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজে সে দেখেছিল পাঁচ বন্ধু মিলে লালগ্রহে বেড়াতে গিয়েছে । তখনই মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে কৌতুহল জাগে তার। তারপর থেকে অসংখ্যবার সে কল্পনায় ঘুরে বেড়াতে থাকে লালগ্রহে । এরপর একদিন সে তার ইচ্ছে জানায় তার বাবাকে । বাবা বার্ট কার্সন সানন্দে সম্মতি জানান তৎক্ষণাৎ । তারপর ৭ বছরের অ্যালিসাকে নিয়ে আলাবামার হান্টসভিলেতে একটা স্পেস ক্যাম্পে আসেন মিস্টার বার্ট ।

সেই থেকে শুরু । ২০১৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সেই নাসা-র ( NASA ) সব ভিজিটর ক্যাম্পে প্রবেশের জন্য পাসপোর্ট পেয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলে অ্যালিসা কার্টসন। নভোচারী ক্রিস হ্যাডফিল্ড ১৯৬৯ সালে জানিয়েছিলেন , মানুষ চাইলে পা রাখতেই পারে মঙ্গলে । এখন তো প্রযুক্তি অনেক উন্নত । তবে মঙ্গলে কিন্তু বিপদের আশঙ্কা রয়েছে যথেষ্ট । মঙ্গলগ্রহ থেকে ফিরে আসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে । তবে এসব নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন অ্যালিসা । এসব বিপদ তাঁর তুমুল উৎসাহের কাছে তুচ্ছ । অ্যালিসা মঙ্গলে থাকবেন দুই থেকে তিন বছর। এক্সপ্লোরেশন , ট্রি-প্ল্যানটেশন , মাটি পরীক্ষা , জল ও প্রাণের খোঁজ ইত্যাদি সবই তাঁকে করতে হবে একা , সম্পূর্ণ একা । এতোবড় একটা চ্যালেঞ্জকেও ধর্তব্যের মধ্যে ধরছেন না অ্যালিসা । তাঁর শৈশবের স্বপ্ন যে শেষপর্যন্ত সত্যি হতে চলেছে সেই আনন্দেই মশগুল হয়ে রয়েছেন তিনি । ২০৩৩ সালে তাঁর মঙ্গলে পাড়ি দেবার কথা। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের গড় দূরত্ব প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মাইল । প্রতি ১৫ বছরে পৃথিবী ও মঙ্গল ঘুরতে ঘুরতে পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসে । তখন দূরত্ব কমে আসে । ২০৩৩ সালে সেই দূরত্ব কমে গিয়ে মঙ্গল ও পৃথিবী ফের কাছাকাছি আসবে । সেই সময়েই অ্যালিসাকে মঙ্গলে পাঠাতে চায় নাসা ।

মঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে একের পর এক প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে অ্যালিসাকে । মাইক্রোগ্র্যাভিটি , অক্সিজেনের অভাবে দেহে বিভিন্ন পরিবর্তন হয় । সেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে তাঁকে । তাছাড়া দিনের পর দিন শূন্যে ভেসে থাকাটাও একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ । পৃথিবী থেকে অনেক দূরে একেবারে নতুন একটা পরিবেশে সম্পূর্ণ একা থাকতে হবে তাঁকে । যে কাজ কোনোদিন কোনো মানুষ করতে পারে নি , সেই বিরল কাজ করতে হবে তাঁকে । অবশ্যই এই বিরলতর সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন মার্কিন মুলুকের লুইজিয়ানার হ্যামন্ডে জন্ম নেওয়া অ্যালিসা । তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছেন এইভাবে : স্বপ্ন তাহলে সত্যি হয় !

তবে , পৃথিবীতে আর ফিরবেন না অ্যালিসা , এমন কথা কিন্তু বলছে না নাসা । নাসা জানিয়েছে , এই অভিযানে যারা যাবেন সকলেই ফিরে আসবেন পৃথিবীতে । তাহলে কি অ্যালিসা একা যাচ্ছেন না মঙ্গলে ? নাসা ব্লুবেরি ওয়েবসাইট প্রতিবেদন অনুযায়ী , অ্যালিসা আমেরিকার বাসিন্দা । মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই তার নভশ্চর হবার এবং মঙ্গলগ্রহে যাবার সখ প্রবল । আবার এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে , অ্যালিসার বাবা নাকি রয়টার্সকে একটি ই-মেইল করে জানিয়েছেন , তাঁর মেয়ের জীবনের মূল লক্ষ্য মঙ্গল অভিযানে যাওয়া। সেই জন্য তাঁর মেয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করছেন । তবে আদৌ তাঁর মেয়েকে নাসার তরফে মঙ্গলে পাঠানো হবে কিনা তা তিনি জানেন না এখনও । তবে অ্যালিসা যে মঙ্গলে পাড়ি দেবার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই ।

আরও পড়ুন- চাল উৎপাদন মূল্য‌ কুইন্টাল পিছু ১০ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজ্যের

 

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...
Exit mobile version