উৎসব শেষে রাজ্যের প্রকল্প নিয়ে একরাশ সুখবর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার নবান্নের (Nabanna) বৈঠকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে কৃষকবন্ধু, বাংলার বাড়ি- সব প্রকল্প নিয়েই বড় ঘোষণা করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ডিসেম্বর থেকে রেকর্ড সংখ্যক মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা পাবেন। সারা দেশে এই উদাহরণ আর নেই। কেন্দ্র না দিলে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ১২ লক্ষ মানুষকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থকে পরথম কিস্তির টাকা দেওয়া হবে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে রাজ্যের মোট ১ কোটি ৮ লক্ষ ৯৫ হাজার কৃষককে ২৯৪৩ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু হবে শুক্রবার থেকে।

এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (Lakshmir Bhandar) প্রকল্পে ডিসেম্বর মাসে নতুন করে ৫ লক্ষ ৭ হাজার মহিলাকে যুক্ত করা হল। মোট ২ কোটি ২১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন। এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভান্ডারে ৪৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা সহয়াতা পেয়েছে। মমতা জানান, “এটা আজীবন পাবেন। বছরে ৬২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে রাজ্যের। সংখ্যাটা হবে ২ কোটি ২১ লক্ষ। ১ ডিসেম্বর থেকে দেওয়া শুরু হবে।“ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আমাদের অমূল্য সম্পদ। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পে যে আবেদনগুলি পাই, সেগুলি সবই দেখি। তাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজারের মতো আবেদন পেয়েছিলাম। তাছাড়াও দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে অনেক আবেদন এসেছে। সেসব মিলিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাসের ৫ লক্ষ ৭ হাজার মহিলাকে নতুন করে এই টাকা দেওয়া হবে। ডিসেম্বর মাস থেকেই তাঁরা টাকা পাবেন। তাঁরা যতদিন বেঁচে থাকবেন। এর জন্য বছরে ৬২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। ৬০ বছর বয়স হলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তারাই বার্ধক্যভাতা পাবেন। পাশাপাশি মমতা জানান, ৪৩ হাজার ৯০০ জনকে নতুন করে বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য রাজ্য সরকারের প্রতিবছর ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে (Lakshmir Bhandar) দেশের মধ্যে বাংলায় মডেল বলে উল্লেখ করে মমতা জানান, “অন্য রাজ্যে অনেক শর্ত আছে। বাংলায় নেই। একটা পরিবারে চার জন মহিলা থাকলেও পায়। এটা তাঁদের গর্ব। অন্য রাজ্যে সাইকেল, স্মার্ট ফোন থাকলে পাওয়া যায় না, বাংলায় এমন কোনও শর্ত নেই। আমাদের সকলের জন্য। এটার জন্য আমি গর্ব বোধ করি। আমাদের তফশিলি জাতি উপজাতি শ্রেণিভুক্তরা ১২৫০ টাকা ইতিমধ্যেই পায়। সাধারণরা ৫০০ ছিল ওটা ১০০০ করা হয়েছে বাড়িয়ে। যে কোনও রাজ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখান, যাঁরা শুরু করেছেন দু মাস-তিন মাসের জন্য, মিলিয়ে দেখান তো এই পরিমাণ কোথাও আছে কিনা। শুধু তাই নয়, বিধবা ভাতায় আবেদন করতে হবে না। ৬০ বছর হলে স্বাভাবিকভাবেই চলে যাবে।“

কৃষক রাজ্যের মোট ১ কোটি ৯ লক্ষ কৃষককে দেওয়া হবে ২৯৪৩ কোটি টাকা, যা সাম্প্রতিককালে রেকর্ড অঙ্ক। শুক্রবার থেকে এই অর্থ কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ”চলতি বছরই শুধুমাত্র কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ৫৮৫৯ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হল। এই অর্থ সম্পূর্ণ রাজ্যের, কেন্দ্রের কোনও সহায়তা নেই।”
বাংলার বাড়ি প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রকে ধুয়ে দেন মমতা। বলেন, ”তোমাদের দয়া দরকার নেই। আমাদের আমাদের মতো করতে দাও। টাকা আমাদের অর্থাৎ নাম আমাদের হবে। নাম হবে বাংলার বাড়ি।” ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হবে। মমতা বলেন, “৩৬ লক্ষ মাটির বাড়ি আছে আমি যতদূর জানি। অনেকে আছে সার্ভের নামে একটা পাকা দেওয়াল থাকলে তুমি তাহলে বাদ দেবে কেন? গ্রামে আমি গিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ১১ লক্ষ বাড়ি দেব। সেটা আরও ১ লক্ষ বাড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের সরকার ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩০-এ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা দিতে শুরু করবে। ১২ লক্ষ দেওয়ার পরেও আমাদের আরও বাকি থাকবে ২৪ লক্ষ। আরও ধাপে ধাপে যখন টাকা আসবে, তখন দেব। আরও ২৪ লক্ষ দিতে দু-তিন বছর সময় নেব। সারা বাংলায় পাকা বাড়ি করে দেব। টাকাটা জোগাড় করতে হবে।”

একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৯ হাজার বিশেষভাবে সক্ষম মানুষকে মানবিক ভাতা দেওয়া হবে। এরজন্য খরচ হবে ২১ কোটি টাকা।
