পথে নামতে আওয়ামী লীগকে আগে ক্ষমা চাইতে হবে, জানাল ইউনুস সরকার

দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে

আওয়ামী লীগকে আর নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, তারা ফেরত এলে আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।আওয়ামী লিগকে আন্দোলন করার অনুমতি দেওয়া হবে না।মঙ্গলবার রাতে শেখ হাসিনার দল ঘোষণা করেছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দল টানা নয় দিন বাংলাদেশে মিটিং মিছিল করবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি দল হরতাল পালন করবে। বুধবার আওয়ামী লিগ শেখ হাসিনার নামে একটি লিফলেট প্রকাশ করেছে। হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আর্জি জানিয়েছেন, ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠতে।

এরপরই ইউনুস সরকার জানিয়ে দিয়েছে, জুলাই-অগাস্ট  গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে আগে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।বুধবার তার ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্টে এ কথা বলেছেন মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শফিকুল ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, গত বছর অগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনও নায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে শুধুমাত্র ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবুও, সরকার কখনও বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেননি।

এরপর শফিকুলের প্রশ্ন, জুলাই-অগাস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে যে আওয়ামী লিগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছে। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ হয়েছেন কয়েকশ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগের দলীয় সরকার।

ইউনুসের প্রেস সচিব লিখেছেন, শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের একনায়কত্বের শাসনাকালে সরাসরি হত্যা এবং জোর করে গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি একটি চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং খুনি শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন একটি প্যানেল বলছে, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে তার ঘনিষ্ঠরা ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে।

শফিকুলের অভিযোগ, এছাড়াও, প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোর করে গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত করেছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনাকালে পুলিশ লিগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। পদত্যাগ করতে বাধ্য এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।তার সাফ কথা, পৃথিবীর কোনও দেশ একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে ফের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি।

নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচন করা হবে। ন্যূনতম সংস্কার না করে নির্বাচন করলে জনগণ তাদের অধিকার পাবে না।তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কোনওভাবেই এই দেশে দেওয়া হবে না।