শহরের বুকে সরকারি হাসপাতালে নজিরবিহীন অপারেশনে তাক লাগালেন RG Kar মেডিক্যালের প্লাস্টিক সার্জনরা। সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় জোড়া লাগলো শ্রমিকের কাটা হাত। অন্যদিকে পেট থেকে কাঠের টুকরো বার করে যুবকের প্রাণ বাঁচিয়ে নজির গড়লো এসএসকেএমও (SSKM Hospital)। কলকাতার দুই সরকারি হাসপাতালের বিরল অস্ত্রোপচারের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত চিকিৎসক মহল।

প্রথমে জানা যাক আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (RG Kar Medical College and Hospital) ঠিক কী অপারেশন হলো। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ৫৮ বছর বয়সী রোগী হাওড়া শ্যামপুর থানায় এলাকার বাসিন্দা। কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় কব্জি থেকে কেটে যায় তাঁর হাত। ভর্তি করা হয় আরজি করে। হাসপাতাল প্ল্যাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য (Dr. Rupnarayan Bhattacharya) জানান, “গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আরজি করের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে (Trauma Care Centre) আসেন হাওড়ার এক ব্যক্তি। ততক্ষণে গোল্ডেন আওয়ার পেরিয়ে গিয়েছে। তারপর প্ল্যাস্টিক সার্জারি এবং অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা মিলে সারা রাত জেগে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। যা সত্যিই নজির!” সার্জন দীপ্রসত্ব মহাপাত্র বলেন, কব্জি থেকে হাত কেটে যাওয়ায় শিরা-উপশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগীর প্রবল রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তবে শেষমেষ সবটা সামাল দিয়ে সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ায় খুশি প্রত্যেকেই। চিকিৎসক মহল বলছে কব্জির নীচের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতটি জোড়া লাগানো সহজ কাজ নয়। আনুষাঙ্গিক সমস্যা থাকে। তবে এক্ষেত্রে অসাধ্য সাধন করেছেন চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেও (SSKM Hospital) মৃত্যু পথযাত্রীকে আলো দেখালেন চিকিৎসকেরা। উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের বাসিন্দা সমরজিৎ ঘোষ (পেশায় পুলকার চালক) গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বসিরহাটের মালঞ্চ সেতুর উপরে গাড়ি দুর্ঘটনায় জখম হন। তাঁর পেটের এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় কাঠের টুকরো। হাসপাতালে আসার পর রোগীকে বাঁচাতে কঠিন অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। দেড় ইঞ্চি মোটা কাঠের টুকরো দৈর্ঘ্য ছিল পাঁচ ফুটের কাছাকাছি। যা রোগীর পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়েছিল। শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক বিতান চট্টোপাধ্যায়ের (Dr Bitan Chatterjee) নেতৃত্বে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে ওই অস্ত্রোপচার হয়। বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও চিকিৎসক দলে ছিলেন অ্যানাস্থেসিয়া, সিটিভিএস এবং অস্থিবিভাগের ডাক্তাররাও। রোগী আপাতত বিপন্মুক্ত। তাঁর শারীরিক অবস্থা আগে থেকে স্থিতিশীল। এসএসকেএম হাসপাতালের এই ঘটনা নজির তৈরি করেছে বলেই মত চিকিৎসকদের। কখনও সরকারি পরিষেবায় বিনামূল্যে আইভিএফ পদ্ধতির সাফল্য, আবার কখনও পাঁচ দিনে ২০০টি গলব্লাডার অপারেশনের নজির – শহর তথা রাজ্যের বুকে অসাধ্য সাধনের অন্যতম নাম কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল।

–

–

–

–

–

–

–

–

–