মোদি সরকার ‘ফ্যাসিস্ট’ নয়! সিপিএমের বিতর্কিত অবস্থান নিয়ে সরব কংগ্রেস ও সিপিআই 

হঠাৎ বিজেপির (BJP) প্রতি সদয় সিপিএম। মোদি সরকারকে (Narendra Modi Government) তারা ফ্যাসিস্ট বা নব্য ফ্যাসিবাদী বলে মনে করে না। কেন এই অবস্থান বদল? তবে কি বিজেপির ভোটে পাখির চোখ করতে চাইছে সিপিএম? কেরল সিপিএমের এই বিতর্কিত অবস্থানকে এক হাত নিয়েছে কংগ্রেস (Congress) ও সিপিআই।

মোদি সরকারকে নিয়ে সিপিএম সম্প্রতি অন্যান্য বামপন্থী দলগুলির থেকে বিচ্যুত হয়ে এক বিতর্কিত অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের জন্য তাদের খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব প্রকাশ করেছে। এই পার্টি কংগ্রেস ২০২৫ সালের ২ থেকে ৬ এপ্রিল মাদুরাইতে অনুষ্ঠিত হবে। পার্টি কংগ্রেসের খসড়ায় বলা হয়েছে, মোদি সরকারকে তারা ফ্যাসিবাদী বা নব্য-ফ্যাসিবাদী বলে মনে করে না। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, সিপিএমের অবস্থান বদল সঙ্ঘ পরিবারের প্রতি অনুগত থাকার প্রচেষ্টার একটা অংশ।

সিপিএমের মালয়ালম ভাষায় আদর্শিক মুখপত্র হিসেবে বিবেচিত চিন্তা সাপ্তাহিকের সর্বশেষ সংখ্যায় পার্টির পলিটব্যুরো খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবের উপর একটি স্পষ্টীকরণমূলক বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। করেছে। সেখানেও বলা হয়েছে, আমরা এই প্রথম ‘নব্য-ফ্যাসিবাদী’ শব্দটি ব্যবহার করছি। নব্য-ফ্যাসিবাদ হল নব্য উদারনীতিবাদের সংকট এবং একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতার ফসল। বিজেপি-আরএসএসের অধীনে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল একটি হিন্দুত্ব-কর্পোরেট উগ্র শাসনব্যবস্থা, যা নব্য-ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। আমরা বলি না যে মোদী সরকার ফ্যাসিবাদী বা নব্য-ফ্যাসিবাদী। আমরা ভারত সরকারকে নব্য-ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা হিসেবে চিত্রিত করি না। ২০১৮ সালে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত ২২তম কংগ্রেসে আমরা বলেছিলাম যে অতি-কর্তৃত্ববাদী হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ ‘উদীয়মান ফ্যাসিবাদী প্রবণতার’ ইঙ্গিত দেয়। ২০২২ সালে কান্নুরে অনুষ্ঠিত ২৩তম কংগ্রেসে আমরা আরও বলেছিলাম যে মোদী সরকার আরএসএসের ফ্যাসিবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ কে বালান বলেন, আমাদের দল কখনও বিজেপি সরকারকে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা হিসেবে মূল্যায়ন করেনি। আমরা কখনও বলিনি যে ফ্যাসিবাদ এসেছে। যদি আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদ আসে, তাহলে এর রাজনৈতিক কাঠামো বদলে যাবে। আমরা মনে করি না যে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি। সিপিএমের এই অবস্থানের প্রবল সমালোচনা করেছে সিপিআই এবং সিপিআই (এমএল)। এই বিষয়ে কংগ্রেসও সিপিএমকে তীব্র নিশানা করে। কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথালা বলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সমর্থকদের ভোট আদায়ের জন্য সিপিএম নতুন কৌশল নিয়েছে। এটা আসলে সিপিএমের বিজেপি-আরএসএস তোষণ।

২০২১ সালের নির্বাচনে, সিপিএম বিজেপির ভোটে কেরালায় ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। মোদি সরকার ফ্যাসিস্ট বা নব্য-ফ্যাসিবাদী নয় বলে তোষণের রাজনীতিতে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির ভোট সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টা সিপিএমের। সিপিএমের এই অবস্থান বদলে অবাক রাজনৈতিক মহল। এটি সিপিএম এবং সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে অন্তর্নিহিত সম্পর্ক প্রকাশ করে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এখনও পর্যন্ত বিজেপি বা মোদীর সমালোচনা করেননি। হলে প্রমাণিত হয়ে গেছে সম্পর্কটি ঠিক কোন জায়গায়।

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীসনও সিপিএমকে একহাত নিয়ে অভিযোগ করেন, সিপিএম সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে সবসময় আপস করেছে। এটা আসলে তাদের সঙ্ঘ পরিবারের কাছে আত্মসমর্পণের অঙ্গ। কেরালার পলিটব্যুরো সদস্যরা সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চান। সেটাই তারা করেছে মোদি সরকারকে নিয়ে অবস্থান বদল করে।