বেনজির, একাদশ শ্রেণির দলিত কিশোরের হাতের আঙুল কাটল তিন নাবালক

ফের হামলার শিকার দলিত কিশোর।পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে হামলা দলিত পরিবারের(Dalit Student Assaulted) কিশোরের ওপর। পরীক্ষায় যাতে বসতে না পারে, সে জন্য হাতের আঙুলই কেটে নেওয়া হল তার। ছেলেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়া বাবার উপরও হামলা চালানো হল। তার মাথায় আঘাত করা হয়, যা থেকে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু এই নৃশংস ঘটনার সাক্ষী।এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আক্রান্ত ওই কিশোরের নাম দেবেন্দ্রন। সে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বাবা থাগেশ গণেশ পেশায় দিনমজুর।জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে পলায়মকোট্টাইয়ের স্কুলে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন গণেশ। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে বাসে চেপে রওনা দেন।কিন্তু মাঝরাস্তায় হঠাৎ বাসটির পথ আটকায় তিন জনের একটি দল। অভিযোগ, বাস থেকে প্রথমে কিশোর দেবেন্দ্রনকে টেনে হিঁচড়ে নামায় দুষ্কৃতীরা। সরাসরি ধারাল অস্ত্র দিয়ে তার হাতে কোপ বসায়। আঘাত করে মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে যায় দেবেন্দ্রন। বাধা দিতে গেলে বাবা গণেশের উপরও চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। তার মাথায় গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। অন্যত্রও আঘাত করা হয়েছে তাকে।দিনমজুর থাঙ্গ গণেশের ছেলে খুব কষ্টেসৃষ্টে লেখাপড়া চালাচ্ছিল। সোমবার সকালে বাবার সঙ্গে সে পালয়মকোট্টাইয়ে স্কুলে যাচ্ছিল লিখিত পরীক্ষা দিতে।

গণেশ আরিয়ানয়াগাপুরমের ইঁটভাটার শ্রমিক। জেলার দক্ষিণের একটি গ্রামে বসবাস তাদের। অতর্কিতে এই হামলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। বাসের অন্য যাত্রীরা ছুটে আসেন। কিন্তু তারা কিছু করে ওঠার আগেই ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় তিন দুষ্কৃতী। দেবেন্দ্রনকে শ্রীবৈকুণ্টমের  সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে। সেখান থেকে তিরুনেলভেলির সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার হয় তার।

জানা গিয়েছে, দেবেন্দ্রনের ডান হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু বাকি আঙুলগুলিতেও গুরুতর চোট রয়েছে। এই হামলার জন্য জাতপাতের বৈষম্যকেই দায়ী করেছেন দেবেন্দ্রনের বাবা গণেশ। তিনি জানিয়েছেন, হামলাকারীরা পাশের গ্রামের বাসিন্দা। তাদের জাত উঁচু, থেবর ক্ষত্রিয়। আর তারা তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের। তাই এই হামলার নেপথ্যে জাতপাতের সমীকরণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন গণেশ। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ, তাদের মধ্যে দু’জন নাবালক, একজনের বয়স ১৯ বছর। তিন অভিযুক্ত দেবেন্দ্রনের সহপাঠী বলেও জানা গিয়েছে।

দেবেন্দ্রনের কাকা সুরেশ বলেন, আমরা তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ। আমাদের উন্নতি কেউ চায় না। ছেলেটা পড়াশোনায় ভাল। আমাদের উন্নতিতে এত আপত্তি কেন, কেন এত ঘৃণা? ওরা সকলেই একাদশ শ্রেণির ছাত্র। এর নেপথ্যে আরও কেউ থাকতে পারে। কেউ ওদের এই কাজে মদত জুগিয়েছে। তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর নৃশংসতা প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারাতেও মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

ওই কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, সম্প্রতি একটি কবাডি খেলা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। তারই আক্রোশে হামলা চালানো হয়েছে। অদলিত হিন্দুদের একটি কবাডি টিমকে হারিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ওই কিশোর। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সে খুবই ভালো কবাডি খেলোয়াড়। হাসপাতালের ICU-তে এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছে দেবেন্দ্রন। তার প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছে।