জেলা থেকে শহরে বিক্ষোভে চাকরিহারারা: বৈঠক চেয়েও কেন তালা ভাঙবে, প্রশ্ন ব্রাত্যর

মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) বারবার বার্তা দিয়েছেন কোথাও টার্মিনেশন লেটার (termination letter) দেওয়া হয়নি। কোথাও বেতন বন্ধ হয়নি। তা সত্ত্বেও তাঁরা আশঙ্কা করছেন

দেশের শীর্ষ আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাননি রাজ্যের চাকরিহারা ২৫ হাজার ৭৫২ শিক্ষক। সুপ্রিম কোর্টেও বেছে দেওয়া হয়নি কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য। এর মধ্যেই রাজ্য সরকার সব রকমভাবে চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) কনভেনশন ডেকে তাঁদের জন্য পাশে দাঁড়ানোর সব পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দেন। তবে তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা কাটছে না যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সমাজের। বুধবার রাজ্যের প্রায় প্রতিটি ডিআই অফিসে (DI Office) ডেপুটেশন দিতে যান চাকরিহারা শিক্ষকরা। অনেক অফিসে তালা ভাঙতে গেলে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ঝামেলার পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) প্রশ্ন কেন সমাধান না হওয়া বা বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরলেন না শিক্ষকরা।

যোগ্য-অযোগ্য (tainted-untainted) নির্বাচনে রাজ্যের কোনও কথা শোনা হয়নি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court), স্পষ্ট জানিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। তার আগেই রায় শুনিয়ে ২৫ হাজার ৭৫২ শিক্ষক সমাজকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই রাজ্যের চাকরিহারাদের দাবি, তাঁদের সরকারি স্কুলের চাকরিই ফিরিয়ে দিতে হবে। রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশনের মধ্যে দিয়ে নতুন করে আইনি লড়াইয়ের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে নিজেদের স্কুলে পড়ানোর কাজ চালিয়ে গেলে তাঁদের সার্ভিস ব্রেক হবে না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই মতো বহু শিক্ষক স্কুলে পড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে সসম্মানে নিজেদের যোগ্য অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা। সেই উদ্দেশে এই সপ্তাহেই রাজ্যের টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে বৈঠকে বসার আবেদন জানিয়েছিলেন শিক্ষকরা। এরপরেও ডিআই অফিসগুলিতে স্মারকলিপি (deputation) দিতে যাওয়ার নাম করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষকরা।

কলকাতার (Kolkata) কসবায় ডিআই অফিসের তালা ভাঙতে গেলে পুলিশ শিক্ষকদের অফিস চত্বর থেকে বের করে দেয়। সেখানে রীতিমত ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। গ্রেফতার করা হয় শিক্ষকদের। অন্যদিকে মেদিনীপুরে (Medinipur) ডিআই অফিস ঘেরাও করে রাস্তা অবরোধ করলে শিক্ষকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় মানুষ। কর্মব্যস্ত সময়ে রাস্তা অবরোধে সমস্যায় পড়েন স্থানীয়রা। আবার তমলুকে (Tamluk) ডিআই অফিসে কর্মী ও খোদ ডিআইকে ঢুকতে বাধা দেয় আন্দোলনকারীরা। ডিআইকে ধাক্কা মারা হয়। হুগলির (Hooghly) একটি অফিসে নিজেরাই তালা লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারী শিক্ষকরা।

এরপরেও শিক্ষকদের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার, জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। তাঁর প্রশ্ন, ডিআই অফিস গিয়েছিলেন কেন? ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক, নিন্দাজনক এগুলো একদিকে যেমন সব সত্যি। আবার অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সুরাহার পথ নিয়ে ওদেরই নেতৃবর্গ আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন। শুক্রবার বা শনিবার তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছে। ওদের বেসিক দাবিগুলো শোনার কথা। সরকার, শিক্ষা দফতর সর্বতোভাবে সাহায্য করছে। সেখানে আন্দোলন, লড়াই কিছুদিন স্থগিত রাখা যেত। এমন পন্থায় নিয়ে যেতে হবে, আমরা ওদের প্রতিরক্ষা দেব আর ওরা বলবে তালা ভাঙুন। ধৈর্য রাখা উচিত বলে মনে করি।

সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী খোলসা করেন চাকরিহারা শিক্ষকদের নিজেদের পথ থেকে সরে আসার কথা। তিনি জানান, তালা বন্ধের বিষয়টা গতকাল থেকে নির্দিষ্ট। আমরা বারবার বলছি আমরা পোর্টাল আপডেট করব। মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) বারবার বার্তা দিয়েছেন কোথাও টার্মিনেশন লেটার (termination letter) দেওয়া হয়নি। কোথাও বেতন বন্ধ হয়নি। তা সত্ত্বেও তাঁরা আশঙ্কা করছেন, মানে নিশ্চয়তা রাখতে পারছেন না। ওদের যে কোনও একটা পন্থা নিতে হবে। আমরা আইনি পথে, মানবিক পথে ওদের সহযোগিতা করতে বদ্ধ পরিকর।