আরজি কর-কাণ্ডে নতুন সার্কাস নির্যাতিতার বাবা-মায়ের, তাহলে কি WhatsApp-ও সেটিং করেছে 

0
445

ওয়াকফ বিল, পহেলগাঁও জঙ্গিহানা, ভারত-পাকিস্তান সম্ভাব্য যুদ্ধ, তারপর দিঘায় জগন্নাথধামের দারোদ্ঘাটনের ফাঁকে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে এক ইন্টারেস্টিং ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। অভয়ার বাবা-মা আদালতে একটা মজার দাবি করেছেন। শুরু হয়েছে নতুন এক সার্কাস। তাহলে কি আরজি কর-কাণ্ডে WhatsApp-ও সেটিং করল? উঠে পড়ল সেই প্রশ্ন।আরজি কর-কাণ্ড নির্যাতিতার বাবা-মায়ের দাবি, অভয়ার মোবাইল নাকি তাঁর মৃত্যুর তিন মাস পরেও (তারিখ উল্লেখ নেই) কেউ ব্যবহার করছে! তাঁদের উকিল আদালতে দাবি করেছেন, এটাই নাকি সেই তথাকথিত প্রমাণ লোপাটের প্রমাণ!

ব্যাপারটা আসলে কী? ব্যাপারটা হল, কোনও এক WhatsApp গ্রুপে অভয়া যুক্ত ছিলেন। সেই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা গ্রুপে একটা নোটিফিকেশন দেখতে পান, অভয়া left the group. অবশ্যই নামটা ‘অভয়া’ ছিল না। মৃতার আসল নামই ছিল। আইনগত বিধিনিষেধের কারণে এখানে নামটা উল্লেখ করা হল না।অভয়ার বাবা-মায়ের বক্তব্য, কেউ অভয়ার মোবাইল খুলেছে, সেই মোবাইল থেকে WhatsApp ওপেন করেছে এবং সংশ্লিষ্ট গ্রুপ থেকে লিভ করেছে। অথচ অভয়ার মোবাইল বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে আছে। আদালত সিবিআইকে তদন্ত ট্রান্সফার করার পরেই কলকাতা পুলিশের থেকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে অভয়ার মোবাইলও সিবিআই হাতে পায়। তখন থেকে ওই মোবাইল সিবিআইয়ের কাছেই আছে। তাহলে সিবিআই-এর হাতে থাকা মোবাইল খুলে কে ব্যবহার করল? কে WhatsApp গ্রুপে ঢুকে সেখান থেকে leave করল?

অভয়ার বাবা মায়ের বক্তব্য, এর জবাব সিবিআইকে দিতে হবে। অভয়ার বাবা-মায়ের উকিলের বক্তব্য, এটাই নাকি প্রমাণ লোপাটের প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলী রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, অভয়ার বাবা-মা ও তাঁদের আইনজীবীর মতে কোনও এক WhatsApp গ্রুপ লিভ করার অর্থ দাঁড়াল প্রমাণ লোপাট। সেই প্রমাণ লোপাট কে করেছে? কে আবার, সিবিআই! কেন করেছে? কেন আবার, সেটিং! ইত্যাদি। আসল কথা হল, কোনও একটা WhatsApp নম্বর যদি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে অর্থাৎ ওই নম্বরের অ্যাকাউন্টটা যদি অ্যাকসেস করা না হয়, তাহলে WhatsApp অ্যাকাউন্টটা অটোমেটিক ডিলিট করে দেয়।কেন করে? কারণ ‘দীর্ঘদিন’ WhatsApp অ্যাকাউন্ট অ্যাকসেস না করলে WhatsApp ধরে নেয় যে এই নাম্বারটা ওই ব্যক্তি আর ব্যবহার করেন না, ফলে নাম্বারটা recycle হতে পারে এবং অন্য কোনও ব্যক্তি ওই একই নাম্বারের সিম কিনতে পারেন, সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ব্যক্তির প্রাইভেসি মেনটেন করার জন্য WhatsApp আগের অ্যাকাউন্টটা ডিলিট করে দেয়। যে মুহূর্তে ওই WhatsApp অ্যাকাউন্টটি ডিলিট হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে ওই নাম্বার যতগুলো গ্রুপে যুক্ত ছিল, সব গ্রুপ থেকেই leave করে যায়, আর ওই নোটিফিকেশন দেখা যায়। এটা WhatsApp-এ অটোমেটিক হয়। আলাদা করে ইউজার বা অন্য কাউকে কিছু করতে হয় না।

আর এই ‘দীর্ঘদিন’টা আসলে WhatsApp সাইট অনুযায়ী ১২০ দিন অর্থাৎ চার মাস। চার মাস ধরে কোনও WhatsApp অ্যাকাউন্ট ইউজ না হলে সেটা অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যায় এবং সব গ্রুপ থেকে অটোমেটিক লিভ করে যায়। অভয়ার বাবা-মা যেটা মৃত্যুর তিন মাস পরে বলেছেন, ওটা আসলে হবে চার মাস। অথবা এমনও হতে পারে যে অভয়া জীবিত অবস্থাতেই নিজের WhatsApp অ্যাকাউন্টটি তার মৃত্যুর এক মাস আগে থেকেই কোনও কারণে আর ইউজ করতেন না। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর আগের এক মাস আর মৃত্যুর পরের তিন মাস মিলে টোটাল চার মাস পরে ওই গ্রুপ লিভিং নোটিফিকেশন আসাটা স্বাভাবিক। যেহেতু প্রকৃত তারিখটা খবরে উল্লেখ নেই, তাই এই দুটোর মধ্যে কোনটা হয়েছে সেটা বলতে পারছি না। কিন্তু দু’টোর মধ্যে যেকোন একটা হয়েছে সেটা সত্যি। সিবিআইয়ের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই তারা অভয়ার মোবাইল খুলে গ্রুপ লিভ করতে যাবে!

২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার সময় কাশ্মীরে মাসের পর মাস ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, তখনও এমন হয়েছিল। কাশ্মীরিরা WhatsApp গ্রুপ থেকে অটোমেটিক লিভ হয়ে গিয়েছিল। যেকোনও সামান্য টেক স্যাভি পার্সন ইজিলি তা বলতে পারবে। সেটাকে নিয়ে আদালতে এমন চাঞ্চল্যকর দাবি হাস্যকর। কুণালের কথায়, এই খবরটা আবার ঘটা করে সবগুলো মিডিয়া ছেপেছে! প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে আজকাল মিডিয়াতে কি ন্যূনতম টেক স্যাভি লোকের এতই অভাব? নাকি অশিক্ষা এতটাই বেড়ে গেছে?আর অভয়ার বাবা-মাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অশিক্ষিত, মূর্খ, প্রচারলোভী বাবা-মায়ের নিজেদের ধর্ষিতা মেয়েকে নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা চলছে, চলবে।তিনি বলেন, এই কেসে এই প্রথমবার আমি চাইছি আদালত বাবা-মায়ের কথা মেনে নিক। আর এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবার জন্য ডাইরেক্ট WhatsApp-কে সমন করুক। আমি নিশ্চিত WhatsApp যখন এটা ক্লিয়ার করে দেবে, তখনও অভয়ার বাবা-মা পাগলের মতো WhatsApp-কেও দোষী বলবে, বলবে WhatsApp টাকা খেয়েছে, সেটিং করেছে। আর সেদিনই সবাই বুঝে যাবে অভয়ার বাবা-মা অশিক্ষিত জোকার ছাড়া আর কিছু না। সেদিনটার অপেক্ষাই করছি। কথায় আছে সব চালাকির একটা শেষ থাকে। এতদিন কলকাতা পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রী, সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট সবার দিকে আঙুল তুলে গেছে, কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু এবারে WhatsApp-কে জড়িয়ে এতদিনের সার্কাসটা নিজেরাই শেষ করল।