
আমার কবিতা অসহায় যত
পাগলি মেয়ের প্রলাপ
আমার কবিতা পোড়া ইরাকের ধ্বংসে রক্তগোলাপ
আমার কবিতা মেধা পাটেকর
শাহবানু থেকে গঙ্গা
আমার কবিতা অলক্ষ্মীদের
বেঁচে থাকবার সংজ্ঞা ।
দ্রোহে-প্রেমে-প্রতিবাদে তুমুল জেগে থাকা মল্লিকা প্রতিনিয়ত জাগিয়ে রাখেন আমাদের ।
ভাষা মানে তুমি আমি
ভাষা মানে বাংলা
ভাষা মানে বরাকর
থেকে ভাতজাংলা
বাজারের দোকানের
রাস্তার এ ভাষা
কবিতার স্লোগানের
বচসার এ ভাষা …

এই ভাষাতেই মরমের কথা লিখে গেছেন ‘ সিন্ধুর মেয়ে ‘ মল্লিকা । শতাব্দীর পর শতাব্দী যায় না হয় পৃথিবী পারমাণবিক আমরা থাকব বাংলা ভাষায়।
বড়ো আদরে লেখা তাঁর
‘ কন্যাশ্লোক ‘ ।
… আমার দুর্গা আত্মরক্ষা
শরীর পুড়বে , মন না
আমার দুর্গা নারী গর্ভের
রক্তমাংস কন্যা । …

আকাঙ্খার চিনিচাঁপা গাছে পাতায় পাতায় উড়ে বেড়ায়
স্বপ্ন ।
কুড়ি বছর ফিরে
পেতাম যদি
নতুন করে সাজিয়ে
নিতাম ঘুঁটি
আমি তখন পঁচিশ বসন্তের
যেন ভিনাস সাগর
থেকে উঠি …
কুড়ি বছর ফিরে
পেতাম যদি
অন্য কোনও জীবন
বেছে নিতাম
ঘূর্ণি তুলে
হেঁটে যেতাম চাঁদে …

সোশিওলজির ছাত্রী । পরবর্তীতে অধ্যাপিকা । বিপুল পড়াশুনো । তাঁর কবিতার ইন্দ্রজাল অমোঘ ।
রান্নাঘর থেকে বেডরুম, বৈঠকখানা থেকে মেয়েদের মজলিশে হাসিকান্না ও হীরাপান্নায় বড়ো অনায়াস যাতায়াত মল্লিকা কবির জাদুসৃজনের।

… তোমার কাঁটা আমি শরীর পেতে নেবো শর্ত একটাই
বলার আছে
আমার ইচ্ছায় কখনও বাধা দিলে জলের মাছ আমি
ফিরবো জলে ।

মনস্বিনী , মেধাবী , প্রখর খরস্রোতা , বিদুষী ইত্যাদি প্রভৃতি বিশেষণে কিছুতেই ধরা যাবে না অন্তর্লীন মল্লিকাকে । এই ঋজুবাক দীপ্তসূর্য কবিকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যের আরেক বিখ্যাত কবি চৈতালী চট্টোপাধ্যায় লেখেন , ‘ মল্লিকা বলবে , ‘ মেয়েদের মতো ভালোবাসা ছেলেরা শেখেনি । কথামানবী বিশ্বাস করে সে কথা । দেখুন , নর্মদাও মেয়ে আর মেধা পাটকরও মেয়ে । নর্মদাকে বাঁচানোর জন্য মেধার মতো আর তো কেউ করেনি । ‘অআকখ ঘষে আগুন জ্বালানোর মন্ত্র জানতেন অসামান্য মল্লিকা কবি ।

মাটি জল বায়ু অগ্নি
এবং মানুষ
ভারতবর্ষ তোমাকে
প্রণাম করেই
সেই ইতিহাসে
কোনঠাসা নারী আমরা
শুরু করলাম
কথামানবীর ভাষ্য ।

তিনি বলতেন , সারা পৃথিবীতে যত সবুজের আন্দোলন , পশুপাখি বাঁচাও আন্দোলন , অস্ত্রবিরোধী আন্দোলন, তার সিংহভাগ জুড়ে আছে মেয়েরা । আমরা মেয়েরা তো কোনোও দিন কুঠার হাতে নিয়ে গাছ কাটিনি । এ কে ফর্টিসেভেন বন্দুক হাতে নিয়ে গণহত্যায় মেতে উঠিনি , বীরত্বের দম্ভে ধরাকে সরা জ্ঞান করিনি , তাই আমরা ভালোবাসতে শিখেছি ।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ চল্লিশ চাঁদের আয়ু ‘ । তারপর একের পর এক কবিতা । কিন্তু তারপর ? মাত্র ৫১ আয়ুতে আমাদের স্তব্ধ করে দিয়ে অকাল নির্বাপন এই অগ্নিকবির । যত দিন যাচ্ছে আমাদের এই ছাতাপড়া প্রায় স্থবির সমাজে মল্লিকা সেনগুপ্তের ঘুম ভাঙানো কথাগুলো একইসঙ্গে তেতোকড়া স্বাদের মহার্ঘ্য ওষুধের মতো মূল্যবান হয়ে উঠছে ।

আরও পড়ুন- লন্ডনে অ্যাডামাস টেক কনসালট্যান্সির অফিস উদ্বোধন বাবুল সুপ্রিয়র

_

_

_
