Thursday, November 6, 2025

পহেলগামে গুলির শব্দ শুনেও আসেনি সেনা, বিস্ফোরক অভিযোগ মৃতের স্ত্রীর 

Date:

কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় (Pahelgam Terrorist attack) ভারতীয় সেনার গাফিলতি স্পষ্ট, বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন মৃত সমীর গুহর স্ত্রী শর্বরী দেবী (Sharbari Guha)। গত ২২ এপ্রিল ভূস্বর্গ যেভাবে রক্তাক্ত হয়েছিল তার প্রতিবাদে বদলা চাইছে গোটা দেশ। কিন্তু মোদি-শাহদের তরফে কিছু ‘ডায়লগ’ দেওয়া ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও বড় পদক্ষেপই করেনি কেন্দ্র। হামলার বারো দিন পর ভয়াবহ ঘটনার প্রাথমিক ট্রমা কাটিয়ে এবার ভারতীয় সেনার (Indian Army) বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ করলেন হামলায় নিহত সমীরবাবুর স্ত্রী। তাঁর কথায়, যখন বৈসরন উপত্যকায় গুলি চলে তখন সেই শব্দ শুনেও পাহাড়ের নিচে থাকা সেনা ক্যাম্প থেকে জওয়ানদের কাউকে ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়নি! গোটা ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শর্বরী গুহ (Sharbari Guha)।

চোখের সামনে বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু দেখার শোক এখনও সামলে উঠতে পারছে না গুহ পরিবার। ২৬ জন মৃতের তালিকায় সমীর বাবুর নামটা বারবার হামলাকারীদের কণ্ঠস্বর আর তাদের একটা কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। সমীরবাবুকে গুলি করার পর ‘মোদি কা আদমি হ্যায়’, বলেছিল জঙ্গিরা! স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী, স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গিদের প্রশ্নে চমকে উঠেছিলেন শর্বরী দেবী। এরপর চোখের নিমেষে সব শেষ। গত কয়েকদিন ধরে বারবার ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে পারে কিংবা ভারতীয় সেনা বদলা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, এরকম একাধিক আস্ফালন দেখা গেলেও বাস্তবে ঘটনার পর কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায়নি। কূটনৈতিক পদক্ষেপ করা হয়েছে বটে, কিন্তু ভূস্বর্গের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রে কী করে জঙ্গিরা ঢুকতে পারল বা গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে কেন কোনও খবর ছিল না এইসব প্রশ্নগুলো আজও উত্তর পাইনি। এর মাঝেই সমীর গুহর স্ত্রী বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শর্বরী দেবী সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমরা ভ্যালিতে ঘুরছিলাম, ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ কিছু গুলির শব্দ কানে এল। আমার স্বামী ওখানের একজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? উনি জানালেন, এখানে বাঁদরদের তাড়াতে মাঝেমাঝে শূন্যে গুলি ছোঁড়া হয়। কিন্তু তারপরও গুলির শব্দ চলতে থাকে। তখন ওঁরা বলেন, আমরা যেন মাটিতে শুয়ে পড়ি। তারপর তো এসব হয়ে গেল। ওরা এসে প্রথমে আমাদের বলল, ‘হিন্দু-মুসলমান আলাদা হয়ে যাও। যারা মুসলমান, তারা কলমা পড়ো।’ নিহতের স্ত্রীর প্রশ্ন সমীবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী বলে কি তাকে আলাদা করে টার্গেট করা হলো? না হলে কেনই বা বলা হবে, “মোদি কা আদমি হ্যায়”। শর্বরীদেবীর দাবি, সেনার ব্যর্থতায় এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। সেনাবাহিনী পাহাড়ের নিচে ক্যাম্পে ছিল। এত গুলির শব্দ শুনেও কেউ আসেনি এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বা কাকতালীয় মারছে নারাজ তিনি। তাহলে কি ইচ্ছাকৃতভাবেই সেনাবাহিনী সেখানে পৌঁছয়নি?

ভুস্বর্গে হামলার ঘটনায় গাফিলতি যে আছে সেটা আগেই স্পষ্ট হয়েছে। যে পহেলগামে দশ হাত দূরে দূরে নিরাপত্তাবাহিনী বা সেনা জওয়ানদের দেখা যায় বলে বিভিন্ন সময় পর্যটকরা জানিয়েছেন, সেখানে ওই দিন দুপুরে (২২ এপ্রিল ২০২৫) হঠাৎ করে সকলে মিলে কীভাবে ভাবে ‘বেপাত্তা’ হয়ে গেলেন তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ব্যর্থতার দায় গোয়েন্দা বিভাগের হোক বা ভারতীয় সেনার, ২৬ প্রাণের এভাবে শেষ হয়ে যাওয়া কখনই মেনে নেওয়া যায় না। স্বজন হারানোর কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের। তদন্তে নেমেছে এনআইএ, অস্ত্র মহড়া দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মিটিং থেকে শুরু করে “বেছে বেছে শাস্তি” দেওয়ার মতো ফাঁকা আস্ফালন শোনা যাচ্ছে। ব্যাস এটুকুই। ১২ দিন পেরিয়ে গেল এখনও অধরা জঙ্গিরা।

 

Related articles

রাত পোহালে প্রথম দফার নির্বাচন বিহারে: হিংসা ঠেকানোই চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে পরপর খুন। রাজনৈতিক নেতা থেকে সমর্থক। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে তাই শান্তি বজায় রাখাই চ্যালেঞ্জ...

বাংলা কথায় দক্ষতা, কোন পদে পান তৃপ্তি? দীপ্তিকে নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন ‘অভিভাবক’ মিঠু

সন্দীপ সুর বাংলার প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ জিতেছেন রিচা ঘোষ কিন্তু ভারতীয় দলের আরও এক ক্রিকেটারের সঙ্গে...

দিঘার জগন্নাথ ধামে প্রথম রাস উৎসবে ভক্তদের ঢল 

দিঘার জগন্নাথ ধামে এবারই প্রথম পালিত হল রাস উৎসব, আর সেই উপলক্ষে সকাল থেকেই উপচে পড়েছে ভক্তসমুদ্র। উৎসবের...

বেঁচে আছেন, তাই জানতে পারলেন ‘দোষী নন’: আজব বিচার উত্তরপ্রদেশে

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের (Aligarh) মিঠু সিংয়ের জীবনে যেন সেটাই সত্যি হতে বসেছিল। অবশেষে ৫৫...
Exit mobile version