
মনের নাম মধুমতী
আর চোখের নাম আয়না
আমি দুহাতে চোখ
ঢেকে রাখি
মন যেন জানা যায় না …

চোখ দেখলেই নাকি মনের ভাব অনেকটা বোঝা যায় । কিন্তু সত্যিই কি তাই ? মন পড়ে ফেলা কি এতোই সহজ ? বিশ্বজুড়ে হাজার বছর ধরে অজস্র গবেষণার মূল বিষয় মানুষের মন । মন বড়োই জটিল । কখনো কখনোও কিছুটা বোঝা গেলেও মানুষের অন্তরের জটিল সমীকরণ বোঝার চেয়ে কঠিন কাজ এ পৃথিবীতে আর কিছু নেই । তবে হ্যাঁ , দেহ-ভাষা বা শরীরী ভাষা ব’লে একটা ব্যাপার আছে , যাকে body language বলা হয় ইংরেজি ভাষায় । মানুষের আচার আচরণ , ভাবভঙ্গি ইত্যাদি দেখে , কণ্ঠস্বর শুনে সবটা না হোক , মনের কিছুটা হদিশ অবশ্যই পাওয়া যেতে পারে ।

মানুষের মন প্রকৃত অর্থেই দুর্জ্ঞেয় । তবে হ্যাঁ , মানুষের তাৎক্ষণিক মনোভাব জানা বা অনুমান করার কিছু উপায় রয়েছে , যেগুলি নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে আসছে । কিছু কিছু ফলও পাওয়া গেছে । কোনো কাজ করার অব্যবহিত পূর্বে মানুষের শরীর কিছু সঙ্কেত দেয় ।

এখানেই একটি নিয়ম বা সূত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তা হলো : ৭ – ৩৮ – ৫৫ নামক সূত্র । এই নিয়মটি দাবি করে যে, কথোপকথনের বেশিরভাগ অর্থ কণ্ঠস্বর এবং শারীরিক ভাষায় পাওয়া যায় । অধ্যাপক অ্যালবার্ট মেহরাবিয়ান ১৯৬০-এর দশক থেকে যোগাযোগের বোঝাপড়ার পথিকৃৎ , পথপ্রদর্শক । তিনি ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৪ সালে লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজ শুরু করেন । তাঁর প্রসিদ্ধ যোগাযোগ তত্ত্ব :

( সূত্র ) ৭ – ৩৮ – ৫৫ , মৌখিক , অ-মৌখিক , শারীরিক ভাষা । তাঁর এই তত্ত্বকে অতি-সরলীকৃত পরিসংখ্যান হিসেবে সমালোচিতও হতে হয় । সূত্রটি বিশ্লেষণ করা হয় এইভাবে :

৭ শতাংশ অর্থ উচ্চারিত শব্দের মধ্যে । ৩৮ শতাংশ অর্থ প্যারালিঙ্গুইস্টিক ( শব্দগুলো যেভাবে বলা হয় ) এবং বাকি ৫৫ শতাংশ অর্থ মুখের অভিব্যক্তিতে । তাঁর প্রথম গবেষণায় অধ্যাপক মেহরাবিয়ান নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন যে , শ্রোতারা শব্দ বা স্বরের মাধ্যমে আবেগের সুর বেশি শনাক্ত করেছেন কিনা । স্বরের উচ্চারণেও বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় । ইতিবাচক , নিরপেক্ষ অথবা নেতিবাচক একটি শব্দ ৩০ জন মহিলা অংশগ্রহণকারীদের শুনিয়ে তিনি তাঁদের মতামত জেনেছিলেন । যেমন ‘ ধন্যবাদ ‘ শব্দটি নানাভাবে উচ্চারণ করা যেতে পারে । এ থেকে বক্তার মনোভাব কিছুটা হলেও বোঝা যায় বইকি । আবার অনেকের স্বরক্ষেপণ ও অভিব্যক্তি এতটাই পাথরের মতো নিরেট যে , তার থেকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো মনোভাবই বোঝা সম্ভব নয় । এই ধরনের অভিব্যক্তিকে নিরপেক্ষ বলতে হবে । তাঁর দ্বিতীয় গবেষণায় ৩৭ জন নারী অংশগ্রহণ করেন । এখানেও পছন্দ , অপছন্দ বা নিরপেক্ষ ইত্যাদি বিভিন্ন অভিব্যক্তি-সহ একজন ব্যক্তির মুখের ছবি দেওয়া হয় । অংশগ্রহণকারীরা ছবির দিকে তাকালে জোরে উচ্চারিত একটি শব্দ শুনতে পেতো এবং তা থেকেই বক্তার মনোভাব , আবেগ ইত্যাদি অনুমান করতে হতো । এতে দেখা গেছে , কখনও স্বর ও মুখের অভিব্যক্তি মিলে যেতো , আবার কখনও মিলতো না ।
এই সমস্ত ফলাফল একত্রিত করে মৌখিক ও অ-মৌখিক আবেগগত ইঙ্গিতের ওপর , শব্দ উচ্চারণের অভিব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে গোটা বিষয়টার সংক্ষিপ্তসার হিসেবে ৭ – ৩৮ – ৫৫ অনুপাত তৈরি করেন এই বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ।

তাহলে সবমিলিয়ে এটা বলা যায় যে , যোগাযোগের ৭ শতাংশ মৌখিক বিষয়বস্তু , ৩৮ শতাংশ কণ্ঠস্বর এবং ৫৫ শতাংশ শারীরিক ভাষা দ্বারা গঠিত । যোগাযোগ তত্ত্ব ও অধ্যয়ণে এই অনুপাত অবশ্যই একটি প্রাথমিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করে । তবে এই সূত্র বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয় । আবার এটাও বলতে হয় যে , এই সূত্রটিকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে আধুনিক যোগাযোগ- বিজ্ঞানের আলোচনা সহজ নয় ।

আরও পড়ুন – পাকবিরোধী প্রচারে ভারত: জাপানসহ একাধিক দেশে তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান

_

_

_
