তখন ধূ-ধূ রাত
ছিটে বেড়ার ঘরের পাশে
সাপের হিসের শব্দ ।
বোনের ঘরে গিয়েছিলাম ।
বোনের ঘর ফাঁকা ।
দিদির ঘরে গিয়েছিলাম ।
দিদির ঘর ফাঁকা ।
বাপের ঘরে ঢুকেই দেখি ,
প্যারালিটিক দুহাতে তাঁর
আঁজলা ভরা টাকা !
এরপর আর স্তব্ধতার গান কানে আসে ? এ কোন দেশ? কোন পৃথিবী ? কপালে করাঘাতে কী লাভ ? বিহিত কোথায় ? কোন পথে ? নিষ্ফল ক্রোধের ব্যর্থ আস্ফালনের আর্তনাদ গুম গুম করে বাতাসে বাতাসে । মানবতার এমনতর অবমাননাই কি জন্ম দেয় গেরিলা ক্রোধের ? চৈতন্য না হোক , খানিক লজ্জা তো হোক আমাদের !
মেয়ে মানুষের মাংস এমনিতেই খেতে খুব স্বাদু , আর যদি দিশি মদে ভিজিয়ে ভিজিয়ে হায় হায় ভাবাই যায় না …আবার দেখুন , বনে যাওয়া বারণ । শুধু কি তাই ? বনের কালকেউটে দংশন করে নির্জনে ।
তুই কি আমার বোন ?
তুই কি আমার মা ?
মুখে নখের আঁচড় কেন —
উদলা কেন গা ?
কেন কেন কেন ? উওর দাও।
মুখ খোলো সমকাল । চুপ ছিল চিরকাল । তাই বুঝি তুমিও বোবা কালা ? গাঁ থেকে চাষার ঝিয়ারি ফুটপাতে পাল পাল থাকলেও জানে না তারা কোথায় কার পাশে শুলে হাত ভরে মেলে চাল ।
উনুনে হাঁড়ি চড়াতে মেয়েকে ফাঁকা মাঠে বসিয়ে বাপ দূরে বসে দাঁতে ঘাস কাটে , অথচ দরের ব্যাপারে টনটনে । আহা বাপ । আহা মেয়ে । আহা নৃশংস পেট । এদেশে সেই কবে থেকে ছিনাল বাতাস বহে যায় শনশন , তা শুধু জানে কবি ।
শ্যামের বিধবা বোনের সাথে পার্কে যায় মা । কেন যায় ? বলো সমকাল , কেন যায় ? আর দরজা ভেজিয়ে মেয়ে পথে নামলে কিন্তু পার্কে গমনরতা সেই মায়েরই মন ছ্যাঁৎ করে ওঠে । ডুকরে ওঠা মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ছিনাল বাতাসের সাবধানবাণী ! হায় মা । হায় মেয়ে । হায় মহামানবদের ভারতবর্ষ ।
সমকালের অন্যতম স্বর কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত জানেন মনখারাপ বাতাসের মিহি কণ্ঠের আর্জি । সে একেবারে ফিসফিসিয়ে বলে তার ভালো না থাকার কথা । তবে যখনই ভালো থাকা আর ভালবাসার কথা তাকে বলতে যান কবি , ঠিক তখনই সেই বাতাস কিন্তু
‘ হাওয়া ‘ ! এ বড়ো আজব কুদরতি । কবির একমুঠো ঘরে এক চিলতে আলো এসে মাঝেমধ্যে ভালোবেসে যায় তবু । ভালোবেসে বলে যায়
‘ নারীমেধ ‘ লেখো কবি ,’ নারীমেধ ‘ । মা , বোন , দিদি , মেয়ে আর প্রেয়সীর ক্লিষ্ট মুখগুলো ভেসে ওঠে সার সার । কেঁপে ওঠেন কবি। আঙুল রাখেন কলম-ট্রিগারে । শতাব্দীর পর শতাব্দী বোবা হয়ে থাকেন মহাপৃথিবীর অগণিত বিদ্বজ্জন , রাষ্ট্রনায়কবৃন্দ । নারীমেধ চলতেই থাকে । দ্রৌপদীর শ্লীলতাহানি থামে না , অসহ্য । কলম থেকে ছিটকে বেরোয় অজস্র তপ্ত শব্দশিশা ।
আর দেশপ্রেমের এলেম ? কবি বলছেন , নারীমেধের মরশুমে ছয় মাসে ছ-ডজন নারীকে কিডন্যাপ করে চাকুম-চুকুম ঢাউস ঢেকুর তুলে ‘ ক্যায়সা খুশি কি রাত ‘ … গেয়ে নেচে চলে যায় এলেমদার ঘোর দেশপ্রেম !
পুতের মতো ভায়ের মতো
পাঁচটি সোনার ছা
আশ মিটিয়ে মাস খেয়েছে
উদলা করে গা ।
এসব না হলে ভুখা পেটে ভাত জোটে কীভাবে এ পোড়া দেশে ? কীভাবে হাঁড়ি চড়ে উনুনে রমনীয় কমনীয় শরীর না বেচে ? নীরবে অশ্রু মুছে বাপের ভায়ের পোয়ের অন্ন রাঁধে শ্রীমতি অর্ধেক আকাশ ! কবি বলেন , রাবনবধের তলোয়ারে পড়েছে বহুকালের মর্চে । তবে অনেক প্রায়শ্চিত্তের পর সেই মর্চে নাকি ঝরছে , একটু ঝরছে ! ঝরছে কিনা জানা নেই , তবে আশা ছেড়ে দিয়ে একেবারে নিশ্চেষ্ট হয়ে ঘরে বসে থাকলেই কি বন্ধ হবে নারীমেধ ? তা কখনও হয় ?
আরও পড়ুন – কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশী যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ল কপ্টার! বড় দুর্ঘটনা উত্তরাখন্ডে