দেবিকা মজুমদার

বাঙালি মানেই মিষ্টি। আর সেই মিষ্টির হরেক বাহার ফুটে ওঠে সন্দেশেই। সেই রাজা-রাজরা, জমিদারদের যুগ থেকেই মিষ্টি প্রিয় বাঙালি খেয়ে আসছে জলভরা, গোলাপ ছাঁচ, আতামুখী, মৎসমুখী, চন্দ্রপুলি, প্রজাপতি এমন হরেক আকারের সন্দেশ। একসময় বিয়ে বাড়ির পাতে খুব প্রচলিত ছিল এই সব মিষ্টি। আর সেই সন্দেশ তৈরি করতে লাগত কাঠের তৈরি ছাঁচ। বর্তমানের অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল আর প্লাস্টিকের ছাঁচ আর স্ট্যাম্পের যুগে ঐতিহ্যবাহী কাঠের ছাঁচ তৈরির কারিগররা আজ বিলুপ্তির পথে। কলকাতা শহরে শুধু নয়, গোটা রাজ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দোকান পড়ে রয়েছে যেখানে এই শিল্পকলা এবং তার কারিগররা কোনরকমে দিন গুজরান করছেন।

কলকাতার(Kolkata) চিৎপুরের (Chitpur) নতুন বাজার এলাকায় শতাব্দী প্রাচীন এই শিল্পীদের টিমটিমে দোকান এখনও জানান দেয় একসময়কার বাঙালির রসনার ঐতিহ্য সম্পর্কে। এই দোকানগুলোতে বংশপরম্পরায় ধরে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই শিল্প শিখে বানিয়ে এসেছেন হরেক ডিজাইনের সন্দেশের ছাঁচ। তবে, আজকের যুগে যখন সস্তার সিলিকন(Silicon), প্লাস্টিক(Plastic), অ্যালুমিনিয়ামের(Aluminium) ছাঁচে ভরে গিয়েছে বাজার তখন, আর আগের মত আর লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না ছাঁচ তৈরির কারিগররা। যদিও তাঁদের মতে, কাঠের ছাঁচের জায়গা কখনোই নিতে পারবে না প্লাস্টিক – সিলিকন – অ্যালুমিয়াম – স্টিলের(Steel) ছাঁচ। কারণ তাতে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ওই ছাঁচের মধ্যে নেই কাঠের ছাঁচের ঐতিহ্যও। কাঠে বাটালির ছোঁয়ায় মনের মত যেভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় প্রজাপতি, মাছ, হাঁস, আতা, আম, জলভরার ছাঁচ তা কখনই সম্ভব নয়, সিলিকন বা অ্যালুমিনিয়ামের বা প্লাস্টিকের মোল্ডে(Mould)।

শুধু যে ব্যবসায় মন্দা হয়েছে তাই নয়, নতুন প্রজন্মও আর রুচি দেখাচ্ছে না এই শিল্পে। কারণ এই ব্যবসা এককালে যেরকম রমরমে ভাবে চলত, এখন তার কানাকড়িও অবশিষ্ট নেই। তার ওপর এই ছাঁচ তৈরির জন্য যে পরিমাণ শ্রম ও ধৈর্য লাগে তাও এড়িয়ে যেতে চায় নতুন প্রজন্ম। তাই ভবিষ্যতে এই কাঠের ছাঁচ কে তৈরি করবে তাই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন শিল্পীরা। আগামী প্রজন্ম যদি হাল না ধরে তাহলে হয়তো সত্যিই একদিন ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে সন্দেশের ছাঁচ তৈরির শিল্প।

আরও পড়ুন – সরকারি সিভিল সার্ভিস স্টাডি সেন্টারে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

_

_

_

_

_

_
_
_
_
_
_