‘বঙ্গ রাইস কনক্লেভ’-এ ধানচাষের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থার পথে একধাপ এগিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ

Date:

Share post:

ধান উৎপাদন, ফসল সংরক্ষণ ও স্মার্ট সেচ ব্যবস্থার প্রসারে এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিল ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (ICC)। শুক্রবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল “বঙ্গ রাইস কনক্লেভ” (Bengal Rice Conclave)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি দফতরের মাননীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। অংশগ্রহণ করলেন রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কৃষি গবেষক, রাইস মিল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষ ব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘস্থায়ী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক বাজারমুখী করে তোলা।

শোভনদেব জানান, “পশ্চিমবঙ্গ কৃষি উদ্ভাবন ও কৃষক কল্যাণে দেশের প্রথম সারির রাজ্য। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য আমরা ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিতে কৃষিযন্ত্র কেনার সুযোগ দিচ্ছি। ইতিমধ্যে রাজ্যে ২,৫০০টি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার চালু হয়েছে।”

মন্ত্রী আরও জানান, উপকূলবর্তী এলাকার কৃষকদের জন্য ‘নোনা স্বর্ণ’ নামে একটি নতুন ধানের জাত তৈরি করা হয়েছে, যা প্লাবন সহিষ্ণু। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “Gobindobhog ধান আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও খাদ্য সরবরাহ দফতর একযোগে কাজ করছে যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো যায়।”

বিশেষ অতিথি খাদ্য সরবরাহ দফতরের বিশেষ সচিব অভিজিৎ মৈত্র জানান, “পশ্চিমবঙ্গ একটি ডিসেন্ট্রালাইজড প্যাডি প্রোকিওরমেন্ট স্টেট। আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করি। এই বছর (KMS 2024–25)-এ ৫৬.৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে সর্বাধিক। MSP বেড়ে ₹২৩৬৯ হয়েছে এবং উপকৃত কৃষকের সংখ্যা ১৬.৪৩ লক্ষে পৌঁছেছে।”

ICC-র ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিং বলেন, “এই কনক্লেভ একটি কর্মপরিকল্পনার সূচনা। উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিকেই আমরা নজর দিচ্ছি।”

বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জয় কুমার মারোতি বলেন, “ধান শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মিলার, কৃষক, শ্রমিক ও উদ্যোক্তারা রাজ্যের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা এগোচ্ছি, তবে নিরাপত্তা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জামের অভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন দরকার।”

পশ্চিমবঙ্গ রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোজ কে ফোগলা বলেন, “আমরা আগুন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মানতে প্রস্তুত, তবে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়। রাজ্যে ডেটা-নির্ভর কৃষি মডেল ও আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, প্রিসিশন ফার্মিং চালু করা হলে কৃষকদের উপকার হবে।”

অনুষ্ঠানে ছিলেন শিবেশ কুমার ঝা (চিফ জেনারেল ম্যানেজার, IDBI ব্যাঙ্ক), মাধব অধিকারী (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, কোরোম্যান্ডেল ইন্টারন্যাশনাল), এবং সঞ্জয় সিনহা (জেনারেল ম্যানেজার, সোনা মেশিনারি লিমিটেড)।

এই কনক্লেভ কৃষক, প্রশাসন ও শিল্প মহলের মধ্যে সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠল। ধান উৎপাদনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা জন্য এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের কৃষিক্ষেত্রকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। আরও পড়ুনঃ জুলাই এলেই গাছ লাগানোর হিড়িক, বাঁচে কটা? বিধানসভার বনমহোৎসবে প্রশ্ন বীরবাহার

spot_img

Related articles

এক মুঠো ফুল দাও: দশমীর শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, জানালেন দশেরার অভিনন্দনও

আবার এসো মা। আজ দশমী (Bijaya Dashami)। চারপাশে মন কেমনের পূর্বাভাস। কিন্তু তার মধ্যেও আশা যে আবার সামনের...

গভীর হচ্ছে নিম্নচাপ: কলকাতায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, কমলা সর্তকতা জারি

নবমী পর্যন্ত মোটের উপর আবহাওয়া ভালো থাকলেও, দশমীর সকাল থেকেই হাওয়া অফিসের (Weather Department) পূর্বাভাস মতো বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি...

অহিংসা-শান্তি-একতা-সম্প্রীতির বাণী: গান্ধীজিকে স্মরণ মমতা ও অভিষেকের

২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী (Gandhi Jayanti)। দেশজুড়ে জাতির জনকের ১৫৬তম জন্মনবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। আজ শুধুমাত্র জাতীয় ছুটিই নয়,...

পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ফের সেনার গুলি! মৃত অন্তত ৮

বিক্ষোভরত নাগরিকদের উপর পাক সরকারের গুলি অব্যাহত। আন্দোলনের তৃতীয় দিনে অন্তত আটজনের মৃত্যু হল পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (POK)।...