সংসদে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত অপারেশন সিন্দুর নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। ঠিক যেভাবে অর্ধসমাপ্ত পাক জঙ্গি মোকাবিলার উত্তর দিয়েছেন এপ্রিল মাসের পর থেকে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), সেই একই দাবি আওড়ে গেলেন রাজনাথ (Rajnath Singh)। যে অভিযানকে ‘সফল’ দাবি করলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেই অভিযানে কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (POK) পুণরুদ্ধার হল না, প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সঙ্গে ২৬ বার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামানোর দাবি করা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের (Donald Trump) দাবি, মিথ্যা এমন বক্তব্যে কেন পেশ করলেন না সংসদে প্রধানমন্ত্রী, প্রশ্ন তুললে তৃণমূল সাংসদ।

বহু প্রতীক্ষার পরে অবশেষে সোমবার সংসদে শুরু হল পহেলগাম হামলা ও তার পরবর্তী প্রতিরক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সেখানেও সেই নরেন্দ্র মোদির জয়গান গাইতেই ব্যস্ত থাকলেন। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে ভারত আর পুরোনো ভারত নেই যারা মাথা নত করে। সেখানেই মোদির প্রশ্ন ফিরিয়ে দিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ২০১৪ সাল থেকে নিজেকে ভারতের পাহারাদার (Chowkidar) দাবি করছেন মোদি। তবে কীভাবে চারজন জঙ্গি ভারতে ঢুকে সন্ত্রাস চালালো। নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল, সেই কথা এখনও কেন স্বীকার করল না মোদি সরকার।

সোমবার সংসদে সাংসদ কল্যাণ মনে করিয়ে দেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে মোদি সন্ত্রাসবাদের উত্তর দাবি করেছিলেন। গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (CM Modi) প্রশ্ন করেছিলেন, যখন সীমান্তে বিএসএফ, সিআইএসএফ, ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ রয়েছে, তখন দেশে কীভাবে জঙ্গি অনুপ্রবেশ হয়। সেই প্রশ্নই এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) ফিরিয়ে দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।

সংসদে রাজনাথ সিং দাবি করেন, ভারতের পূর্বপরিকল্পিত জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের কাজ, রাজনৈতিক প্রত্যুত্তরের কাজ শেষ হয়েছিল। তাই ভারত আক্রমণ বন্ধ করেছিল। পাকিস্তান পরাজয় স্বীকার করেছিল, হামলা বন্ধ করার অনুরোধ করেছিল। তাই ভারত অস্ত্র সংবরণ করেছিল। সেখানেই সাংসদ কল্যাণের প্রশ্ন, যখন পাকিস্তান মাথা নত করেছিল, তখন কেন ভারত সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়নি? কেন সেই সময় পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত থামাতে চরম আঘাত করা হয়নি? সেখানেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ কবিতা স্মরণ করিয়ে প্রত্যাঘাতের বার্তা দেন।

রাজনাথ দাবি করেন, ভারত প্রস্তুত রয়েছে সব রকম হামলার মোকাবিলা করতে। আবার হামলা হলে আবার ভারত প্রতিহত করবে। সেখানেই কল্যাণের প্রশ্ন, কেন হামলার অপেক্ষা করবে ভারত? কেন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর পুণর্দখল করার দিকে যায়নি ভারত? সেই সঙ্গে বিরোধী দলের সদস্য হিসাবে স্পষ্ট করে দেন, ভারত এখনও পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলে পদক্ষেপ নিলে রাজনৈতিকভাবে পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

সোমবার সংসদে কংগ্রেস সাংসদ অচ্যুৎ গোগোই (Achyut Gogoi) একই প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। তিনি প্রশ্ন করেন, ১০ মে সিজ ফায়ার হল কেন? পাকিস্তান যদি পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল তাহলে আপনারা থেমে গেলেন কেন? নাকি আপনি কারো সামনে ঝুঁকেছিলেন, কারো সামনে মাথা নত করেছিলেন?

আরও পড়ুন: তৎপর রাজ্য প্রশাসন: হরিয়ানার ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ঘরে ফিরল মালদার ৭ শ্রমিক

এখানে যে মার্কিন শক্তিকে উল্লেখ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এদিন এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজনাথ দাবি করেন, কোনও ধরনের বাইরের শক্তির কাছে মাথা নত করেনি ভারত। কংগ্রেস সাংসদদের মতো সেখানে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও সেই একইভাবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে মাথা নত করার অভিযোগ উঠে আসে। তিনি প্রশ্ন করেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে এত ভয় কিসের নরেন্দ্র মোদির? কেন তাঁর সামনে ওনার উচ্চতা আর বুকের ছাতি ছোট হয়ে যায়? যে ২৬ বার ট্রাম্প দাবি করেছেন ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ তিনি বন্ধ করেছেন, তখন একবারও কেন নরেন্দ্র মোদি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দাবি করেননি, না এই দাবি মিথ্যা।

–

–
–
–
–
–