বঙ্কিম সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৃষ্টি ‘দেবী চৌধুরানী’কে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সহজ কাজ নয়। বড়পর্দায় বা টেলিভিশনে বিভিন্ন অভিনেত্রীকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা হলেও ১৯৭৪-এর মুক্তিপ্রাপ্ত দীনেন গুপ্ত পরিচালিত কালজয়ী সিনেমার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি কেউই। তাই আজও বাঙালি মননে ‘দেবী চৌধুরানী’ মানেই মহানায়িকা (Suchitra Sen)। প্রায় পাঁচ দশক পর সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee)। বড়পর্দায় এর আগে সুচিত্রায় জুতোয় পা গলানোর সাহস দেখাতে পারেননি কেউ। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল ছিল। অবশেষে প্রকাশ্যে এসেছে শ্রাবন্তী অভিনীত ‘দেবী চৌধুরানী’র প্রি-টিজার (Devi Chowdhurani Pre Teaser)। দেবীপক্ষে সিনেমা মুক্তির আগেই দুই প্রজন্মের অভিনেত্রীর সিনে প্রেজেন্স নিয়ে না চাইতেও তুলনা যেন চলেই আসছে। কঠিন পরীক্ষায় কতটা উত্তীর্ণ হলেন শ্রাবন্তী?

টলিপাড়ার ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে শোনা যায় একটা সময় সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) ‘দেবী চৌধুরানী’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডেটজনিত সমস্যায় সুচিত্রাকে না পাওয়ায়, তিনি আর সেই কাজে হাত দেননি। পরবর্তীতে দীনেন গুপ্তর হাত ধরে বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের ‘রিনা ব্রাউন’ হয়ে ওঠেন বাংলা বিনোদন জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘দেবী চৌধুরানী’। রোমান্টিক ইমেজের খোলস ছেড়ে একটা সময় যে চরিত্রের জন্য ‘আইকনিক’ হয়েছিলেন মহানায়িকা, সেই চরিত্রে শ্রাবন্তীকে কি মেনে নিতে পারবে বাঙালি? উত্তর খুঁজতে গেলে দুই ছবির তুলনা টানতে হয়, যেটা কার্যত অসম্ভব। তার উপর আবার নতুন ‘দেবী চৌধুরানী’ এখনও মুক্তিই পায়নি। সুচিত্রার শরীরী ভাষা এবং গ্ল্যামার তাঁকে প্রশ্নাতীতভাবে এই চরিত্রের জন্য সর্বকালীন সেরা আখ্যা দিয়েছে। তবে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি শ্রাবন্তীও। এই প্রথম সুচিত্রা সেনের কোনও ছবির রিমেক হচ্ছে আর তাতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে ব্যাপারটা যেকোনও নায়িকার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শ্রাবন্তীও জানতেন তুলনা আসবেই। কিন্তু তিনি সেসব দিকে কান না দিয়ে বাংলার ‘ব্যান্ডিট কুইন’ হওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের (Subhrajit Mitra) কথা অক্ষর অক্ষরে মেনে লাঠি ঘোরানো থেকে তরোয়াল চালানো, ঘোড়ায় চড়ার অভ্যাসের পাশাপাশি শরীরচর্চা করে গেছেন নিরলস ভাবে। এই সিনেমায় ভবানী পাঠকের ভূমিকায় অভিনয় করবেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)। প্রি টিজারে দুজনকেই দেখা গেছে। প্রথম ঝলকেই প্রফুল্লর নমনীয়তা থেকে ‘দেবী চৌধুরানী’ রূপে শ্রাবন্তীর চোখে যে আগুন দেখেছে বাঙালি দর্শক, তাতে অনেকেই বলছেন এটা হয়তো অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা হতে চলেছে।

দীনেন গুপ্ত যখন ‘দেবী চৌধুরানী’ করেন তখন সিনেমায় প্রফুল্ল চরিত্রের বয়স অনুযায়ী সুচিত্রা সেনের বয়স কিছুটা বেশী হলেও, দাপটে ও গ্ল্যামারে মহানায়িকা বক্সঅফিসে সুপারহিট। ব্রজেশ্বর চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিক, সাগর বউ সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, ভবানী পাঠক বসন্ত চৌধুরী, ডাকাত দলের নিশি কাজল গুপ্ত, ডাকাত রঙ্গলাল শেখর চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯৭৪-র সিনেমায় ঘোমটা দিয়ে বজ্রা থেকে সুচিত্রার শঙ্খ বাজানো থেকে সালঙ্কারা রূপে “এসো হে আমার রাজাধিরাজ” দৃশ্যায়ন ছিল অভূতপূর্ব। দীর্ঘ সময় ধরে কোনও পরিচালক এই চরিত্র অন্য কাউকে নিয়ে করার কথা ভাবতেও পারেননি।

পরবর্তীতে মুনমুন সেন (Moonmoon Sen) বড়পর্দায় এলেন প্রথম রঙিন ‘দেবী চৌধুরানী’ রূপে। সুচিত্রা কন্যাকেও অবশ্য মায়ের সঙ্গে অভিনয়ের তুলনার মধ্যে পড়তে হয়েছিল বটে। যদিও সে সময় নিভৃতচারিণী সুচিত্রার তা কেমন লেগেছিল তা আজও জানা যায়নি।

জিতু-দিতিপ্রিয়া সংঘাতে নাক গলাতে গিয়ে চাপে চিকিৎসক- অভিনেতা কিঞ্জল!

এবার চলে আসা যাক ২০২৫ সালে। ‘অভিযাত্রিক’-এর পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র অবশ্য বঙ্কিম উপন্যাসের সেরা চরিত্রকে বছর দুয়েক আগেই বড়পর্দায় আনতে চেয়েছিলেন। নানা জটিলতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। অবশেষে সব বাধা বিঘ্ন কাটিয়ে দেবীপক্ষে দেবীর আগমন। স্থানীয় লোককথা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আর্কাইভের সাহায্য নিয়ে তৈরি হয়েছে চিত্রনাট্য। সূত্রের খবর, সমসাময়িক কালে বেশ বড় বাজেটের বাংলা ছবি এটি। তুলনা আসবে জেনেও শ্রাবন্তী মরিয়া চেষ্টা করছেন। আর কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার কথা। তিনি কতটা সফল হবেন, সুচিত্রার মতোই দাগ কাটকে পারবেন কি না, সেটা তো সময়ই বলবে। তবে অফবিট বা কমার্শিয়াল সিনেমার প্যাটার্নের মাঝে দাঁড়িয়ে এই অস্থির সময়ে সাহিত্য নির্ভর এই ছবির জন্য যে ক্রেজ তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বাংলাভাষী দর্শকের কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি।

–

–

–

–
–
–