প্রমোশনের নতুন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি টলিপাড়ায়!কথায় বলে, নেগেটিভ পাবলিসিটি নাকি বিনোদন জগতের ভাঁড়ারে লক্ষ্মীলাভ ঘটাতে দারুণ কার্যকর। কথাটা যে নেহাত মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ অতীতে বহুবার মিলেছে। সিনেমা মুক্তির আগে যত বিতর্ক, বক্স অফিসে ততই উপচে পড়া ভিড়। বলিউড বারবার সেই প্রমাণ দিয়েছে। তা সে রানি পদ্মাবতী রূপে দীপিকা পাড়ুকোনের (Deepika Padukone) অনাবৃত কোমর হোক বা গেরুয়া বিকিনিতে ‘বেশরম’ গান। টলিউডও (Tolltwood) সে পথে হাঁটেনি তা নয়। কিন্তু এখন একটা নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ার শিরোনামে এক দশকের দূরত্ব ভুলে কারোর কাছাকাছি আসার খবর, আবার কারোর ব্যক্তিগত চ্যাটের ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তা নিয়ে পোস্ট-রিপোস্ট তরজা। বুঝতে বাকি নেই যে দেব-শুভশ্রী (Dev & Shubhashree Ganguly) এবং দিতিপ্রিয়া-জিতু কামালের (Ditipriya Roy and Jeetu Kamal) কথাই বলা হচ্ছে। এত কাণ্ডের পর দিনের শেষে আমে দুধে মিশে গেল ঠিকই। মাঝখান থেকে প্রমোশনের হাইপ তুলে কেউ নিশ্চিত করলেন সিনেমা দেখার ক্রেজ, কেউ আবার বাড়িয়ে নিলেন টিআরপি। সবটাই মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি আর কি!
গত কয়েকদিন ধরে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ – এর দুই চরিত্র আর্য ও অপর্ণার রিয়েল লাইফ সমীকরণ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। প্রথমে বোমা ফাটিয়েছিলেন অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলেছিলেন জিতু নাকি তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তা বলেন। অভিনেতা পাল্টা ব্যক্তিগত চ্যাটের সব স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। এরপর অনুরাগীরা মূলত দুভাগে বিভক্ত হয়ে কেউ নায়ক এবং কেউ নায়িকার স্বপক্ষে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন। খবর রটে, সিরিয়াল নাকি বন্ধ হওয়ার মুখে। সোমবার (৪ অগাস্ট) থেকে ঘটনার সূত্রপাত, শুক্রতে সমাপ্তি। উইকেন্ডের রাতেই অভিনেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, সব সমস্যা মিটে গেছে। জিতুও সমর্থন করেন। খুশি যুগলের ফ্যান থেকে শুরু করে প্রতি সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে সিরিয়াল দেখা বাঙালি সকলেই। আহা! এতদিনের মান-অভিমানের পর এবার কি আগামী পর্বগুলো একটু বেশি ঘনিষ্ঠভাবে দেখাবে প্রিয় জুটিকে? শুধুমাত্র এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকে চোখ রাখতে চাইছেন অনেক নতুন দর্শক। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? নায়ক- নায়িকার ‘ব্যক্তিগত ঝামেলা’য় প্রমোশন হয়ে গেল সিরিয়ালের। আচ্ছা ঝগড়াটা কি সত্যি রিয়েল ছিল, নাকি এর চিত্রনাট্যও সিরিয়ালের লেখক বা লেখিকার থেকে বুঝে নেওয়া! সংশয় তো থেকেই যায়।
এবার আসা যাক দেব-শুভশ্রী প্রসঙ্গে। ‘দেশু’ জ্বর এই বর্ষাতেও নস্টালজিয়ার কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে তারকাজুটির অনুরাগীদের মনে। একবার ভেবে দেখুন, শুধুমাত্র ফ্যানদের জন্যই তো দশ বছরে দূরত্ব ভুলে দেব ও শুভশ্রী মঞ্চে একসঙ্গে এলেন। বাংলার বুকে সবথেকে বড় ট্রেলার ইভেন্টে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকা দুই প্রাক্তনের একে অন্যের সঙ্গে কথা হল, সোশ্যাল মিডিয়ায় আনব্লক থেকে ফলো হল, মঞ্চে হাত বাড়িয়ে বন্ধুত্ব আর তারপর কোমর ধরে ডান্সও হল। দুজনের কেউই নাকি সঞ্চালকের প্রশ্ন কিংবা অনুরাগীদের নাচের অনুরোধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। সবটাই তো দর্শকের জন্য, তাই না! কিন্তু সত্যিই কি তাই? ‘ধূমকেতু’ মুক্তির খবরে শুরু থেকেই প্রমোশনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি স্পষ্ট। একটা হিট জুটি যখন ব্রেকআপ করার পর একসঙ্গে এক দশক কোনও সিনেমা করেন না, তখন তাঁদের শেষ শুটিং করা সিনেমার মুক্তিতে আলাদা আবেগ তৈরি হবে এটা তো পাঁচ বছরের বাচ্চাও জানে। অগত্যা প্রমোশনের নতুন টেকনিক। প্রথমে আলাদা আলাদা ইন্টারভিউ, সেখান থেকে ক্রেজ তৈরি করা। তারপর গ্র্যান্ড ইভেন্টে অপেক্ষার অবসান ঘটানো। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন তেমনটাই হয়েছে। দেব-শুভশ্রীকে একসঙ্গে পারফর্ম করতে দেখলে রাজ ও রুক্মিণীকে নিয়ে প্রশ্ন তো সোশ্যাল মিডিয়াতে উঠবেই। উঠেওছে। ইউজাররা না চাইলেও ফেসবুক ফিড জুড়ে এখন শুধুই ‘ধূমকেতু’ ট্রেন্ডিং।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছবি মানেই তার একটা আলাদা ট্রিটমেন্ট অবশ্যই সিনেমায় ধরা পড়বে। কিন্তু এবারে এইসবের সঙ্গে জুড়ে গেছে দেব- শুভশ্রী ইমোশন। আর সেটাকে যেভাবে প্রোমোশনের মার্কেটিংয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে তাতে বক্স অফিসের লক্ষীলাভ যে একপ্রকার নিশ্চিত, সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।
সবশেষে প্রশ্ন একটাই, ঝগড়া কি শুধুই ঝগড়া? দূরত্ব ভুলে নতুন বন্ধুত্ব কি আদৌ অন্তর থেকে? নাকি সবটাই পেশাদারিত্ব, রিহার্সাল করা চিত্রনাট্যের অংশ! মাস্টারমশাই, আমরা কিন্তু কিছুই বুঝিনি..
–
–
–
–
–