‘ধূমকেতু’ (Dhumketu)সাফল্য উপভোগের মাঝেই হঠাৎ করে নিজের করা কাজের জন্য ক্ষমা চাইলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)। ‘স্মৃতি ফাটলে’ গায়ক নচিকেতাকে লিখে ফেললেন এক দীর্ঘ খোলা চিঠি। গত দিন দুই ধরে এই নিয়েই আলোচনা সমাজমাধ্যমের পাতায়। আসলে প্রায় এক দশক অপেক্ষার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছে দেব- শুভশ্রী জুটির শেষ সিনেমা। সিনেমার বক্সঅফিস কালেকশন ইতিমধ্যেই ১০ কোটির বেশি ছাড়িয়েছে৷ সম্প্রতি বাংলার ছাড়িয়ে দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদের মতো বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘ধূমকেতু’। আর সেই সিনেমারই একটি গান গেয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী (Nachiketa Chakraborty)। গানের নাম ‘স্মৃতি ফাটলে’ যা সিনেমার চলনকে এত স্বয়ং সম্পূর্ণ করেছে যে দর্শক আবেগে ভেসে গিয়েছেন। সেই তালিকায় পরিচালক নিজেও রয়েছেন বটে। ছবিতে গায়কের কণ্ঠ শুনে সকলের প্রতিক্রিয়ার পর এবার বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নচিকেতাকে নিয়ে খোলা চিঠি লিখলেন কৌশিক।

গায়ককে উল্লেখ করলে তিনি লেখেন, যদ্দুর জানি তুমি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা হোয়্যাট্সঅ্যাপ থেকে দূরে থাকো। ফলো করো না। তবু ভাবলাম একটা খোলা চিঠি লিখে ফেলি তোমায়। তোমার অগনিত ভক্তের কেউ একজন ঠিক এই চিঠি পৌঁছে দেবে তোমার কাছে । আসলে চিঠিটা কেবল তোমাকে লেখাই নয়, লিখছি তোমার লক্ষ লক্ষ ফ্যানেদের জন্য। টেলিভিশনের জমানা থেকেই আমাদের এই বন্ধন শুরু। যখন পুজোর বেসিক অ্যালবামের থেকে নচিকেতার বানানো সিরিয়ালের টাইটেল গানের ক্যাসেট হট কেকের মতো বিক্রি হতো। নিজের হাজারটা ‘মন ব্যাকুল’ করা মুহূর্তে তোমার গানে ভর করে বারবার বেরিয়ে এসেছি। আজও গোপনে তোমার হাত ধরি ‘ঘিরে ধরে কুয়াশা যখন’।” পরিচালকের কথায়, স্মৃতি ফাটলে গানটা অনুপমের কাছে শুনেই লক করেছিলাম। অসম্ভব জরুরি ছিলো গানটা কারণ ছবির চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যবহার করা হবে বলে। সব গানের আগেই কে গাইবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা, মতান্তর হয়ই থাকে। স্মৃতি ফাটলে নিয়ে অনুপমের মতামতের সঙ্গে আমার মত মিলছিল না। ও নচিকেতা বলছে, আর আমি বলছি তোমার এখনকার গলায় গানটা যেমন চাইছি তেমন খুলবে না। আমার আপত্তি সত্ত্বেও অনুপম জেদ ধরে তোমার কথাই বলে চললো। আমি বললাম ওকে যে, আমিও নচির অন্ধ ভক্ত, কিন্তু…। শেষকালে ঠিক হলো তুমি গাইবে। আমার তখনও মত নেই। ২২ জুলাই সকালে গানটা রেকর্ড করলে তুমি। ২৩ জুলাই সকাল সাড়ে এগারোটায় আনমিক্সড ট্র্যাকটা পেলাম তোমার গানের! আমি ডাবিং স্টুডিওতে বসে শুনলাম! সব তালগোল হয়ে গেলো আমার! পরপর দুবার শুনলাম তোমার স্মৃতি ফাটলে গানটা। আমার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীকে শুধু বললাম, ”বাঘ শালা বাঘই থাকে! এমনি এমনি ও নচিকেতা হয়নি!” তারপরই অনুপমকে লিখলাম, আমার মতামতের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিলাম ভাই! আমি ভুল বলেছিলাম। এবার তুই যা যা ইচ্ছে বাজিয়ে নে অ্যারেঞ্জমেন্টে!”

কৌশিক তাঁর সিনেমার জন্য হল ভিসিট (Hall Visit) করতে মধ্যমগ্রাম স্টার মলে গিয়ে, সিনেমা চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ‘স্মৃতি ফাটলে’ গান দেখে শুনে বিহ্বল হয়ে যান। তখন তিনিও জেন দর্শক যাঁদের কারোর চোখে জল কেউ আবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। পরিচালক উপলব্ধি করলেন কীভাবে নচিকেতার কণ্ঠ সকলের মন ছুঁয়ে গেছে। গান শুনে দর্শক চোখ মুছছে, আর আমি চোখ মুছছি একজন শিল্পীর অহংকার, নিষ্ঠা ও মননের গভীরতা দেখে! নিজের ভুল স্বীকার করতে কোনোদিনও আমার ছোট লাগেনি, আজও লাগছে না নচি। ‘ধূমকেতু’র ক্লাইম্যাক্সে নচিকেতা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বড় পর্দায়।… আমি ভুল প্রমাণিত হলাম, জিতে গেল অনুপম আর ‘ধূমকেতু’ (Dhumketu)।

–

–

–

–

–

–

–

–