Monday, November 3, 2025

বিশ্বের ২০ লক্ষ মানুষকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ: সাপের বিষের ওষুধও এবার বানাবে AI

Date:

স্কুল জীবনে বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল সকলেই কম বেশি পড়ে থাকি। তারপরেও বিজ্ঞানের কোনও প্রযুক্তি হাতে এলে তার সদব্যবহারের থেকে অপব্যবহার বেশি করে থাকি। তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ এআই। বাজারে এর প্রভাব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এখন সবার হাতে হাতে। ছবি থেকে ভিডিও, রাজনীতি থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, প্রচার থেকে অপপ্রচার – সর্বত্র এআই-এর (AI) অবাধ প্রয়োগ। সার্বিক হিসাবে প্রমাণিত – বিশ্বের ভালো করার বদলে খারাপ করতেই এই প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে চলেছে। ভালো প্রয়োগ হলেও তার প্রচার বা প্রসার খুবই সীমাবদ্ধ এখনও। তবে এবার এআই-কে ব্যবহার করে যুগান্তকারী বদল আনতে চলেছেন ডেনমার্ক, মেক্সিকোর বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ যে সাপের বিষের সমস্যায় ব্যাপকভাবে প্রতিবছর ভোগান্তির শিকার হয়, মৃত্যু হয় হাজার হাজার মানুষের, সেই সাপের বিষের অব্যর্থ ওষুধ (anti-venom) প্রস্তুত করতে চলেছে এআই।

গ্রাম বাংলায় সারা বছর, বিশেষত বর্ষাকালে সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা যেমন খুব আতঙ্কের হলেও, খুবই স্বাভাবিক। তেমনটা গোটা বিশ্বে। খড়ের গাদা বা বিছানার তোষক, বালিশে লুকিয়ে থাকা সাপের অস্তিত্ব বুঝতে পারার আগেই তার শিকার হয় গ্রামের মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে সর্পদংশনের দীর্ঘক্ষণ পরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখে বোঝা যায় সাপের কামড়। ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে, অ্যান্টি-ভেনম প্রয়োগের পরও রোগীকে বাঁচানো যায় না। পরিবারের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে চিকিৎসকদের উপর। যদিও তাঁরা সেই সময় বোঝার অবস্থায় থাকেন না যে, যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে তার চরিত্র ওষুধের থেকে আলাদা। আর এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।

যার কারণ হল, বিশ্বে খুব কম সংখ্যক জায়গায় সাপের বিষের ওষুধ তৈরি হয়। ভারতে যেমন একাধিক বেসরকারি সংস্থা এই ওষুধ তৈরি করলেও তা মূলত দক্ষিণ ভারত নির্ভর। ফলে উত্তর বা পূর্ব ভারতের সাপের বিষের চরিত্র যেই আলাদা হয়ে যায়, আর দক্ষিণ ভারতের সাপের বিষ থেকে তৈরি ওষুধ অন্য এলাকার রোগীদের উপর কাজ করে না। সাপের বিষের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা এটাই, স্থান ভেদে একই সাপের বিষের চরিত্র আলাদা হয়ে যায়। ফলে এক জায়গার সাপের বিষ (snake venom) থেকে তৈরি অ্যন্টিভেনমে (anti-venom) যে ধরনের প্রোটিন থাকে তা অন্য জায়গার সাপের বিষের উপর কাজ করতে পারে না। ফলে অ্যান্টি ভেনম দেওয়া সত্ত্বেও মানুষের মৃত্যু হয়। সাপের বিষ তৈরির সময় একই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাপ সংগ্রহ করে অ্যান্টি ভেনম তৈরি করা সম্ভব হয় না আজকের দিনেও।

যার ফলস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বের প্রতি বছর অন্তত ২০ লক্ষ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। তার মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় প্রতি বছর। অন্তত ৩ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় পঙ্গু পর্যন্ত হয়ে যান। এর উপর সাপের কামড়ে ভারতের মতো দেশের ওঝার উপদ্রব তো রয়েইছে। তবে এই কুসংস্কার থেকেও সহজেই মুক্তি মিলতে পারে যদি জ্বরের প্যারাসিটামলের মতো সাপের বিষের অব্যর্থ কোনও ওষুধ বাজারে আসে।

আর সেই চেষ্টাই করে চলেছেন মেক্সিকো ও ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা। মূলত সাপের বিষের প্রোটিনের গঠন বুঝে তা থেকে এআই-এর সাহায্যে ওষুধ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যে নিউরো বিষ, কোষ ধ্বংসকারী বিষ সাপের বিষের (snake venom) কারণে শরীরে প্রবেশ করে, তার প্রোটিনের গঠন বিশ্লেষণ করে ওষুধ তৈরি হবে। প্রোটিনের ডিএনএ-কে এআই প্রযুক্তিতে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বিষের জন্য ওষুধ পাওয়া সম্ভব হবে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। সেই সঙ্গে এই প্রযুক্তিতে ওষুধ তৈরি হলে তা ব্যাপক সংখ্যায় তৈরি সম্ভব হবে। ফলে গোটা বিশ্বে অ্যান্টিভেনমের সুবিধা পেতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: ছোড়না নহি, লড়তে রহো: দিলীপকে রবি শঙ্করজি

যদিও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই প্রক্রিয়া হতে অনেক সময় লাগবে। ইতিমধ্যে কিছু নমুনা বিজ্ঞানীদের হাতে পৌঁছেছে তা দিয়ে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে পরীক্ষাগারের ইঁদুরের। তবে বিভিন্ন ধরনের বিষের প্রোটিন পর্যালোচনা করে এআই মাধ্যমে ওষুধ তৈরি শুরু হতে সময় লাগছে। যদিও একবার ওষুধ তৈরি শুরু হলে তার পরে গতি খুবই বেশি থাকবে। সৌজন্যে AI।

Related articles

ঝুলনকে নিয়েই সাফল্যের উদযাপন স্মৃতিদের, বাঙালির গর্ব বিশ্বকাপজয়ী রিচা

পঙ্কজ রায় থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা ঝুলন গোস্বামী, ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে বাংলার মুখ অনেকেই। কিন্তু সৌরভ-ঝুলনদের পাশে ছিল...

মায়ানগরীতেই স্বপ্নপূরণ, এক নজরে ব্যাটে বলে ধামাকাদার ম্যাচের স্কোর বোর্ড

মুম্বইকে বলা হয় মায়ানগরী। কত স্বপ্ন এখানে সফল হয়। এই মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২০১১ সালে ২ এপ্রিল ওয়ানডে...

ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মেয়েরা: শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর ও ক্রীড়ামন্ত্রীর

রবিবারের মধ্যরাতে রচিত হল নতুন ইতিহাস। প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মহিলা ক্রিকেট ব্রিগেড। ইতিহাস রচনা হওয়ার রাতে ভারতীয়...

দীপ্তি-শেফালিদের হাত ধরেই বিশ্ব জয়ের তৃপ্তি, ইতিহাস সৃষ্টি হরমনপ্রীতদের

বিশ্বসেরা ভারত(India)। মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া। মুম্বই ইতিহাস সৃষ্টি ভারতীয় মহিলা দলের। প্রোটিয়াদের ...
Exit mobile version