বন্ধুত্বের বাহানায় বিপুল ক্ষতির মুখে গোটা দেশকে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বসানো শুল্কের সরাসরি প্রভাব এবার নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটেই (Gujarat)। ডায়মন্ড সিটি অফ ইন্ডিয়ায় (Diamond City of India) হিরের উৎপাদন এতটাই ক্ষতির মুখে পড়ছে যে সেখানে অন্তত ১ লক্ষ হিরের শ্রমিক বেকার হয়ে গিয়েছেন। বড় বড় সংস্থাগুলি তো এখনও ছাড়াইয়ের ব্যাপারে মুখই খুলছে না। বন্ধ হচ্ছে একটা বড় অংশের হিরে (Diamond) পালিশ ও রূপদানের কারখানাও।
জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন রাষ্ট্রপতির শুল্ক (US tariff) চাপানো শুরু হতেই ধাক্কা লাগা শুরু হয়েছে ভারতের হিরে শিল্পে। হিরে পালিশ ও আনুষঙ্গিক কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বেতন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাপক হারে ছাটাইও (lay off) শুরু হয়। ২০২৪ থেকে ছয়মাসে অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের আত্মহত্যার অভিযোগ করেছেন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগু হওয়ার পরে। মার্কিন রাষ্ট্রপতির ঘোষণার দশ দিনের মধ্যে প্রথমে ১০ শতাংশ, পরে ২৫ শতাংশ ও শেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর্মী ছাঁটাই (lay off) করে সুরাট, ভাবনগর, আমেরিলি, সৌরাষ্ট্রের হিরে কাটিং ও পালিশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি। শ্রমিকদের দাবি সৌরাষ্ট্র, জুনাগড়, ভাবনগর এবং আমরেলি এলাকায় প্রায় চার লক্ষ শ্রমিক এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। যাদের বেতন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে। এই শ্রমিকের মধ্যে প্রায় এক লক্ষ মানুষের কাজ গিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
গুজরাটের সবথেকে বড় হিরের কাজ হয় সুরাটে (Surat, Diamond City of India)। সেখানকার একাধিক সংস্থার কর্ণধারদের দাবি, যেভাবে করেছে আমেরিকা তাতে প্রাথমিকভাবে হিরের উৎপাদন কমবে। আর উৎপাদন কমলে ছাঁটাই অনিবার্য। ছোট ছোট সংস্থা থেকে যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের হিরে তৈরির গবেষণাগারগুলিতে (lab grown diamond) অনেক সময় নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পঞ্চাশ শতাংশ শুল্কের কারণে সেই গবেষণাগারগুলিতেও উৎপাদন কমেছে। ফলে তারাও নতুন করে কর্মী নিতে অপারগ।
বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ হিরের পালিশ ও কাটিং-এর কাজ ভারতে, বিশেষত গুজরাটে হয়। ২০২৫ অর্থ বর্ষে আমেরিকায় অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলারের হিরে রফতানি (diamond export) করেছে ভারত। কিন্তু শুল্ক লাগু হওয়ার পর থেকে মার্কিন হিরে ক্রেতারা আদৌ আর ভারত থেকে হিরে কিনবেন কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই অনেকে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে হিরে কেনার দিকে নজর ঘুরিয়েছে, দাবি ভারতের হিরে ব্যবসায়ীদের।
আরও পড়ুন: ভয় পেয়েই কুকথা শান্তনুর! ফাঁস মতুয়াদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি
জানুয়ারি মাস থেকে শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যায় গুজরাটে হিরের শ্রমিকদের ছাঁটাই বড় আকার ধারণ করলে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন শ্রমিকরা। ধর্মঘটের পথেও গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময়ে গুজরাট সরকার হিরে শ্রমিকদের জন্য আর্থিক অনুদানের কথা ভেবেছিল। কিন্তু সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে সবথেকে লাভজনক ব্যবসার শ্রমিকরাই এখন অতল জলে, নরেন্দ্র মোদির বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে।
–
–
–