Monday, December 8, 2025

অনির্বাণকে যাঁরা হিংসে করছেন, তাঁদের মাথায় পড়ুক বাজ!!!!

Date:


অভিজিৎ ঘোষ
অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya) গান গেয়েছেন। এবং সে নিয়ে নানা মুনির নানা কথা। আগেও মাঝে মধ্যে গান গেয়েছেন অভিনেতা। ইউটিউব-ফেসবুকের কল্যাণে ঘুরেফিরে শুনতাম মুম্বইয়ের অভিজিতের সঙ্গে ‘নয়ন সরসী কেন’ গানের কয়েক কলি। বেশ লেগেছিল। ‘কিচ্ছু চাইনি’ তো কয়েকবার শুনেছি। আবার এই ‘মেলার গান’ও তো ভাল, দারুণ একটা চলন আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসবের মাঝে হঠাৎ দেখলাম ওঁর ‘হুলি গান ইজম’-এর ক্লিপিং। অভিনেতা যে একটা আস্ত গানের দল বানিয়ে ফেলেছেন, সেটা জানা ছিল না। সেখানে যেটুকু শুনেছি বা সকলে শুনছেন সেটা নিয়েই বিতর্ক, নানা কথা, নানা মুনির নানা মত।

প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল, অনির্বাণ তাঁর লক্ষ্যে সফল। দলটা তৈরি করার পর একটুও পিআর, বিজ্ঞাপন, তদ্বির, চিঠি-চাপাটি কিচ্ছুটি করতে হল না। শুধু একটা অনুষ্ঠানের মিনিট কয়েকের ক্লিপিংস নিয়ে ফেসবুক আপলোড। তাও নিজে নয়, কোনও একজন। ব্যস। এক সপ্তাহে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গায়ক থেকে অভিনেতা, এমনকী রাজনীতিবিদরাও বাদ নেই প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ব্যাপারে। আমি নিশ্চিত, অনির্বাণ ঠোঁটে সিগারেট নিয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। বলছেন, সিনেমায় আমায় ছাঁটলি তো কী আছে, আমি গানে ফাটাব। গান বন্ধ করলে কবিতা বলব। কবিতা বন্ধ করে দিলে নাটক করব। আমারে তোমরা দাবায়ে রাখতে পারবা না… মানতেই হবে, অনির্বাণ প্রতিভাধর।

সময়টা নব্বইয়ের শুরু। সুমনের পাশাপাশি তখন নচিকেতা তরুণ তুর্কি। বাংলায় র‍্যাপ সচরাচর শোনা যায় না। কিশোর কুমার-সহ অন্যরা চেষ্টা করেছেন। রেয়ার। নচি প্রথম অ্যালবামেই গাইলেন… এই বেশ ভাল আছি/ কর্ম কাজ নেই/ অফিস কাছারি নেই… দু’নয়নে ভয় আছে। পাক্কা সমাজের কথা, উপলব্ধির কথা। মানুষের কথা। যা সাধারণের কথা বলে, সমাজের কথা বলে তার মধ্যে রাজনীতি তো থাকবেই। নচির পর বাংলা র‍্যাপের চেষ্টা হয়নি, তেমনটা নয়। কিন্তু সেভাবে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া বাংলা র‍্যাপ দাগ কাটেনি। কারণ, তার মধ্যে আমজনতার কথা, রাজনীতির কথা কম। তাই গীতিকারের মতো মানুষও গানগুলিকে এড়িয়ে গিয়েছেন। অনির্বাণ ৩৫ বছর পর আর একটা পরীক্ষা করলেন। হ্যাঁ, আমি পরীক্ষাই বলতে চাইছি। অনির্বাণ প্রতিভাধর। না ভেবে এসবে নেমেছেন, ভুলেও ভাববেন না। পুরোটাই পরিকল্পিত।

টিপিক্যাল র‍্যাপে ঢুকলেন না রবি ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে ‘ডিটেকটিভ’-এর অনির্বাণ। র‍্যাপের সমস্যা হচ্ছে — এত দ্রুত শব্দ উচ্চারণ করা হয় যে তা শব্দ-কল্প-দ্রুমে পরিণত হয়। আম পাবলিক ঠিক অনুধাবন করতে পারেন না। এটা বুঝেই ‘মিথ্যে প্রেমের গান’-এর নায়ক গল্প বলার ঢঙটা নিলেন। অনেকটা ঊনবিংশ শতকের কবিয়াল গানের মতো। ‘এন্টনি ফিরিঙ্গি’তে উত্তম কুমার-অসিতবরণের গানের লড়াইয়ের কথা মনে আছে? তখন থাকত ঢাক-ঢোল- হারমোনিয়াম। অনির্বাণের সময় তাঁকে দিয়েছে সিন্থেসাইজার, প্যাড, ড্রাম, স্প্যানিশ। সময় বদলে গানের ভাষা এখন কথ্য, আড্ডা মারার ভাষা। জেনারেশনের ভাষা। কে বলছেন? সিনেমার নায়ক বলছেন। কাদের নিয়ে বলছেন? তাঁরাও পাবলিকের চর্চায় আছেন। শুধু তাই নয়, যখন ওরা গাইছে, তখনও তাদের গানের ক্যারেক্টরগুলোও বড্ড সাম্প্রতিক। ফলে রিলেট করতে অসুবিধে হচ্ছে না। হইহই হওয়াটা স্বাভাবিক। অনির্বাণ বলে একটু বেশি। যে কারণে ‘রঙ বরষে’ অমিতাভ না গেয়ে অন্য কেউ গাইলে এতটা জনপ্রিয়তা পেত কি?

অনির্বাণের পরেরটা মাস্টার স্ট্রোক। যেটা ক্লিপিংসে দেখা যাচ্ছে, সেটা গান নয়। কবিতা-গান। কবিতাকে মাঝে মধ্যে একটু সুরে বলার চেষ্টা। এটা একটা স্টাইল। ভাল না খারাপ সেটা বিচার করবে সময়। লোকজনের ভাল লাগলে শুনবে। কিন্তু অনির্বাণ বুঝেছিলেন, সুরের মায়াজাল না থাকলে বেশিক্ষণ আটকে রাখা যাবে না, নায়ক হলেও নয়। তাই দরকার স্টান্ট। অর্থাৎ পাবলিক যেটা খায়। সেটা হল নেতাদের গালাগালি, চুলকানি, একটু শ্লেষ, একটু খিস্তি। তাহলে ক্যারেক্টর কে হবে? ক্যারেক্টর খুঁজতে সমাজবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। সঠিক চয়ন তিন ঘোষ। কুণাল, দিলীপ, শতরূপ। কুণালের সোশ্যাল মিডিয়া দেখলেই বুঝতে পারবেন, লোকে সেখানে গালাগালি করছে, কিন্তু পোস্টটা পড়ছে। এক অমোঘ আকর্ষণ। লোকটা জ্বলিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু পড়তে না পারলে মিস হবে যাবে যে। এই যে একটা ভাবমূর্তি তাকে ক্যারেক্টর করলে গানের বাড়তি সুবিধে। দ্বিতীয় দিলীপ ঘোষ। দলের একটাও পদে নেই লোকটা। অথচ দেখুন, তার বিয়ে নিয়ে যা হইহই হয়েছে, তা ফিল্ম আর্টিস্টের চেয়ে কম কী! আর শতরূপ! ও আগে এতটা পপুলার ছিল না। ২০ লাখি গাড়ির খোঁজটা কুণাল খোঁচা মেরে সকলকে জানাতেই শতর কথা ঘরে-ঘরে। তিনজন তিন দলের। প্রচুর সদস্য-সমর্থক রয়েছেন। সকলে শুনতে চান। যাঁরা সেসব নন, তাঁরা কৌতূহলে দেখতে চান। অর্থাৎ পাবলিক ধরে রাখার স্ট্রাটেজিটায় মেদিনীপুরের ছেলেটা একেবারে ঝক্কাস। টলি দুনিয়ার নায়ক-নায়িকারা ওঁর কাছে ক্লাস করতে পারেন।

গান পর্যন্ত ঠিক ছিল, আজকের মিডিয়া গানের ক্যারেক্টরদের ধরে ধরে, ব্যান্ডের লোকজনকে ধরে ধরে প্রতিক্রিয়া নিয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে দিল শতগুণ। তার মধ্যে আবার যদি রুদ্রনীলের মতো ‘আকাট’ কেউ কেউ থাকে, তাহলে তো কথাই নেই! অনির্বাণ যেটা করতে চেয়েছেন, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ডিভিডেন্ড পেয়েছেন।

এক সময় দেখা যাচ্ছে, ওঁর সনাতনী নিয়ে আকাটরা তর্ক করছে, আর তিনদিনে দল গড়ে দশদিনের মাথায় গান নিয়ে বিদেশ সফরে যাচ্ছে ‘হুলি গান ইজম’।বামেরা বলছে, ওর গানে বামেদের শূন্য হওয়া আছে, তাহলে রাজ্যের বিরুদ্ধে বলার অনেক ইস্যু আছে, তা কেন থাকবে না! বলছি, গায়ক কোন ইস্যুতে গান বাঁধবেন, তা কি কোনও দলের পার্টি অফিস ঠিক করে দেবে? গায়ক বা নায়করা কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্যুর ঠিকাদার নন। তাঁকে যেটা টানবে, গানের জন্য যেটা বলতে হবে বলে মনে করছেন, সেটাই বলবেন। আসলে বলুন না, শ্লেষটা মরমে এসে বিঁধেছে, তাই ভিতরের জ্বলুনি থেকে এসব অর্বাচীনের মতো কথা বলছেন!

অনির্বাণকে যাঁরা হিংসে করছেন, খিস্তি করছেন, সমালোচনা করছেন, বলছি… তাঁদের মাথায় পড়ুক বাজ।
ভাই…ভাই কিছু মনে করবেন না!

 

Related articles

শুরু ২৫তম নাট্যমেলা, উদ্বোধনে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল – অরূপ – ব্রাত্য

রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির উদ্যোগে শুরু হলো ২৫তম নাট্যমেলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তিন...

প্রয়াত চলচ্চিত্রের যুগান্তরের সাক্ষী কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়, শোকের ছায়া টলিউডে

প্রয়াত বাংলা চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। রবিবার রাতে হাসপাতালেই প্রয়াত...

জৌলুসহীন সুপার কাপের ফাইনাল, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়েও দিশাহীন কল্যাণ

রবিবার গোয়াতে সুপার কাপের (Super Cup) ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ও এফসি গোয়া।  সুপার কাপ (Super Cup)...

ট্রফি জয়ের স্বপ্নভঙ্গ ইস্টবেঙ্গলের, সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন এফসি গোয়া

সুপার কাপে(Super Cup) চ্যাম্পিয়ন এফসি গোয়া(FC Goa)। ফাইনালে ইস্টবেঙ্গেলর (East bengal)  বিরুদ্ধে নাটকীয়ভাবে টাইব্রেকারে ৬-৫ ফলে জয়ী গোয়া।...
Exit mobile version