Thursday, December 11, 2025

মনের শান্তি চোখের আরাম: রূপের পসরা সাজানো পূর্ব সিকিমে ঘোরা যাক পুজোতে

Date:

Share post:

অংশুমান চক্রবর্তী
ছোট্ট রাজ্য সিকিম। বাঙালি পর্যটকেদের খুবই প্রিয়। পাশের এই রাজ্যের উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বে (east sikkim) আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। দেখে নেওয়া যাক, পূর্ব সিকিমে  (east sikkim) ভ্রমণ-উপযোগী কী কী জায়গা আছে।

স্বল্প পরিচিত একটি জায়গা পাস্তাংগা। ৪৬৭৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। প্রকৃতিপ্রেমীদের নিরাশ করবে না। ভুটানি ভাষায় ‘পাসিং টেংখা’ থেকে ‘পাস্তাংগা’ নাম হয়েছে। এর অর্থ বাঁশের জঙ্গলের নিচে। জায়গাটাকে ঘিরে রয়েছে ঘন সবুজ অরণ্য। বিভিন্ন ধরনের ওষুধের গাছ জন্মায়। দেখা মেলে নানা প্রজাতির অর্কিডের। পাহাড়ের ঢালে আদা ও এলাচ চাষ হয়। পাস্তাংগার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে তোকচেন নদী। এই নদীর তীরে বসে জমিয়ে পিকনিক, মাছ ধরা যায়। সহজ কথায়, পাহাড়ের কোলে, সবুজের মাঝে, নদীর তীরে সময় কাটানোর এক অনবদ্য ঠিকানা। গ্রামের জঙ্গলে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় রঙবেরঙের পাখি ও প্রজাপতি। এখান থেকে হিমালয়ের শৃঙ্গ সেইভাবে দেখা যায় না। খানিক দূরে ঢুঙ্গেলখড়কা বা খেদি গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। পাস্তাংগা থেকে ঢুঙ্গেলখড়কা প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার হাঁটা পথ। আর খেদি যেতে হলে দুদিন ট্রেক করতে হবে। যাঁরা শারীরিক ভাবে ফিট, তাঁরাই যেতে পারেনপাস্তাংগায় রয়েছে ১৫০ বছরের প্রাচীন হেরিটেজ হাউস। রাই ও ভুটিয়া সম্প্রদায়ের তৈরি। হেরিটেজ হাউস নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ ও কাদা। ঘুরে নেওয়া যায় সুমনিওয়ারি জলপ্রপাত।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে পাস্তাংগার দূরত্ব ১২২ কিলোমিটার। গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে মোটামুটি ৪০০০ টাকা। গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারে মতো। পাকইয়ং থেকে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। দুই জায়গা থেকে টানা গাড়িতে গেলে খরচ পড়বে মোটামুটি ১০০০-১২০০ টাকা। আছে হোমস্টে এবং হোটেল। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না।

আরও পড়ুন-অশান্ত নেপালে আটকে বাঙালি পর্যটকরা, হেল্পলাইন চালু রাজ্য পুলিশের

যাওয়া যায় সিংতাম। ৩০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। নিভৃত অবকাশযাপনে পাহাড়ের সঙ্গে নদীর যুগলবন্দি উপভোগ করতে হলে এটা হতে পারে আদর্শ ঠিকানা। উপত্যকার বুক চিরে বয়ে চলেছে অপূর্ব রিশি বা রেশি নদী। উচ্ছ্বল সেই নদীর সর্পিল যাত্রাপথকে আকর্ষণীয় করে তোলে নদীর বুকে ওঠা ছোট ছোট ঢেউয়ের নিরন্তর প্রবাহ। চোখে পড়ে মঠ, কমলালেবুর বাগান। দূষণ এখানে নেই বললেই চলে।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে সিংতাম ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকার মতো। কম খরচে যেতে চাইলে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী শেয়ার জিপ বা বাসে নামতে হবে রংপো। সেখান থেকে অন্য গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছানো যায় ১৪ কিলোমিটার দূরের সিংতাম। থাকার জন্য আছে রিসর্ট। স্বাদ নেওয়া যায় স্থানীয় খাবারের।

দারুণ জায়গা আরিতার। ৪৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি লেক। আসল নাম লামপোখরি। তবে পর্যটকমহলে পরিচিত আরিতার নামেই। চারপাশে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। পান্নাসবুজ জলের লেকে প্যাডেল-বোটে ভেসে বেড়ানো যায়। লেকের চারপাশ দিয়ে বাঁধানো রাস্তা ধরে প্রদক্ষিণও করেও নেওয়া যায় পুরো লেকটি। তবে স্থানীয় রীতি মেনে, বাঁ দিক থেকে হাঁটা শুরু করে ডানপ্রান্তে এসে শেষ করতে হয়। লেকের কাছ থেকেই আলাদা হওয়া চড়াই রাস্তা ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় মাংখিম। ৬৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। মাংখিম থেকে এক দিকে যেমন দেখা যায় পুরো আরিতার লেকটি, অন্য দিকে দূর আকাশে নজরে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও অন্যান্য তুষারশৃঙ্গের সুন্দর দৃশ্য।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আরিতার লেকের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। যেতে হয় রংপো হয়ে। গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকার মতো। এছাড়া গ্যাংটকগামী শেয়ার জিপ বা বাসে রংপো এসে, সেখান থেকেও গাড়ি ভাড়া করে আরিতার পৌঁছনো যায়। তাতে খরচও খানিকটা কম হয়। রিসর্টে থাকা যায়। পাওয়া যায় স্থানীয় খাবার

আরও পড়ুন-ব্লক এভরিথিং আন্দোলনে জ্বলছে ফ্রান্স! জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ চরমে, গ্রেফতার ৩০০

ছবির মতো একটি জায়গা সিল্করুট। যেন মেঘের দেশ। অতীতে এই পথেই ভারত থেকে তিব্বত হয়ে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বাণিজ্য চলত। বৈচিত্র্যের জন্য এই পথ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হিসাবে বিবেচিত। লিংতাম থেকে যাত্রা শুরু করে পদমচেন, জুলুক হয়ে পৌঁছনো যায় থাম্বি ভিউ পয়েন্ট। ১১,২০০ ফুট উচ্চতা থেকে এক দিকে যেমন দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা ও অন্যান্য তুষারশৃঙ্গের দারুণ দৃশ্য, অন্যদিকে, ফেলে আসা পথের প্রতিটা বাঁকের একত্রিত দৃশ্যও নজর কাড়বে। থাম্বি ভিউ পয়েন্টের পরের বাঁকেই অবস্থিত ধূপিদাঁড়া। উচ্চতা ১১৩০০ ফুট। এখান থেকেও ভারি চমৎকার দেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ সমগ্র তুষারশৃঙ্গশ্রেণিকে।

নিউ জলপাইগুড়ি এবং গ্যাংটক থেকে যাওয়া যায়। এখানে হোমস্টে আছে থাকা ও খাওয়ার জন্য। সবমিলিয়ে পুর্ব সিকিমের (east sikkim) এই জায়গাগুলোয় রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে প্রকৃতি। কয়েকদিন ঘুরে বেড়ালে মন ভাল হয়ে যাবে। পাবেন চোখের আরাম। পুজোর ছুটিতে সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন।

spot_img

Related articles

দীর্ঘ পাঁচ মাস পর বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরলেন কাকদ্বীপের ৪৭ মৎস্যজীবী 

দীর্ঘ পাঁচ মাসের কারাবন্দির পর অবশেষে বুধবার দেশে ফিরলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের ৪৭ জন মৎস্যজীবী। ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল...

বনগাঁ পুরসভা: আস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগ করলেন পুরপ্রধান গোপাল শেঠ

বনগাঁ পুরসভায় চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। নভেম্বরের শুরুতে দলের নির্দেশে পদত্যাগের কথা বলা হলেও তিনি তা...

মানুষকে বল বানিয়ে ক্যাচ-ক্যাচ খেলতেন! মহাকাশের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন শুভাংশু 

কলকাতায় ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সে শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্রদের সামনে মহাকাশে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ভারতের দ্বিতীয় নভোচারী...

SIR এখন গব্বর সিং-আতঙ্ক! সংসদে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব শতাব্দী 

নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে লোকসভায় আলোচনায় তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের উপদলনেতা শতাব্দী রায়। বুধবার তিনি অভিযোগ করেন, এসআইআর...