নিজেই নিজেকে ‘সুপারস্টার’ কিংবা ‘মেগাস্টার’ তকমা দেয়া যায় কি? যদি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির (Bengali Entertainment Industry)দিকে তাকানো যায়, তাহলে উত্তরটা যে হ্যাঁ হবে সে কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ট্রেন্ড এল কোথা থেকে? আর কীভাবে? নিজের জীবদ্দশায় উত্তম কুমার নিজেকে ‘মহানায়ক’ আখ্যা দিয়েছিলেন বলে কোনদিন শোনা যায়নি। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ পরবর্তী অধ্যায়গুলোতেও সেই একই ছবি ধরা পড়ে। কিন্তু চলতি বছরে টলিউডের ছবিটা পুরোটা বদলে গেছে। হঠাৎ করেই কেউ একজন হয়ে উঠেছেন ‘লেডি সুপারস্টার’, কাউকে নিয়ে আবার মেগাস্টারের গান বাধা হয়েছে। আর এতেই বিরক্ত নেটপাড়ার একাংশ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর অনেকে যেমন এইসব তারকাদের অনুরাগী, তেমন অনেকেই আবার বলছেন টলিউড আবার দক্ষিণের প্রচার কৌশলকে নকল করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে।

বিষয়টা একটু খোলসা করে বলা যাক। ‘ধূমকেতু’ অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে (Subhashree Ganguly) সাম্প্রতিককালে ‘লেডি সুপারস্টার’ নামেই ডাকা হয়। তিনি ‘পরিণীতা’ কিংবা ‘গৃহপ্রবেশ’-এর মতো সিনেমায় ভালো অভিনয় করেছেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ ওয়েব সিরিজে তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখলে চোখের পলক পড়ে না। কিন্তু সিনেমা সুপারহিট হওয়া মানেই নিজেকে সুপারস্টারের তকমা দেওয়া ব্যাপারটা কি মেনে নেওয়া যায় নাকি উচিত, এই নিয়ে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা দ্বিধাবিভক্ত। অনেকে সাদাকালো যুগে ফিরে গিয়ে সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনদের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এমনকি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কিংবা কোয়েল মল্লিকদেরও কখনও নিজেকে সুপারস্টার বলে জাহির করতে হয়নি। তাঁদের কাজই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। দর্শক তাঁদের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। তাহলে হঠাৎ করে শুভশ্রী ব্যতিক্রমী কেন? কেউ বলছেন এর নেপথ্যে কোথাও একটা টলিপাড়ার বিশেষ অভিনেতার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার যুক্তি কাজ করছে। অথচ সেই অভিনেতাই তাঁর সিনেমার প্রমোশনে ‘লেডি সুপারস্টার’কে নিয়ে নাকি একটি গান বানানোর অনুরোধ করেছিলেন তাঁর টিমকে, এমনটাই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।

এবার আসা যাক মেগাস্টারের কথায়। কালজয়ী অভিনেতা যিনি দশকের পর দশক ধরে একের পর এক সুপারহিট সিনেমা দর্শকে উপহার দিয়েছেন তাঁকে ‘মেগাস্টার’ (Megastar) আখ্যা দেওয়ার রীতি বলিউডে দেখা গেছে। যেমনটা প্রযোজ্য অমিতাভ বচ্চনের ক্ষেত্রে। কিন্তু সংসদ অভিনেতা দেব (Dev ) হঠাৎ করে কীভাবে সুপারস্টার থেকে মেগাস্টার হয়ে গেলেন তা নিয়ে টলিপাড়ার অনেকেই সমালোচনা করছেন। ‘রঘু ডাকাত’ (Raghu Dakat) অভিনেতা অবশ্য জানিয়েছেন তিনি এই ধরনের তকমা দেওয়া বা নেওয়ার ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী নন। তাঁর আসন্ন ছবির প্রথম টিজার মুক্তি পাওয়ার আগে এসভিএফের তরফে তাঁর নামের আগে ‘মেগাস্টার’ শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবশ্য ‘ধূমকেতু’ (Dhumketu) সিনেমার প্রমোশনে খুব সচেতনভাবেই তিনি এই ট্যাগ ব্যবহার করেছেন। এখন সোশ্যাল মিডিয়া বলছে, দেবের (Dev) যেরকম জনপ্রিয়তা এবং তাঁকে ঘিরে বাংলার গ্রামে গঞ্জে যে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে সেখান থেকে দাঁড়িয়ে তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। তিনি এই প্রজন্মের বাংলার এমন এক অভিনেতা, যাঁকে সাহস করে নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে, তা সে ছবি হিট হোক বা ফ্লপ। কিন্তু এত কিছুর পরেও ‘মেগাস্টার’ তকমা দেওয়াটা খুব তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না তো? আর দর্শককুল কিংবা মিডিয়া এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের আগেই অভিনেতা প্রযোজকরা নিজেরাই যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, তাহলে গোটা বিষয়টাই স্বঘোষিত রাজার মতো হয়ে দাঁড়ায় না কি?

সোশ্যাল মিডিয়ার সমীক্ষা বলছে, দক্ষিণের সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এভাবে নিজের প্রমোশন করে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে অভিনেত্রী নয়নতারার কথা বলা যায়। তিনি এত ফ্লপ দেওয়া সত্ত্বেও নিজেকে ‘লেডি সুপারস্টার’ বলেন। এর জন্য অবশ্য কটাক্ষের শিকারও হতে হয়। এবার কি বাংলা বিনোদন জগতের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও প্রমোশনের খাতিরে সেই সাউথ সিনে ইন্ডাস্ট্রিকেই নকল করতে শুরু করল? প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই।

–

–

–

–

–

–
–