সালটা ২০২৫, সময়টা প্রায় বছরের মধ্যকাল পেরিয়েছে কিন্তু আজও প্রাসঙ্গিক ভাবনা-চিন্তাদের গ্রহণযোগ্যতা সাবলীল হয়ে উঠতে পারল না। অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)- দেবরাজ ভট্টাচার্যদের গানের ব্যান্ড ‘হুলিগানিজম’ (Hooligaanism) নিয়ে কোনও কথা বলতে গেলে সবার আগে এই শব্দগুলোকেই খরচ করতে হচ্ছে। খেউড় স্টাইলে একটি গানের কয়েকটি লাইন সোশ্যাল মিডিয়ায় টর্নেডো তৈরি করেছে। কেউ শুভেচ্ছা- সাধুবাদ জানিয়েছেন, কেউ চটে লাল। কিন্তু তাতে দমে যাওয়া বা থেমে যাওয়ার পাত্র নন অভিনেতা-পরিচালক-গায়ক অনির্বাণ। ‘ঘোষেদের গানের’ বিতর্কের আঁচ নেভার আগেই নীরবতা ভাঙলেন রঘু ডাকাতের (Raghu Dakat) খলনায়ক। অকপটে বললেন, “পয়সা করতে ব্যান্ড করিনি, অন্তর্ঘাত করতে এসেছি।”

অগাস্ট মাসের শেষ দিনে শহর কলকাতার বুকে একটি ব্যান্ডের গানের অনুষ্ঠানে হুলিগানিজম পারফর্ম করতেই ‘ঘোষেদের গান’ নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়। গানের কথায় বর্তমান পরিস্থিতির পাশাপাশি রাজনৈতিক স্যাটায়ার থাকায় খুব দ্রুত তা জনমানসে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ব্যান্ডের সদস্য অনেকেই, কিন্তু আক্রমণ ধেয়ে আসে মূলত অনির্বাণের দিকে। প্রাথমিকভাবে অভিনেতা সুরকার- গায়ক দেবরাজ ভট্টাচার্য (Debraj Bhattacharya) জানিয়েছিলেন, বিশেষ কাউকে টার্গেট করে এই গান বানানো হয়নি। নিছক রসিকতা বা পাতি বাংলায় যাকে বলে মজা করার উদ্দেশ্য নিয়েই লিরিক্স তৈরি করা হয়েছে। এই গান অনেক পুরনো। এ ব্যাপারে ‘মন্দার’ পরিচালকের আলাদা করে কোনও বক্তব্য নেই বলেও জানিয়েছিলেন। এবার সরাসরি মুখ খুললেন অনির্বাণ। একটি সাক্ষাৎকার স্পষ্ট বললেন, দেবরাজ, শুভদীপ বা তিনি প্রত্যেকেই নিজেদের পেশাগত কাজের মধ্যে ব্যস্ত আছেন তাই পয়সার রোজগার করার জন্য এই ব্যান্ড তৈরি করা হয়নি। গায়ক-অভিনেতার কথায়, নয়ের দশক পর্যন্ত অল্টারনেটিভ প্র্যাকটিসের যে জমি ছিল, সেটা দুরমুশ হয়ে গেছে। এই গানের কথা নিয়ে যেরকম বিতর্ক হয়েছে তাতে প্রশ্ন ওঠার সময় এসেছে যে ভারতের বৃহত্তম গণতন্ত্র কতখানি গণতান্ত্রিক? নিজেদের কথাগুলো বলার একটা জায়গা তৈরি করা এবং তার জন্য অন্তর্ঘাত করতেই ‘হুলিগানিজম’ নাম দিয়ে ব্যান্ড তৈরি বলে জানান তিনি ও শুভদীপ।

দেবরাজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘অনেকেই গানের ছোট্ট একটা অংশ থেকে জাজ করছেন যারা হয়তো পুরো গানটা শোনেন নি। এই গানটা আজকের নয় দশ বছর আগেকার। শুধু কথোপকথনের অংশটা প্রেক্ষিত অনুযায়ী বদলে যায়। প্রতি শো-তেই এমনটা হয়। আমাদের যে অংশ ভাইরাল হয়েছে সেই অংশটুকু নিতান্তই রসিকতা।’ অনির্বাণ বলছেন, অনুষ্ঠানে তাঁরা সাতটা গান গেয়েছেন। সেখান থেকে দর্শক কোন অংশটা গ্রহণ করে সেটা নিয়ে সেলিব্রেট করবেন বা তাঁদের গায়ে থুতু দেবেন সেটা সম্পূর্ণ দর্শকের চয়েস এতে শিল্পীর কোন ভূমিকাই নেই।

শিল্পী তাঁর শিল্পসত্তা প্রকাশের জন্য কোন মাধ্যম বা কোন প্রেক্ষিত বেছে নেবেন এটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব স্বাধীনতা। ইন্ডাস্ট্রির স্পষ্ট বক্তা অনির্বাণ সমালোচনাকে সেভাবে আমল দিতে চান না। তেমনই তিনি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে খুব একটা মন্তব্য করা পছন্দও করেন না। তবে তিনি ও তাঁর ব্যান্ডের দল এই সময়ে দাঁড়িয়ে সত্যি একটা বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। হুলিগানিজমের পারফরম্যান্সের পর যে হারে তা নিয়ে কটুক্তি, সমালোচনা এবং আলোচনা হয়েছে তাতে এই জিজ্ঞাসা অমূলক নয় যে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারতবর্ষের জায়গাটা কোথায়? বলে রাখা ভালো, লক্ষাধিক টাকার গাড়ির প্রসঙ্গ বা “সনাতন” শব্দ ব্যবহার শুনেই যাঁরা রে রে করে তেড়ে এসেছিলেন, তাঁদের নাকের ডগা দিয়েই গানের অনুষ্ঠান করতে শারদ উৎসবে বিদেশে উড়ে যাচ্ছেন অনির্বাণরা। বাকিটা না হয় তাঁদের পারফরম্যান্সের জন্যই তোলা থাক… কী বলেন?

–

–

–

–

–

–
–
–