আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তার-পড়ুয়ার নৃশংস ধর্ষণ-খুনের পরে কলেজ ক্যাম্পাসে নেশা করার অভিযোগ তুলে ছিলেন প্রতিবাদীরা। সেই সময় যাঁদের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল, তাঁরাই নাকি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ (BMCH) ক্যাম্পাসের হস্টল ও মাঠে প্রকাশ্যে মদ্যপান করে হুল্লোড় করেছেন। শুধু তাই নয়, হস্টেলের একটি ঘরেই না কি বেআইনিভাবে মদ বিক্রি হয়েছে। এই অভিযোগে স্পন্দন নামে কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়াদেরই একটি কমিটির বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকের কাছে প্রতিবাদপত্র জমা দিয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন ও হাউজস্টাফদের একাংশ।

উদ্দাম নাচ। হাতে বিয়ারের বোতল বা ক্যান। দেখে বোঝার উপায় নেই সেটা কলেজ ক্যাম্পাস না কি কোনও পার্টির লন। সেই ভিডিও ভাইরাল। ভাইরাল ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি ‘বিশ্ববাংলা সংবাদ’। অভিযোগ, সেটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ (BMCH) ক্যাম্পাসের ছবি। শুধু তাাই নয়, কলেজে ক্যাম্পাসে বিয়ারের ক্যান হাতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী, দেবদীপ রায়- যাঁরা অভয়ার খুনের পরে মেডিক্যাল কলেজের পরিবেশ সুস্থ করার দাবিতে তীব্র সুর চড়িয়েছিলেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের অভিযোগ, এই সৌম্যজিৎরাই এখন কলেজ ক্যাম্পাসে দাদাগিরি করছে স্পন্দন নামে একটি কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির নামে টাকা তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

এর বিরোধিতা করে অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদপত্র দিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ। সেখানে তাঁরা লেখেন,
“আমরা, বর্ধমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা, আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে ২০ এবং ২১ সেপ্টেম্বর আয়োজিত ‘স্পন্দন ২০২৫’ অনুষ্ঠানের সময় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আপনার সদয় দৃষ্টিতে আনতে চাই।
১. দেখা গিয়েছে যে বিএমসিএইচ-এর কয়েকজন সিনিয়র এবং জুনিয়র ছাত্র অনুষ্ঠান চলাকালীন মদ্যপান করছিল এবং বিয়ারের বোতল নিয়ে নাচছিল। তাদের আচরণ বিরক্তিকর ছিল এবং অন্যদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নিয়ম অনুসারে, ক্যাম্পাসের ভিতরে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এবং কীভাবে এই ধরনের কার্যকলাপ অনুমোদিত তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
২. আমাদের নজরে এসেছে যে বয়েজ হোস্টেল ১-এর ৭ নম্বর ঘরে একটি বিয়ার স্টল স্থাপন করা হয়েছিল যেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামে মদ বিক্রি করা হয়। আমাদের কাছে খবর, স্পন্দন কমিটির সদস্যরা এই ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
এর প্রেক্ষিতে আমরা আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, যে এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হোক। দায়ীদের জবাবদিহি করা উচিত ও ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের অবৈধ এবং অনুপযুক্ত কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রমাণ হিসেবে, যদি প্রয়োজন হয় আমরা অভিযোগের সমর্থনে নথি জমা দিতেও প্রস্তুত।
আমরা আপনার নেতৃত্বের উপর আমাদের আস্থা রাখি এবং বিশ্বাস করি যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেওয়া হবে।“

এই ছাত্রদের আরও অভিযোগ ‘স্পন্দন‘-এ ৩০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু কীভাবে প্রক্রিয়াটি হয়েছে সকলের কাছেই অস্পষ্ট। এই কমিটির ৩০ জন সদস্যই কেবল ২০২২-২৩ ব্যাচের। কেন কেবল একটি ব্যাচের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত? স্পন্দন কি কেবল ২০২২-২৩ ব্যাচের জন্য এবং অন্যদের জন্য নয়, যদিও সমস্ত ব্যাচ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে? যে স্পন্দন কমিটিকে অবিলম্বে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হোক- দাবি পড়ুয়াদের একাংশের। যদিও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের তরফ থেকে এই বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।

–

–

–

–

–

–