‘গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান’ কথাটা বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে দেওয়াল লিখন কিংবা পরিবেশ দিবসের দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গাছের প্রাণ বাঁচাতে জাগতিক স্বাচ্ছন্দে ব্যস্ত থাকা আমজনতা কি নিজের সবটা ছাড়তে পেরেছে? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ায় জ্বলজ্বল করছে জুলিয়া বাটারফ্লাই হিলের (Julia Butterfly Hill) নাম। মাত্র ২৩ বছর বয়সে জুলিয়া এক রেডউড গাছে (Redwood tree) উঠে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তিনি আর নামবেন না। দেড় হাজার বছরের প্রাচীন গাছকে বাঁচাতে তাঁর সাহসী পদক্ষেপে যে প্রতিবাদের ভাষা ফুটে উঠেছিল তা আজও চর্চার বিষয়।


ঘটনাটা ক্যালিফোর্নিয়ার (California)। আজ যেখানে রেডউড বন (Redwood Forest) পর্যটক থেকে পরিবেশবিদদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, সেই বনাঞ্চল তৈরি হতো না যদি না জুলিয়া থাকতেন।হাজার বছরের পুরনো লালচে-বাদামি গাছগুলো সূর্যের আলো মেখে যে ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে তার প্রতিটা পাতায় লেখা রয়েছে জুলিয়ার প্রতিবাদের ভাষা। কাঠ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে প্রাচীন গাছগুলোকে তিনি নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিয়ে সমাজ সংসারের বিরুদ্ধে যেতেও দুবার ভাবেননি। সারাদিনের ক্লান্তির পর যখন মানুষ নিজের বাড়িতে আরামের বিছানায় আয়েশ করে ঘুমোতে যায়, তখন জুলিয়া (Julia Butterfly Hill) ‘লুনা’ নামের এক দেড় হাজার বছরের পুরনো গাছকে বাঁচাতে তাকে আঁকড়ে ধরে সেই গাছেই ৭৩৮ দিন বাসা বেঁধেছিলেন।


ঘটনার সূত্রপাত ‘প্যাসিফিক লাম্বার’ (Pacific Lamber) নামে এক কোম্পানির বনাঞ্চলের বিশাল অংশ কেটে খেলার ঘোষণা থেকে। আজকের হিসেব করলে প্রতিটি গাছের দাম ধরা হয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। কিন্তু জুলিয়ার কাছে গাছ প্রাণের অংশ। প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হলে যে মানুষ বাঁচতে পারবেনা। অন্যরা সেভাবে না ভাবলেও এই মেয়েটি বরাবরই এরকম। তাঁর পোশাকি নাম জুলিয়া লোরেন হিল। কিন্তু ‘লোরেন’কে সরিয়ে তিনি ‘বাটারফ্লাই’ বসিয়েছেন নিজেই। শোনা যায় সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে এক দিনের একটি হাইকিং সফরে (Hiking) গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় তাঁর হাতের আঙুলে একটি প্রজাপতি (Butterfly) বসেছিল। গোটা সফরে সে জুলিয়ার হাত থেকে একবারও উঠে যায়নি। এরপরই নিজের নামের সঙ্গে বাটারফ্লাই শব্দটা জুড়ে নেন জুলিয়া। রেডউড বনের (Redwood Forest) ‘লুনা’কে বাঁচাতে ১৮০ ফুট উঁচু এই গাছে একটি ছোট কাঠের পাটাতনে বাসা বাঁধেন তিনি। তাঁকে আটকাতে কোম্পানি হেলিকপ্টার উড়িয়ে ভয় দেখাত, দড়ি কেটে দিত, পাহারায় রাখত প্রহরী। কিন্তু জুলিয়া হার মানতে শেখেননি। ৭০ মাইল বেগে ঝড় বৃষ্টি থেকে শুরু করে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করেছেন। কিছু বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে জল ও খাবারের যোগান দিতেন। অবশেষে ৭৩৮ দিন পর ১৯৯৯ সালে ২৩ ডিসেম্বর তৈরি হয় ইতিহাস। জুলিয়ার প্রতিবাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে সব বিরোধী শক্তি। চুক্তি হয়, লুনা (Luna) এবং তার আশেপাশের ২০০ ফুটের মধ্যে থাকা সব গাছকে চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। ২০২৪ সালে, ‘লুনা’র ২৫ তম বর্ষপূর্তিতে আবার সেই গাছের নীচে ফিরে গিয়েছিলেন। অতীতের স্মৃতি উজ্জ্বল বর্তমানেও।

–

–

–

–

–

–
–


