”আমাদের কাছে ১৮ দিন আগে যখন আসে শিশুটি, হাতে পায়ে জোর পাচ্ছিল না, খাওয়া কথা বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাসকষ্টও ছিল। দেখলাম প্যারালাইসিস হয়ে আছে। দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখনই সন্দেহ হয়েছিল গুলেন-বারি সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পরীক্ষা করেও সেটাই ধরা পরে। কিন্তু এটার যে ওষুধ সেটা খুব দামি। নাম intravenous immunoglobulin। ওকে সেটা দেওয়া হলেও বিশেষ উন্নতি হয় নি। অবশেষে আমরা শরীরের পুরো শরীরের রক্ত পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেটা দু’তিনদিনের মধ্যেই শুরু করব”, জানালেন শিশুটির দায়িত্বে থাকা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ প্রভাস প্রসূন গিরি।

গুলেন-বারি সিনড্রোম (Guillain-Barré Syndrome) একটি বিরল অটোইমিউন স্নায়বিক রোগ যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে, যার ফলে পেশী দুর্বলতা এবং অসাড়তা দেখা দেয়। সাধারণত কোনো সংক্রমণের পরে এই রোগ দেখা দেয়। এই রোগের প্রথম লক্ষণ হল হাত-পায়ে দুর্বলতা ও ঝিঁঝিঁ ধরা অনুভূতি। এর ফলে দ্রুত পক্ষাঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার গুলেন-বারি সিনড্রোম থাবা বসালো ১১ বছরের সপ্তম শ্রেণীর এক শিশুর ওপর। প্রায় দুই সপ্তাহের ওপর সে পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থে ভেন্টিলেশনে রয়েছে। সূত্রের খবর, পুজোর মাঝে ডায়রিয়া হয় তাঁর কিন্তু তারপর সমস্যা সেরে গিয়ে পরীক্ষাও দিয়েছে সে। কিন্তু হঠাৎ হাত পা অসাড় হতে শুরু করলে জানা যায় সে গুলেন-বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত।

বিরল এই স্নায়ুরোগ গুলেন বারি সিনড্রোমের উপসর্গ ইতিমধ্যেই চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। চলতি বছরের শুরুতে মুম্বই, পুনে শহরে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। বাদ গেল না কলকাতাও৷ সেই সময়ে গুলেন বেরি আক্রান্ত দুই শিশু পার্ক সার্কাসের একটি শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। গুলেন বারি সিনড্রোমে মৃত্যুও হয়েছে যার ফলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এই রোগ নিয়ে৷ যদিও গুলেন বারি সিনড্রোম কোনও নতুন রোগ নয়, প্রতিবছরই এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয় এবং এই রোগ শিশু এবং বয়স্কদের জন্য মারাত্মক হতে পারে৷ শীতকালে এই রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই বাড়ে।

”গুলেন-বারি সিনড্রোম নতুন নয় একেবারেই, আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় যখন অন্যান্য সমস্যা বাড়ে তখন এর প্রকোপও বাড়ে। এটা সকলেরই হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ৫ বছর থেকে বাচ্চা, যাদের ইমিউনিটি কম থাকে যেমন বয়স্ক বা যারা অনেকদিন ধরেই কোন রোগে ভুগছেন তাদের বেশি হচ্ছে এটা। বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেটা হয় তারা যে রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন সেটা হয়তো নিরাময় হয়ে গিয়েছে কিন্তু এন্টিবডি যেটা তৈরী হয় সেটা শরীরের নার্ভের কাভারিংটা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে বিভিন্ন রকম নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। হাত পা অসাড় হওয়া দিয়ে শুরু হয়, এরপর শ্বাসকষ্টও শুরু হয়।

যাদের মধ্যে পেটের সমস্যা বেশি তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর যে আসল অর্গানিজম সেটা আমাদের পেটে থাকে। তবে এর মানে একেবারেই নয় যে সুস্থ সবল যারা আছেন তাদের হবেনা। এই রোগের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিকভাবে কখনই বলা যাবে না কাদের হয় আর কাদের হয় না। সাবধানতা বজায় রাখতে সুস্থ ডায়েট মেনে চলতে হবে। সেলফ মেডিকেশন একেবারেই চলবে না। কোন কারণে যদি হাত পা, আঙুলের ডগা অসাড় হয়ে আসছে, বা যাদের শ্বাসকষ্ট নেই তাদের যদি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ দিতে হবে”, জানালেন শিশু চিকিৎসক ডঃ সুদীপ মাইতি, ভিসিটিং কনসালটেন্ট ডিসান হাসপাতাল।

–

–

–
–


