Friday, October 31, 2025

রেডিওটা আছড়ে ভাঙলেন রাজীব গান্ধী…

Date:

Share post:


মানস ভুঁইঞা
কাঁথি ময়দান তখন উপচে পড়েছে। মিটিং চলছে। হঠাৎ অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছুটতে ছুটতে এসে রাজীবজির হাতে একটা চিরকুট দিলেন। দেখলাম, ওনার চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে…

তার আগের কথা বলি। আমি তখন অবিভক্ত মেদিনীপুর (Midnapur) জেলার সাধারণ সম্পাদক। ওই সময়ে রাজীব গান্ধী (Rajiv Gandhi) পাইলটের চাকরি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন, হয়েছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, গাড়ি করে ঘুরে ভারত দর্শন করবেন। দেশকে চিনবেন। তারই অঙ্গ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিলেন, অবিভক্ত মেদিনীপুরে আটটি মিটিং করবেন। ৩০ অক্টোবর মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠ, বিকেলে কেশিয়ারই স্কুল মাঠ, সন্ধের আগে এগরা বাসস্ট্যান্ড এবং রামনগরে একটি মিটিং। রাতে আমরা রইলাম দিঘার ইরিগেশন বাংলোয়। আমরা বলতে, প্রণব মুখোপাধ্যায় (Pranab Mukharjee), গণিখান চৌধুরী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সোমেন মিত্র (Somen Mitra), প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি-সহ বাংলার নেতৃত্ব। এবং অবশ্যই ছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

খেতে খেতে রাত গড়িয়ে দেড়টা। ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪ র সকাল। ঘুম থেকে উঠে তৈরি হচ্ছেন রাজীব গান্ধী। তার আগের দিন অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর ভুবনেশ্বরের (Bhubaneswar) একটি মিটিং-এ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Prime Minister Indira Gandhi) মর্মস্পর্শী একটি বক্তৃতা দিলেন। বলেছিলেন, বুঝতে পারছি, আমার ওপর আক্রমণ হতে পারে। আমার জীবনহানি হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করি, ভারতকে শেষ করা যাবে না। আমার শরীরের বিন্দু বিন্দু রক্ত দিয়ে ভারতকে রক্ষা করে যাব। ৩১-এর সকালে রাজীব গান্ধী (Rajiv Gandhi) সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। তারপর রামনগর পুলিশ মাঠে গেলেন। দ্বিতীয় মিটিং কাঁথি ময়দান। আমরা সঞ্চালনা করছিলাম। আশপাশের এলাকার নেতৃবৃন্দ ছিলেন। প্রায় এক লক্ষ মানুষের সমাবেশ। হঠাৎ দেখছি, মেদিনীপুরের ডিএম সুমন্ত্র চৌধুরী, এস পি, এস আই এস আহমেদ ছুটতে ছুটতে মঞ্চে উঠে এলেন। রাজীব গান্ধীর হাতে একটা চিরকুট দিলেন। চিরকুট দেখেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। উঠে দাঁড়ালেন। আমাকে বললেন, “ইউ কন্টিনিউ দ্য মিটিং, আই হাভ টু রাশ টু দিল্লি! দেয়ার ইজ আ সিরিয়াস ডেভলপমেন্ট। আপনাকে ছাড়া মিটিং করব কী করে। আমরা তো মারা যাব! উনি বললেন, না তোমরা কন্টিনিউ করো। কিন্তু আমরা মিটিং বন্ধ করে দিলাম।“ ডায়াস থেকে নামলেন। রাজীবজির নিজের গাড়িটা তখন কী কারণে যেন কোলাঘাটে গিয়েছিল। সামনে গাড়ি বলতে বরকত সাহেবের মার্সিডিজ। উনি সামনের সিটে বসলেন উনি। পিছনে গণিখান চৌধুরী ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। পিছনে একটা সবুজ অ্যাম্বাসাডার ছিল। ওটায় বসলাম আমি, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাড়ি ছুটছে।

খেড়িয়া ও বাজকুলের মাঝখানে রাজীবজির গাড়িটা থামল। আমরাও থামলাম। নয়ানজুলিতে গ্রামের ছেলেরা তখন মাছ ধরছে। রাজীব গান্ধীর হাতে একটা ছোট রেডিও ছিল। সেটা চালালেন। খবর বলছে, দিল্লিতে নিজের বাসভবনেই গুলিতে মৃত্যু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর। রাজীব গান্ধী প্রবল রাগে রেডিওটা আছড়ে ভাঙলেন। কাঁদছেন রাজীব গান্ধী। আর বলছেন, “কিতনা বার মাম্মি কো কাহা থা, ইস সিকিউরিটি কো বদল ডালো। মাম্মি নেহি শুনা। উনহোনে কাহা, আরে ম্যায় প্রাইম মিনিস্টার হু ইন্ডিয়া কি, কৌন শিখ হ্যায়, কৌন হিন্দু হ্যায়, কৌন মুসলিম হ্যায় ইয়ে সব হাম বিচার করেঙ্গে! মাম্মি নেহি শুনা। দেখো আজ কেয়া হো গয়া…”  কাঁদছেন।

প্রণব মুখোপাধ্যায় ডিএম সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায়কে বললেন, “হেলিকপ্টার বুলাও কলাইকুন্ডা থেকে।“ কোলাঘাটের আইওসি মাঠে হেলিকপ্টার এল। আমরাও পৌঁছে গিয়েছি। হেলিকপ্টারে রাজীবজির সঙ্গে চাপলেন বরকত সাহেব ও প্রণব বাবু। দমদমে নেমে স্পেশাল ফ্লাইটে দিল্লি গেলেন। সন্ধ্যায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে আমরা গেলাম দিল্লিতে। দিল্লি (Delhi) তখন এয়ারপোর্ট থেকে তিনমূর্তি ভবন পৌঁছতে লাগল ঘণ্টা পাঁচেক। গিয়ে দেখলাম নিথর দেহ, শুয়ে রয়েছেন ইন্দিরাজি।

spot_img

Related articles

পাঁচবার যান: তালিকায় ন্যায্য পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নিশ্চিত করতে নির্দেশ অভিষেকের

বিহার নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপেই স্পষ্ট হয়েছে ন্যায্য ভোটারদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ায় সবথেকে বেশি...

যুদ্ধবিরতি! অরূপ মধ্যস্থ, কুণালকে ফুল দিলেন দেব

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেব-কুণাল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas)। শুক্রবার টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে...

ফর্ম ফিলাপ পর্বে চা শ্রমিকদের বাড়ি যান: বিশেষ নির্দেশ অভিষেকের

জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে ভোটাদের ন্যায্য ভোটার হিসাবে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানোর পথ। একদিকে ভোটার তালিকায় নাম থাকা নিয়ে নথি...

গোল করতে ব্যর্থ দুই দলই, মোহনবাগানকে টেক্কা দিয়ে সুপার কাপের সেমিতে ইস্টবেঙ্গল

সুপার কাপের ডার্বি ড্র। খেলার ফল ০-০। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে (Super CUP)সেমিফাইনালে চলে গেল ইস্টবেঙ্গল। বিদায় নিল...