বাংলাদেশের তথাকথিত জুলাই বিপ্লবের ১৫ মাস পর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগের (Awami Leage) সভানেত্রী শেখ হাসিনা (Shek Hasina)। একই সঙ্গে এই প্রথম তিনি বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা দায় কার্যত স্বীকার করলেন। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি জানান, নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ তিনি দেননি।

গতবছর ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্টের মধ্যে বাংলাদেশে (Bangladesh) বৈষম্যের বিরোধিতায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কমপক্ষে ১৪০০ জন প্রাণ হারান। কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। সেই সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের তৎকালীন নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালানোর কারণেই প্রাণহানি হয়েছে। এই তথ্য অবশ্য মানতে নারাজ হাসিনা। তাঁর অভিযোগ বাংলাদেশে (Bangladesh) কেয়ারটেকার মহম্মদ ইউনূস সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জকে ‘ভুয়ো তথ্য’ দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া হিসেবের থেকে এই তথ্য অনেক বেশি। আর হতাহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামি লিগের কর্মী-সমর্থকেরাও বহুল সংখ্যায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

গণ অভ্যাত্থানের জেরে গত বছরের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) পদে ইস্তফা দিয়ে ঢাকা থেকে দিল্লি চলে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তখন থেকে এদেশেই ‘অজ্ঞাতবাসে’ আছেন তিনি। এর আগে কয়েকবার তাঁর লিখিত ও অডিও বার্তা প্রকাশ্যে এলেও চলতি সপ্তাহ প্রথম ইমেলে তিন সংবাদমাধ্যম- রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময়কার প্রাণহানির দায় পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপর চাপিয়েছিলেন কাঁধে। এমনকী, নাম না করে ‘বিদেশি চক্রান্ত’-এর অভিযোগও করেন তিনি। দায়ী করেন আন্দোলনকারীদের একাংশকে।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সুর বদলে নিজের দায়ের কথাও স্বীকার করেন হাসিনা। আপনি কি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র দ্বারা সংঘটিত হিংসার দায় স্বীকার করেন? জবাবে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের নেত্রী হিসেবে, আমি চূড়ান্ত ভাবে নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করি।“ হত্যাকাণ্ডের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করে হাসিনার মন্তব্য, “আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলাম, এই অভিযোগ প্রাথমিকভাবে ভুল।“

হাসিনা বলেন, “সেই সময় কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে হিংসা রুখতেই পদক্ষেপ করেছিল নিরাপত্তাবাহিনী। নিরাপত্তাবাহিনীর কিছু সদস্য যেভাবে হিংসার বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিলেন তা অবশ্যই ভুল ছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তাদের তরফে নেওয়া সিদ্ধান্ত সৎ উদ্দেশে ও প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যেই নেওয়া।” একইসঙ্গে হাসিনা বলেন, “যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের জন্য আমি শোকাহত। দেশের নেত্রী হিসেবে সেই মৃত্যুর দায় আমি নিচ্ছি। তবে আমি নিরাপত্তাবাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিইনি।”

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে খবর। তবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে হাসিনার। তিনি বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচন যদি হয়, তাহলেও এটি বৈধ হিসেবে স্বীকৃত হবে না কারণ আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

নিজের আমলে ভোটে কারচুপির সব অভিযোগ খারিজ করে আওয়ামি লিগ প্রধান বলেন, “২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আওয়ামি লিগ জনগণের ভোটে ৯ বার ক্ষমতায় এসেছিল, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো ক্ষমতা দখল করে নয়। নির্বাচনী স্বচ্ছতা রক্ষায় আমরাই ছবি-সহ ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স চালু করেছিলাম। ১৯৭০-এর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে নির্বাচন জালিয়াতি হয়েছিল, নয়া ব্যবস্থায় তা বন্ধ করা হয়।“

তাঁর সরকার ও দলের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক তছরূপের অভিযোগও উড়িয়ে দেন হাসিনা। এইসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মোট বাজেটই এত টাকা নয়। যদি এত টাকা লুঠ হত তবে গোটা দেশের অর্থনীতি ধসে যেত। অথচ আমার আমলে অর্থনীতি ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে। আইএমএফ-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের সেই স্বীকৃতি দিয়েছে।” পাল্টা ইউনুসের বিরুদ্ধে হাসিনার অভিযোগ, “১৯৯০ সালে ইউনুস মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর নামে হাজার হাজার কাঠা জমি। একাধিক ব্যাঙ্কে ৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তোলে না। কারণ ওর পিছনে ওঁর বিদেশি বন্ধু ক্লিনটন (আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটন) রয়েছেন।“

–

–


