শহরে এসেছিল দেশ বিদেশের ছবি। এক সপ্তাহ ধরে জমল সিনে আড্ডা। নানা ভাষার সিনেমা দেখে উচ্ছ্বসিত সাধারণ দর্শক থেকে সিনেবোদ্ধারাও। শেষ লগ্নেও ছিল চমক উদ্বোধনের পর সমাপ্তিতেও সিনে প্রেমীদের উৎসাহ দিতে হঠাৎ হাজির বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দেশ বিদেশের অতিথিদের ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। উৎসবের মধ্যে দিয়ে বাংলার সৃষ্টিশীল ভাবনার কথা তুলে ধরেন সকলের সামনে। আভাস দেন আগামী বছরের চমকেরও।
কখনও গানের সুরে সিনেমার কথা, কখনও শতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলিতে শিল্পী প্রণাম। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে আট দিন ধরে মহানগরীর বিভিন্ন সিনেমা হলে নানা ভাষার ২১৫টি ছবির প্রদর্শনীতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় বুঝিয়ে দিল বিনোদন জগতের (Entertainment Industry) সঙ্গে এ শহরের টান অনবদ্য। থিম কান্ট্রি পোল্যান্ডকে (Poland) মাথায় রেখে পোলিশ অ্যানিমেটেড সিনেমা হোক বা পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ফরাসি, মার্কিন, অস্ট্রেলিয়ান কিংবা জার্মান চলচ্চিত্র – সব বয়সীরাই শীতের আমেজে সিনেমা দেখেছেন চুটিয়ে। তবে এবার সাঙ্গ হল পালা, এল বিদায় বেলা। রাজ্য সঙ্গীত দিয়ে শুরু হল সমাপ্তি অনুষ্ঠান। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর দীক্ষামঞ্জরীর ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে উদ্ধোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন। যেখানে কবিগুরুর গান থেকে শুরু করে বাংলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ছবি ধরা পড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় – সুরে তৈরি গানে শিল্পীদের অসামান্য নৃত্যশৈলীতে।রবীন্দ্র সদন (Rabindra Sadan) প্রেক্ষাগৃহে এদিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, সাংসদ মহুয়া মৈত্র, তাঁর স্বামী পিনাকী মিশ্র, অভিনেতা দেব, সুরকার শান্তনু মৈত্র, পরিচালক গৌতম ঘোষ, অরিন্দম শীল, হরনাথ চক্রবর্তী-সহ বিশিষ্টরা। তারকাদের উপস্থিতিতে কৃতিদের স্বীকৃতি, সৃজনশীল ভাবনাকে কুর্নিশ আর গুণী সংবর্ধনায় ঝলমলে ৩১-তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (31st Kolkata International Film Festival Closing Ceremony) বর্ণময় সমাপ্তি অনুষ্ঠান।
চলতি বছরের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (31st Kolkata International Film Festival) শেষ দিনে কিংবদন্তি ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে কাজ করেছেন যে শিল্পীরা তাঁদের সম্মানিত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পরিচালক পুত্র ঋতবান ঘটক, যুক্তি তক্কো গপ্পো অভিনেতা সুগত বর্মন, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমার প্রযোজক হাবিপুর রহমান খান, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্টরা।
এবছরের সিনে উৎসব ১৮ ভারতীয় ভাষা এবং ৩০টি বিদেশি ভাষার মোট ২১৫টি সিনেমা কুড়িটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হল। যার মধ্যে ডকুমেন্টারি, বেঙ্গলি প্যানোরমা, ভারতীয় ভাষায় সেরা ছবির প্রতিযোগিতা ছিল বেশ মনোগ্রাহী। উৎসবের শেষ দিন ঘোষিত বিজয়ীদের নাম।
৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫- এ কারা পেলেন সেরার পুরস্কার-
গোল্ডেন রয়াল বেঙ্গল টাইগার পুরস্কার (Golden Royal Bengal Tiger Award)
- * সেরা তথ্যচিত্র মূলক ছবি (স্পেশাল জুরি পুরস্কার) : জিলিপিবালার বন্ধুরা, মাই লাস্ট ফেস কুংবারা
- * সেরা তথ্যচিত্র মূলক (পুরস্কার মূল্য ৩ লক্ষ টাকা) : বিজয়ী যাপনের পটকথা
- * সেরা ভারতীয় স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি (স্পেশাল জুরি পুরস্কার) : কুয়াশে কি গীত, অপার্থিব
- * সেরা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি (পুরস্কার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা): নিঙ্গমা থ্রু হার আইস
- * বেঙ্গলি প্যানোরামা: সেরা ছবি (পুরস্কার মূল্য ৭.৫ লক্ষ টাকা): – পড়শি
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা -ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজস:
- * সেরা পরিচালক (পুরস্কার মূল্য ২১ লক্ষ টাকা) : ললিত রথনায়কে
- * সেরা ছবি (পুরস্কার মূল্য ৫১ লক্ষ টাকা) : To The West in Zapata
* FEPRESCI লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার: গৌতম ঘোষ
* FEPRESCI স্পেশাল জুরি পুরস্কার: To The West in Zapata
সেরা এশিয়ান ফিল্ম ( NETPAC Award) :
* সেরা ছবি – ভিক্টোরিয়া
হীরালাল সেন মেমোরিয়াল পুরস্কার
- * ভারতীয় ভাষায় সেরা ছবি: জুরি পুরস্কার – কাঙ্গবো আলোতি (The Last Path)
- * সেরা পরিচালক (পুরস্কার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা) : প্রদীপ কুরবা
- * সেরা ছবি পুরস্কার (পুরস্কার মূল্য ১০ লক্ষ টাকা) : শেপ অফ মোমো
সময় ফুরোলো, নিভছে আলো। রবীন্দ্রসদনে হাজার কোন সিনেমা দেখার পালা নেই। অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহে অবশ্য এবছরের কিফের (KIFF) শেষ ছবিগুলি দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন। কেউ মজেছেন সেলফিতে, সিনেমা দেখার ফাঁকে কারোর হাতে চা -ফিশ ফ্রাই। কথাতেই আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফিল্মোৎসবও যেন এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বিগত কয়েক বছরে। শহরের উষ্ণতার পারদ নিম্নমুখী, কিন্তু নন্দন- রবীন্দ্রসদন চত্বর গমগম করছে এক গাল হাসি আর একরাশ আনন্দে মাখা ভিড়ের মাঝে। জীবনের জাগতিক সব সমস্যাকে কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে এভাবেই লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের দুনিয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (KIFF)। প্রতিবারের মতো এবারও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে নির্বিঘ্নে সুষ্ঠুভাবে এত বড় একটা জনসমুদ্রে ভরপুর সিনে উৎসব সফলভাবে পরিচালনা করে বিনোদন প্রেমীদের ‘স্মরণীয় আট দিন’ উপহার দিল রাজ্য সরকার ও চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি।
আসছে বছর আবার হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আরও বড় কিছু হবে।
