কংগ্রেসের (Congress) হাত ধরলেই কি ভরাডুবি? ফের আরেকবার প্রশ্ন উঠল বিহার নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে। আর তার সঙ্গে এটাও প্রমাণিত বিজেপির রথ থামতে একমাত্র সক্ষম তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। তৃণমূলের মতে, তিনি শুধু লোকসভার দলের নেতাই নন, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হওয়ারও যোগ্যতম ব্যক্তি।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে NDA-র বিপরীতে মহাগঠবন্ধন হয়। তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) কথায়, সেখানে নৈবেদ্যের কদমার মতো উপরে থেকেও কোনও সুবিধা করতে পারেনি কংগ্রেস। নিজেদের বড়দল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও দায়িত্ব নিয়ে জোটকে জেতানোর ক্ষমতা নেই তাদের। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের (Congress) সব থেকে বড় স্টার, লোকসভায় বিরোধীদলের নেতা রাহুল গান্ধীরও (Rahul Gandhi) বিহারের রাজনীতিতে কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই৷ শুক্রবার দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জন্মবার্ষিকীতে কংগ্রেসের এই ভরাডুবি কার্যত খাদের কিনারে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালো শতাব্দী প্রাচীনদলকে। বিহারে ফলাফল প্রমাণ করল যত দিন যাচ্ছে ততই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে কংগ্রেস।

প্রথমে মহারাষ্ট্র (Maharasta), তারপর হরিয়ানা (Haryana), তৃতীয় দিল্লি (Delhi) ও অবশেষে বিহার-বিগত দেড় বছরে পরপর চারটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠা তো দূর, পায়ের তলার জমিই শক্তি করতে পারছে না কংগ্রেস। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার শুক্রবার স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাদের দলের পায়ের তলা থেকে মাটি পুরোপুরি সরে গিয়েছে৷ তা না হলে বারবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেসকে এই ভাবে শোচনীয় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হত না বলেও সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন মণিশঙ্কর আইয়ার৷বাস্তবে মাটিতে তার উদাহরণ বিহার ভোটের জনাধার। রাহুল গান্ধীর ভোটাধিকার যাত্রায় কোনও প্রভাব বিহার নির্বাচনের ফলে পড়েনি। বুথ ফেরত সমীক্ষাতে বিভিন্ন সংস্থাই এগিয়ে রেখেছিল এনডিএ জোট-কে। কিন্তু তা বলে কংগ্রেসের এত খারাপ ফল হবে, সেটা বোধহয় তারাও ভাবেনি। পূর্নিয়া, বাকা, ভাগলপুর, মুজফফরনগর,দারভাঙা,নালন্দা ও গয়ার কোন আসনেই কংগ্রেস জিততে পারেনি।

তাত্পর্যপূর্ণ হল, দিল্লির বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেননি দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arabinda Kajriwal)৷ বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার পরে সিপিএম (CPIM) শূন্য থেকে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে৷ এই উদাহরণ সামনে রেখেই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন কেজরিওয়াল৷ যদিও তারপরেও তাঁকে ডুবতে হয়৷ দিল্লির ভোটে কংগ্রেসেরই কাটা ভোটের মার্জিন কাজে লাগিয়ে জিতে যায় বিজেপি৷ এর পরেও বিহার বিধানসভার ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট গঠন করেছিল আরজেডি৷ তারই ফলস্বরূপ বাস্তবিক ভাবে এখন তাদের হাতে সম্বল শুধুই ‘লণ্ঠন’৷
আরও খবর: মমতার পথে হেঁটেই নীতীশের জয়! কী বলছে রাজনৈতিক মহল

একই সঙ্গে এই ফল প্রমাণ করেন বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলই একমাত্র শক্তি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন, জনমুখী প্রকল্প, সাম্য ও ঐক্যের ফলেই বাংলায় দাঁত ফোটাতে পারছে না ধর্মীয় তাস খেলে ভোটে জেতা বিজেপি। তবে, বিহারের ভোটে নিজেদের এজেন্সিকে (পড়ুন নির্বাচন কমিশন) মাঠে নামিয়ে বিজেপি কতটা ভোটচুরি করেছে তার বিশ্নেষণ আগামী দিনে হবে। কারণ, এসআইআর-এর নামে ভোটার লিস্টে কারচুপির অভিযোগ বিহার ভোটে ছিল। তবে, তার বিরুদ্ধে ভোটের আগেই তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলনে নাম উচিৎ ছিল মহাগাঠবন্ধনকে। যেটা বাংলায় এখন থেকেই শুরু করেছেন মমতা-অভিষেক। এই ফল দেখে রাজনৈতিক দলের একাংশের মতে, কংগ্রেস নয়, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রোখার ক্ষমতা একমাত্র রয়েছে তৃণমূলের।

–

–

–

–

–


