সবকিছু ভারতেই তৈরি হবে। ভারতই হবে উৎপাদক। গোটা বিশ্ব হবে তার বাজার। এই লক্ষ্য স্থির করে আত্মনির্ভর ভারত-এর কল্পনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কল্পনা যে কল্পনাতেই রয়ে গেল, বাস্তবায়িত হল না, তা স্পষ্ট কেন্দ্রের সরকারের রিপোর্টেই। এক আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক (tariff) চাপাতেই বেলাইন মোদির আত্মনির্ভর (Atmanirbhar Bharat) গাড়ি। দোসর আমেরিকা (USA) থেকে বিপুল সোনা-রুপো আমদানি। যার জেরে মাত্র ছয় মাসে ডলার (dollar) পিছু টাকা দাম কমল তিন টাকার বেশি।

ভারতের সাম্প্রতিক অক্টোবর মাসের পরিসংখ্যান বলছে গত একবছরে সর্বনিম্ন ভারতের রফতানির (export) হার। ভারতে তৈরি বা উৎপাদিত সামগ্রী রফতানি এক বছরে কমে গিয়েছে ১১.৮ শতাংশ। অবশ্যই তার জন্য দায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) লাগু করা ৫০ শতাংশ শুল্ক। যার জেরে ভারতের সবথেকে বড় বাজার – মার্কিন বাজার যে সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা অনেকাংশে হারিয়েছেন, তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে।

মূলত যে সব ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের নির্ভরযোগ্য বাজার ছিল আমেরিকা, রফতানির ক্ষেত্রে সেই সব বাজারই সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের বস্ত্রশিল্পের (textile) রফতানি (export) কমেছে ১২.৮৮ শতাংশ। ভারতের জনপ্রিয় হ্যান্ডলুমের (Handloom) বাজার পড়েছে ১৩.৩১ শতাংশ। এমনকি ভারতে তৈরি সুতোর রফতানি কমেছে ১১.৭৫ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রীর রফতানি কমেছে ১৬.৭১ শতাংশ। ভারতের অলঙ্কার সামগ্রীর (gems and jewelry) রফতানি কমেছে ৩১ শতাংশের কাছাকাছি।

দুঃখের বিষয় এই ধাক্কা লাগার পরও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক থেকে এমন কোনও সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যায়নি যাতে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পুণরায় স্বাভাবিক হয়ে ভারত তার বাজার ফিরে পায়। অথবা দেশের বিপণন মন্ত্রকও এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি যাতে আমেরিকায় হারানো বাজার ভারতীয় ব্যবসায়ীরা অন্যত্র ফিরে পান। গোটা দেশে আত্মনির্ভর ভারত-এর বুলি কপচিয়ে আদতে মোদি দেশের মাল বাইরে বিক্রি নিয়ে যে এতটুকুও চিন্তিত নন, তাঁর বাণী যে শুধু বাণীতেই সীমাবদ্ধ, তা এতেই প্রমাণিত।

তবে শুধুমাত্র রফতানি পড়ে যাওয়াই টাকার মূল্য এভাবে পড়ে যাওয়ার পিছনে দায়ী নয়। ভারত এই এক বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ আমদানি বাড়িয়েছে। গত এক বছরে বিদেশ থেকে আমদানির (import) পরিমাণ ১৬.৬৩ শতাংশ শুধুমাত্র বাড়িয়েই দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকা (USA) থেকেই আমদানি বেড়েছে ১৩.৮৯ শতাংশ। যে আমেরিকা ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে, তার থেকেই জিনিস কেনায় ঝোঁক বেড়েছে ভারতের। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আদতে নিজের দেশের সামগ্রী বিক্রি করার যে বাজার ধরার চেষ্টা করছিলেন, তাতে তিনি সফল হয়েছেন।

আরও পড়ুন : ভারতের বিমান ধ্বংসের মিথ্যে প্রচার চিনের: ট্রাম্পকে মিথ্যে প্রমাণ করে রিপোর্ট মার্কিন সংস্থার!

আমদানি করা জিনিসের মধ্যে একটা বড় অংশ সোনা ও রুপোর আমদানি। পরিসংখ্যান বলছে গত অক্টোবরের থেকে তিনগুণ বেশি সোনা কেনা হয়েছে চলতি অক্টোবরের মধ্যে। একইভাবে রুপো কেনার পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণ। যা থেকে স্পষ্ট বাইরের দেশের ধাতুর উপর দেশের অর্থনীতিকে কার্যত বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে বর্তমান নরেন্দ্র মোদি পরিচালিত কেন্দ্রের সরকার।

–

–

–

