রাজ্যের ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে, হেরিটেজ প্রকল্পগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং কারিগরি পরামর্শের কাজে মোট ২৭টি বেসরকারি বাস্তুকার ও পরামর্শদাতা সংস্থাকে এমপ্যানেল করা হয়েছে। এই সংস্থাগুলি আগামী তিন বছর রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক সাইটগুলির সুরক্ষায় কাজ করবে।
জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন অ্যাক্ট ২০০১ এবং ২০০৪ সালের রেগুলেশন মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্ক্রিনিং কমিটির নির্বাচনের ভিত্তিতে সংস্থাগুলিকে দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে— ‘ক্যাটাগরি এ’-তে ১৭টি এবং ‘ক্যাটাগরি বি’-তে ১০টি সংস্থা। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই ও হায়দ্রাবাদের অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা সংস্থাগুলিও এই তালিকায় রয়েছে।
সংস্থাগুলির মূল দায়িত্ব হবে হেরিটেজ ভবনের বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংস্কারের নকশা প্রস্তুত এবং মাঠপর্যায়ে কাজের তদারকি। কোনও ঐতিহাসিক স্থাপনার সংস্কারে যাতে তার আদি রূপ, পরিবেশগত ভারসাম্য ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই নির্দেশিকাও স্পষ্টভাবে বেঁধে দিয়েছে সরকার। কাজকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার, পুনর্গঠন, প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রাচীন উপাদান রক্ষাই অগ্রাধিকার, আর পুনর্গঠনে প্রয়োজনে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন উপকরণ ব্যবহারের অনুমতি থাকবে।
পরিকল্পনার আর্থিক দিকেও স্বচ্ছ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট খরচ অনুযায়ী পরামর্শদাতাদের ফিজ নির্ধারণ করা হবে—এক কোটি টাকার প্রকল্পে ২.৭৫ শতাংশ হারে ফিজ, বড় প্রকল্পে সেই হার ধাপে ধাপে কমবে। ল্যান্ডস্কেপিংয়ের জন্য আলাদা ফিজ কাঠামো রাখা হয়েছে। প্রাথমিক স্কেচ, ডিপিআর জমা, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত তদারকি—এই ধাপ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। অপর রাজ্যের প্রকল্পের ক্ষেত্রে যাতায়াত ও থাকার খরচের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের মতে, এতদিন বহু ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংস্কার কাজ থমকে যেত সঠিক কারিগরি পরামর্শের অভাবে। এবার অভিজ্ঞ ২৭টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের অবহেলিত স্থাপত্য-সম্পদ নতুন জীবন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ দপ্তরের অনুমোদনের পর থেকেই এই তালিকাভুক্তি কার্যকর হয়েছে, এবং রাজ্যের হেরিটেজ সংরক্ষণে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- গ্রুপ পর্বেই ভারত-পাক, কোন কোন মাঠে খেলবেন সূর্যরা? জানুন বিস্তারিত
_
_
_
_
_