কেন্দ্রে বিজেপি সরকার। মুকুল শাসক দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। নারদ-তদন্তে CBI এই মুকুল রায়কে তলব করে হেফাজতে থাকা পুলিশকর্তা মির্জার মুখোমুখি বসতে বাধ্য করেছে। CBI জানতে চাইছে, মুকুলের হয়ে টাকা তোলার বিষয়ে
মির্জার বয়ান কতদূর ঠিক। মুকুল রায়ের মতো অভিজ্ঞ এবং পরিচিত বিজেপি নেতাকে CBI দুর্নীতির অভিযোগে জেরা করছে, বিজেপির পক্ষে এটা ভালো বিজ্ঞাপন নয়। বিশেষত, বিজেপি যখন একুশের ভোটে ক্ষমতা দখলের দাবিদার।

● মুকুল রায়ের বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’ চলছে। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বঙ্গ-বিজেপির ছোট-বড় সব নেতার উচিত ছিলো তাঁর পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তেমন হয়নি। শনিবার মুকুল কার্যত একাই যান নিজাম প্যালেসে। ছোটমাপের কোনও নেতাকেও সঙ্গে দেখা যায়নি।


● মুকুলের ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব তাহলে আজ বিজেপিই খাচ্ছে না। ফলে আজ তিনি একাকী, নিঃসঙ্গ। এর অর্থ এটাই।

● এমনিতেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় মুকুল রায় বলেছিলেন সঙ্গে তৃণমূলের অজস্র নেতা আসছেন। কেউ আসেনি। যারা বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের 90% আজ, এখন মুকুলের ‘বিপদে’ গা-ঢাকা দিয়েছেন।


আরও পড়ুন – নারদ তদন্তে মুকুল-মির্জাকে মুখোমুখি বসিয়ে তদন্ত সিবিআইয়ের

● মুকুলকে সামনে রেখে গত দেড়-দু’বছর ধরে একদল স্বঘোষিত বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় একমাত্র মুকুলের জয়গান গেয়েছে। বিজেপির দ্বিতীয় কোনও নেতা সেখানে স্থান পাননি। নিরাপদ দূরত্বে থেকে এরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রোজ বাঘ মেরেছে মুকুলের ছবি ব্যবহার করে। এরাই বঙ্গ-বিজেপিতে মুকুলকে একঘরে করে দেয় নির্বোধ পোস্ট করে। আজ, যখন তথাকথিত ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’-এর শিকার হয়েছেন বলে মুকুল দাবি করছেন, তখন এই অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মুকুল-প্রেমীদের উচিত ছিলো, সোশ্যাল-মিডিয়ায় এর প্রতিবাদে ঝড় তুলে দেওয়া। কোথায় কী? এদের এক-আধজনকে দেখা যাচ্ছে মূল বিষয় থেকে একশো হাত সরে দার্শনিক-ভাষায় হাস্যকর পোস্ট করছেন। এরাও আজ মুকুলের ‘বিপদে’ প্রকাশ্যে পাশে নেই। আজ মুকুল রায়ের ভেবে দেখা উচিত, কোন বৃহন্নলা-বাহিনীকে তিনি এতদিন অর্থ দিয়ে পুষেছিলেন। আজ তাঁর একা হওয়ার কথা তো ছিলো না।

● বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবারের কিছু ফেসবুক সম্বল-নেতা, এতদিন মুকুল রায়ের মধ্যে একজন তেণ্ডুলকর খুঁজে পেয়ে এতদিন বাঘ মেরে গিয়েছেন। আজ তাঁরাও বেপাত্তা। মুকুল তো নারদ-দুর্নীতি মাথায় নিয়েই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাহলে সেদিন যদি মুকুল ‘ভালো’ হন, আজ ‘মুকুল ‘অস্পৃশ্য’ কেন ? এই ফেসবুক সম্বল-‘নেতা’-রা নীরব কেন?

তাহলে কি মুকুল-নৌকার ফুটো দিয়ে জল ঢুকছে দেখেই সব ইদুর পালালো?

কারন যাই হোক, বাস্তব এটাই, আজ এই মুহূর্তে বিজেপির জাতীয় নেতা মুকুল রায় দলে নির্বান্ধব, নি:সঙ্গ। ফের মুকুল রায়ের চারপাশে দলের ‘ভিড়’ আদৌ দেখা যাবে কি’না, তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলবে।

আরও পড়ুন – মুকুল গড়ে ভাঙন, পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলে ফিরলেন 100 কর্মী
