প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের বলব এক শিক্ষিকার গল্প

আজ একটা গল্প বলব পাঠকদের। এ গল্প আমার আপনার সকলের। এ গল্প আমাদের সন্তানদের। আমাদের অভিভাবকদের। স্থান-কাল-পাত্র আলাদা হতে পারে, কিন্তু যুগে যুগে একই ঘটনা। শুধু বলব, একটু মন দিয়ে পড়তে আর পড়ার পর যদি জীবনে সেটা একটু প্রয়োগ হলেও প্রয়োগ করা যায় তাহলে অনেকের সন্তানই আত্মহনন বা হতাশার পথ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাবে।

গল্প এক শিক্ষিকার। নাম কারেন লিউই। বয়স ৪৬। ওকলাহোমার কলিং বেল মিডিল স্কুলের শিক্ষিকা। তো তাঁর একদিন দায়িত্ব পড়ল স্কুলের সবচেয়ে ‘বজ্জাত’ দুটি ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার। তো, তারা বজ্জাত কেন? তারা নিচু ক্লাস বা উঁচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করা, পিছনে লাগা, বই ছিঁড়ে দেওয়া, টিফিন খেয়ে নেওয়া, দৈনিক রুটিন। আর তাতে বিরক্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

ক্লাসে বিস্তর হইচই, চেঁচামেচি। ঢুকলেন ম্যাডাম কারেন। সেভেন-এইট একসঙ্গে বসে। ক্লাস চুপ করল, তবে ফিসফাস গুঞ্জন চলতে থাকল। সবাই ভাবছে ম্যাডাম তাদের কী শাস্তি দেয়, কী করতে বলে! ম্যাডাম উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, বয়েজ অ্যান্ড গার্লস, আজ আমরা নতুন এক খেলা খেলব। খেলা? সবাই ভেবেছিল শাস্তির কথা, আর ম্যাডাম বলেন কিনা খেলার কথা! অবাক কাণ্ড! কারেন জিজ্ঞাসা করলেন, বোঝা’ কথার অর্থ জানো? কেউ বলল স্কুল ব্যাগের বোঝা, কেউ বলল মাথার বোঝা, আরও অনেক কিছু। সন্তুষ্ট না হয়ে কারেন বললেন আজ আমি তোমাদের ‘বোঝা’ কথার অর্থ বোঝাব। পড়াশোনা হবে না বুঝতে পেরে পড়ুয়ারা হইহই করে উঠল।

ম্যাডাম বললেন তোমরা প্রত্যেকে এক টুকরো কাগজ হাতে নাও সেই কাগজে তোমাদের জীবনের সবচেয়ে দুঃখের ঘটনার কথা লিখবে, কিন্তু নাম লিখবে না। তারপর ওই চিরকূটগুলো মুড়িয়ে ঘরের কোনে ফেলে দিয়ে আসবে। যেই বলা সেই কাজ। মিনিট দশেকের মধ্যে সব চিরকূট ঘরের কোণে। এরপর এক এক করে প্রত্যেককে বললেন একটা একটা করে চিরকূট কুড়িয়ে আনতে। বললেন, কী লেখা আছে পড়…

প্রথম কয়েকটা ছিল হাসির খোরাক কেউ লিখেছে তার বিড়ালটা মোটা হয়ে গেছে বলে মন খারাপ, কেউ বলেছে স্প্যাগেটি খেতে না পারায় হতাশা। তাতে ক্লাস জুড়ে হাসির বন্যা শুরু হয়। কিন্তু তার পরেই ধীরে ধীরে গোটা ক্লাস ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। একটার পর একটা চিঠি পড়া হয়েছে আর ক্লাসে তখন পিন পতনের শব্দ। যেন প্রত্যেকের জমা কান্নাগুলো থেকে বেরিয়ে আসবে। কী ছিল সেইসব চিঠিতে? কেউ লিখেছে রোজ বাবা-মায়ের ঝগড়ার কথা, কেউ লিখেছে বাবাকে প্রশ্ন করতে গেলেই পরীক্ষার নম্বর নিয়ে খোঁটার কথা, কেউ লিখেছে ভাইয়ের ক্যান্সারের কথা, কেউ লিখেছে প্রিয় পোষ্যকে প্রতিবেশীর পিটিয়ে মারার কথা, কেউ লিখেছে বাবা মায়ের অবৈধ সম্পর্কের জেরে বাড়িতে নিত্য অশান্তির কথা, আবার কেউ খুনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করার কথা, কিংবা যৌন নির্যাতনের কথা। পড়তে পড়তে কেউ কেঁদে ফেলেছে, কেউ থেমে গিয়েছে, দুরন্ত অবাধ্য ছেলেগুলো মাথা নিচু করে বসে থেকেছে। ক্লাসে তখন ভারাক্রান্ত পরিবেশ। ম্যাডাম কারেন ওদের কাঁদতে দিয়েছেন। ওদের চুপ করে বসে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। তারপর চিরকূটগুলো একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে করে ক্লাসের সামনে তুলে ধরে বলেছেন, ফ্রেন্ডস এটার মধ্যে তোমাদের জীবনের সবচেয়ে ভারী যন্ত্রণার বোঝা গুলো রয়েছে। প্রত্যেকের যন্ত্রণার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে পলিব্যাগ। তোমরা যন্ত্রণা নিয়ে স্কুলে আস, প্রত্যেকটি পড়ুয়া স্কুলে আসে। তোমরা দেখে নাও এই যন্ত্রণা শুধু তোমাদের কারও একার নয়, সকলের। আশা করব তোমাদের এই যন্ত্রণার কথা দরজার বাইরে রাখবে। বোঝা দূরে সরিয়ে রেখে একে অপরের পাশে থাকবে। তোমাদের জন্য আমার ফোন চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকবে। শুনব তোমাদের মনের কথা। সেদিন ওকলাহোমার সেই স্কুলের শিক্ষিকা কারেন পলিব্যাগের ছবি দিয়ে পোস্ট করেছিলেন সেই ঘটনার কথা। পোস্ট চার লক্ষ মানুষ শেয়ার করেছিলেন। অনেকে চেয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। কারেন বলেছিলেন, আমার সঙ্গে নয় কথা বলুন আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে। দেখুন যাতে কোনও শিশু অকালে হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুন-মার্চের মধ্যেই বিক্রি হবে এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারত পেট্রোলিয়াম: নির্মলা সীতারামন

 

Previous articleমার্চের মধ্যেই বিক্রি হবে এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারত পেট্রোলিয়াম: নির্মলা সীতারামন
Next articleবাঁশবেড়িয়া কার্তিকপুজোতেও থিমের ছোঁয়া