Saturday, November 15, 2025

আট মাস পেরিয়েছে, লক্ষ্মী ছেলেদের অসহযোগিতায়  আদালতে চার্জশিট দিতে পারছে না পুলিশ!

Date:

Share post:

মনে পড়ে ২০১৯-এর ১০ই জুনের কথা। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শ’দুয়েক লোক নিয়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এক রোগীর পরিবার। এই ‘তাণ্ডবের’ জেরে গুরুতর জখম হয়েছিলেন পরিবহ মুখোপাধ্যায় নামে এক জুনিয়র ডাক্তার। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। এরপরই চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয় গোটা রাজ্যের চিকিৎসক মহল। এনআরএসে কর্মবিরতির মাধ্যমে জোরদার আন্দোলন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এমনকি গোটা একদিন দেশজুড়ে থমকে গিয়েছিল আউটডোরে চিকিৎসা ব্যবস্থা। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 0আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে বৈঠকে ডেকে ‘লক্ষ্মী ছেলে’ সম্বোধন করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করেন তিনি। সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয় চিকিৎসকদের নিরাপত্তা এবং ডাঃ পরিবহ মুখোপাধ্যাযয়ের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় সেই কড়া পদক্ষেপের চিহ্ন?
কারণ, ইতিমধ্যেই আট মাস পেরিয়ে গিয়েছে। সেই পুলিশি তদন্তে সাহায্যে করতে কেন একজন চিকিৎসকও এগিয়ে এলেন না? কার অঙ্গুলিহেলনে থমকে গেল তদন্তের গতি।
এনআরএস কর্তৃপক্ষর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল এন্টালি থানার পুলিশ। সেই রাতে ঠিক কী কী ঘটেছিল তা জানতে প্রত্যক্ষদর্শী জুনিয়র ডাক্তার এবং অন্যান্য কর্মীদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারী আধিকারিক। অথচ এখনও পর্যন্ত সাক্ষী দিতে একজনও এগিয়ে আসেননি বলেই দাবি পুলিশের । পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে , ওই রাতে ডিউটিতে থাকা অন্যান্য চিকিৎসকরা তো দূর অস্ত , আক্রান্ত হওয়া চিকিৎসক খোদ পরিবহ মুখোপাধ্যায়কেও বারবার ডাকা হলেও, তিনিও কোনও সাড়া দেননি। কেন আসতে পারছেন না বা কবে দেখা করতে পারবেন পুলিশকে সেই বিষয়েও কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি।
পুলিশ বলছে , প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান রেকর্ড করতে ১৬১ নং ধারা অনুযায়ী প্রায় গোটা পাঁচেক চিঠি পাঠানো হয় চিকিৎসকদের। তবুও একবারের জন্যও দেখা মেলেনি কারোর। সেই সময় আন্দোলনের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়া জুনিয়র ডাক্তাররাও এখন সাক্ষ্য নিতে নারাজ। কেউ যদি তদন্তে সহযোগিতা না করেন তাহলে কী করে হবে?”
পুলিশ সূত্রের দাবি, তদন্ত শুরুর পর আট মাস কেটে গেলেও, চিকিৎসকদের তরফে সহযোগিতা না মেলায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াতেই দেরি হচ্ছে। কিন্তু যারা নিজেরাই নিরাপত্তার দবিতে এত আন্দোলন করলেন, পুলিশি তদন্তে সাহায্য করতে এতো অনিহা কেনও তাঁদের? পরিবহর বিচারের দাবিতে যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের অন্যতম মুখ ডাঃ অর্চিষ্মান ভট্টাচার্য পুলিশের দিকেই পাল্টা আঙ্গুল তুলে দোষারোপ করেছেন । তাঁর দাবি, “তদন্তকারী আধিকারিকরা আক্রান্ত চিকিৎসকের মনোবল যোগাতে পারেননি, এটা পুলিশের ব্যার্থতা! এতো মাস হয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ কেনও সেদিনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি”?
ডাঃ অর্চিষ্মান ভট্টাচার্যের প্রশ্ন,”অভিযুক্তরা প্রকাশ্য দিবালকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছে, শুধু পুলিশই তাঁদের ধরতে পারছে না? সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ সহ যথেষ্ট প্রমাণ পুলিশের কাছে আছে।”
তাঁর অদ্ভূত যুক্তি ,”ঘটনার এতদিন পর আমরা সবাই কাজে ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি, আমি অন্তত পুলিশের থেকে কোনও নোটিশ পাইনি, অন্য কে পেয়েছে জানিনা।”
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি ডাঃ অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, “হতে পারে কোনও রাজনৈতিক চাপ কাজ করছে। ডাক্তাররা মার খেয়ে সাক্ষ্যই যদি না দিতে চান তাহলে তো লড়াইয়ের আগেই হেরে যেতে হবে আমাদের!” চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সভাপতি ডঃ সজল বিশ্বাস বলেন, “আক্রান্তের তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত ছিল। তাঁরা কেন এমন করলেন খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, এটা মোটেই ঠিক হয়নি, আমি যোগাযোগ করে দেখবো।”

spot_img

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...