Friday, November 7, 2025

ফের কাঠগড়ায় সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো, পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যু বৃদ্ধার

Date:

Share post:

বৃদ্ধার পরিবার ভরসা রেখেছিলেন সরকারি হাসপাতালের ওপর। অর সেটাই শেষপর্যন্ত অভিশাপ হয়ে নেমে হল বৃদ্ধার জীবনে।
বাইপাস সার্জারির জন্য আড়াই বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন । ওয়েটিং লিস্ট থেকে অস্ত্রোপচারের জন্য দিন মেলেনি বৃদ্ধার। আড়াই বছর পর বৃহস্পতিবার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন বৃদ্ধা। তাঁকে নিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে পরিবারের লোকজন ঘুরলেন পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে। আর সব জায়গায় একই বক্তব্য , বেড নেই, অন্য জায়গায় যান। এই হয়রানির পরে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার। এরপরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বৃদ্ধার পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৭ সালে । হাবরার বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী সন্ধ্যা রায়ের বাইপাস সার্জারি হওয়ার কথা ছিল। পরিবারের আত্মীয়দের অভিযোগ, গত আড়াই বছর ধরে এই সার্জারির জন্য সময় বের করতে পারেনি এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যতবারই যোগাযোগ করা হয়েছে ডেট পাওয়া যায়নি। ওয়েটিং লিস্টে নাম দেখেই সান্ত্বনা পেতে হয়েছে । এমনকি বেডও পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করেই গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হার্ট অ্যাটাক হয় সন্ধ্যাদেবীর। হাবরার বাড়িতেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরিবারের লোকেরা তাঁকে প্রথমে নিয়ে যান হাবড়া হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে জানানো হয়, অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নেই। তাই তাঁকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন বৃদ্ধাকে নিয়ে দৌড়ান বারাসত হাসপাতালে। সেখানে জানানো হয়, কার্ডিওলজির কোনও চিকিৎসার পরিকাঠামো সেখানেও নেই। রোগীকে কলকাতার কোনও যে কোনও মেডিক্যাল কলেজে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে রেফার করে দেওয়া হয়।
পরিবারের অভিযোগ , বৃহস্পতিবার রাত আটটার সময় তাঁরা এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে ইমারজেন্সি বিভাগ থেকে কার্ডিওলজি বিভাগে নিয়ে যেতে বলা
হয় সন্ধ্যাদেবীকে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, সন্ধ্যাদেবীর কার্ডিওলজির কোনও সমস্যা নেই। এছাড়া কার্ডিওলজিতে বেড খালি নেই। ফের তাঁকে নিয়ে আসা হয় ইমারজেন্সিতে। সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, সন্ধ্যাদেবীর কার্ডিওলজিরই সমস্যা রয়েছে। তাই তাঁকে দ্রুত কোনও কার্ডিওলজি বিভাগে না ভর্তি করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সেখানে থেকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৃদ্ধাকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলেও, পাঁচ হাসপাতালের টানাপোড়েনের ধকল তিনি নিতে পারেন নি। যার নিট ফল, শেষপর্যন্ত মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধার । এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন । তাদের অভিযোগ, যা আর্থিক অবস্থা বৃদ্ধার পরিবারের, তাতে সরকারি হাসপাতালের ওপর ভরসা রাখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না । আর সেটাই কাল হলো। সরকারি হাসপাতালের রেফার করার প্রবণতা যে একই আছে, এই ঘটনা ফের সামনে এনে দিল।

spot_img

Related articles

আজ স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের ফলপ্রকাশ

সুপ্রিম রায়ে চাকরি হারানো থেকে এসএসসির (School Service Commission) নতুন করে পরীক্ষার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এবার রেজাল্টের...

বলিউডে ফের শোকের ছায়া! প্রয়াত কিংবদন্তি গায়িকা – অভিনেত্রী সুলক্ষণা পণ্ডিত

বলিউডে শোকের ছায়া। প্রয়াত হিন্দি চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সুলক্ষণা পণ্ডিত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১...

ব্রিটিশ-তোষণে লেখা ‘জন গণ মন’! বিজেপি সাংসদের অপমানজনক মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ তৃণমূলের

ব্রিটিশদের তোষণ করতেই নাকি লেখা হয়েছিল ‘জন গণ মন’। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে এই ন্যক্কারজনক মন্তব্য করে ফের...

চিংড়িঘাটা মোড়ে যানজট কমাতে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ কেএমডিএ-র

ইএম বাইপাসের চিংড়িঘাটা মোড়ে দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যার সমাধানে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেএমডিএ। শান্তিনগর খালের উপর বর্তমান সরু...