বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা করোনা নিয়ে মতামতের ভিত্তিতে দুটি দলে বিভক্ত হয়েছেন। একদল বলছেন, লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব জারি করে সংক্রমণ ঠেকানো প্রয়োজনীয়। অন্যদল বলছে, মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দাও। করোনাকে নির্মূল করার পথ হল প্রাকৃতিক নিয়মে হার্ড ইমিউনিটি অর্থাৎ সামাজিক বা গণ-রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। লকডাউন স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যে, আর হার্ড ইমিউনিটির উদ্দেশ্য দীর্ঘমেয়াদি। কারণ সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকলে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।

সুতরাং রোগের ভয়ে লুকিয়ে থাকার চেয়ে রোগের মুখোমুখি হও। এর ফলে যত বেশি মানুষ সংক্রমিত হবে, ততই মানবদেহ প্রাকৃতিক নিয়মে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আরও শক্তি অর্জন করবে। এটাকেই বলে হার্ড ইমিউনিটি। এই মুহূর্তে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বকে করোনাভাইরাস এড়াতে এই হার্ড ইমিউনিটি গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। মহামারি প্রতিরোধের এই হাজার বছরের প্রাচীন প্রাকৃতিক কৌশল অনুসরণ করে একদিনও লকডাউনে না থেকে যে পথ নিয়েছে সুইডেনের সরকার। দেশের চিফ এপিডেমিওলজিস্ট বলেন, সুইডেনে ইতোমধ্যে অনেকটাই হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী স্টকহোমে ‘গণ-রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা’ তৈরি হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন তাদের সীমানা, স্কুল, বার, রেস্তোরাঁ এবং কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, সুইডিশ জনস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্লসন তখন দেশবাসীকে বলেছেন, আপনারা বাইরে বের হোন, স্বাভাবিক কাজকর্ম করুন, বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করুন। এটা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
তবে এই বিষয়ে বহু বিতর্ক আছে। কারণ একদম আনকোরা এক নতুন ও শক্তিশালী ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধক ছাড়া হার্ড ইমিউনিটির পথে লড়তে গেলে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুইডেনের মত কম জনসংখ্যা তথা কম জনঘনত্বের দেশ পরীক্ষামূলকভাবে যে কৌশল নিতে পারে তা ভারতের মত বিরাট জনবহুল ও জনঘনত্বপ্রবণ দেশে প্রাথমিকভাবে কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ফলে সামাজিক বিপর্যয় তৈরির আশঙ্কা থাকে। ঠিক সেই কারণেই প্রথমদিকে হার্ড ইমিউনিটির পক্ষে সোচ্চার হলেও করোনায় মৃত্যুমিছিল শুরু হতেই ঝুঁকি না নিয়ে লকডাউনেই যেতে হয়েছে ব্রিটেন ও আমেরিকাকে।

তবে টানা লকডাউনের পর অর্থনীতির চাপে এখন করোনাবিরোধী লড়াইয়ে সুইডেনের দেখানো পথেই হাঁটতে চাইছে বিশ্বের বহু দেশ। বুধবার থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। মক্কা-মদিনার দুই মসজিদও খোলা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৪ মে হোটেল-শপিং মল খুলে দিচ্ছে পোল্যান্ড ও ইতালি। লকডাউন কিছুটা শিথিল স্পেনেও। আগামী সপ্তাহ থেকে লকডাউন প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে গ্রিস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যেও লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, হংকং, নেপাল, ভুটানসহ আরও কয়েকটি দেশ।

