Tuesday, August 26, 2025

এ সপ্তাহেই লক্ষ ছাড়াবে, এত শিথিলতা কেন ? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক মঙ্গলবার, ১২ মে, সকাল ৮টায় জানিয়েছে, আপাতত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭০,৭৫৬, মৃত্যু হয়েছে ২২৯৩ জনের৷

গত ৬ মে, ঠিক ৭ দিন আগে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক’ই জানিয়েছিলো দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯,৩৯১ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬৯৪ জনের৷

৭ দিনে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২১, ৩৬৫ এবং ৭ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৫৯৯ জনের৷

এই হিসাবই বলছে, তিন-তিন দফার লকডাউনেও লাগাম লাগেনি করোনার গলায়৷ যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে সর্বস্তরেই আশঙ্কা, চলতি সপ্তাহেই ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে৷ সেই অনুপাতে সপ্তাহের শেষে মৃতের সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলতে পারে ৩ হাজারের গণ্ডি৷

পরিস্থিতি যথেষ্টই আতঙ্কজনক৷ ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনার প্রকোপ কমেনি, এক জায়গায় এসে থেমেও নেই, সংক্রমণের গ্রাফ এখনও উর্ধ্বমুখী৷ তাহলে কিসের ভিত্তিতে একের পর এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্র ? কোন যুক্তিতে এখনই ট্রেন-বিমান চালু করা হলো ? কেন একের পর এক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে ? কেন্দ্র এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে কোন তথ্য বা সমীক্ষার ভিত্তিতে ? কোনও রাজ্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে, নিজের হাত ধুয়ে ফেলার কেন্দ্রের ছক তো এখনই ধরা পড়ে যাচ্ছে৷
প্রথম লকডাউন ঘোষণা করার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “করোনার মোকাবিলায় আমাকে ২১ দিন সময় দিন৷ ২১ দিন লকডাউন থাকবে৷” গোটা দেশ এতে সহমত প্রকাশ করে৷ পরবর্তীকালে আরও দু’দফায় লকডাউন বৃদ্ধি পায়৷ করোনা যুদ্ধে দেশ এখন লকডাউন এর তৃতীয় ধাপে রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে এখনও বিন্দুমাত্র নিয়ন্ত্রণে আসেনি,বরং ক্রমাগত পরিস্থিতি খারাপের দিকেই এগোচ্ছে, তা কঠোর বাস্তব৷ মহারাষ্ট্র, গুজরাত,দিল্লি, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশের অবস্থা গোটা দেশকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছে৷ চেন্নাই থেকেও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে৷ শহরের কোয়েমবেডু সবজি এবং ফল বাজারকে ইতিমধ্যে হটস্পট ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের অজানা নয়, দেড় হাজারের বেশি মানুষ এই বাজার থেকেই সংক্রামিত হয়েছেন। মঙ্গলবার গোটা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০,৭৫৬৷ চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের দাবি, চলতি সপ্তাহেই সংক্রমণ লক্ষের ঘরে ঢুকে পড়বে৷ কেন্দ্রের তথ্য, মাত্র 11 দিনে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এপ্রিলে এই সংক্রমণ তুলনায় হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিলো৷ মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফ দিয়ে বেড়ে চলেছে৷ এবং মাথায় রাখতে হবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা, বিদেশ থেকে আটকে থাকা ভারতীয়দের উড়িয়ে আনা বা ট্রেন-বাস চালু হওয়ার আগেই দেশে করোনা আরও জাঁকিয়ে বসেছে৷
তাহলে, এই উড়ান,ট্রেন, বাস চালু-পরবর্তী পর্যায়ে দেশের পরিস্থিতি কোথায় যাবে, তা তো প্রধানমন্ত্রীও জানেন না৷

বাংলাকে নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, এখানে নাকি লকডাউন মানা হয় নি৷ রাজ্য সরকার নাকি করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য দেয় নি।
যদি ধরে নেওয়া যায়, এই অভিযোগ ঠিক, তাহলে বলতে হয়, মহারাষ্ট্র, গুজরাত,দিল্লি, তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে তো এই ধরনের অভিযোগই নেই, তাহলে ওই সব রাজ্যের মেরুদণ্ড করোনা এভাবে ভেঙ্গে দিলো কেন ? ওই রাজ্যগুলির থেকেও কি বাংলার করোনা পরিস্থিতি খারাপ ? কেন্দ্রের তথ্য কি বলছে ?

ভারতের করোনা পরিস্থিতি যে ক্রমাগত খারাপের দিকেই এগোচ্ছে তা একপ্রকার নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা৷ কেন্দ্রকে আজ বা কাল স্বীকার করতেই হবে, দেশের পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়৷ তাহলে লকডাউন শিথিল করা, উড়ান, ট্রেন, বাস ইত্যাদি চালানো, দোকান বাজার, শিল্প ইত্যাদি চালু করা বা ছাড় দেওয়া নিয়ে কেন্দ্র কঠোর হতে পারছে না কেন ? এসব আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের দায় নিতে কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি আছে নিশ্চয়ই ?

spot_img

Related articles

দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি-উদ্বেগ! টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে আশঙ্কা 

দুর্গোৎসবের মুখে একদিকে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডেঙ্গি সংক্রমণ রাজ্যবাসীর কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে...

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী! কিনলেন শাড়ি 

বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় এসে হঠাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মহিলাদের হাতের কাজই ঘুরে দেখলেন না, কেনাকাটাও...

ধনধান্যে ভরে, মা এসেছে ঘরে: মুখ্যমন্ত্রীর লেখা-সুরে গান এবার দুর্গাপুজোয়

বাংলা ও বাঙালির বড় উৎসব আর পুজোর গান— এক অপূর্ব মেলবন্ধন। এখন দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা...

প্রধানমন্ত্রী বাংলা ছাড়তেই জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারি তৃণমূলকে অপদস্থ করার চক্রান্ত, তোপ কুণালের      

ইডির (ED) হাতে জীবনকৃষ্ণ সাহার (Jiban Krishna Saha) গ্রেফতারি আসলে তৃণমূল কংগ্রেসকে (TMC) অপদস্থ করার চক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী বাংলায়...