লকডাউনে বিক্রি কম, তবু এখনও জনপ্রিয় চন্দননগরের জলভরা

জামাইষষ্ঠীতে জামাইয়ের সঙ্গে রসিকতা করতে আবিষ্কার হয়েছিল বিখ্যাত জলভরা সন্দেশ৷ চন্দননগরের সূর্য মোদক জমিদার বাড়ির গিন্নিদের আবদারে তৈরি করেছিলেন জলভরা৷ আজও তার সমান জনপ্রিয়তা৷ তবে প্রতি বছরের তুলনায় এবারের ছবিটা একটু অন্যরকম৷ কোরোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে অনেকেই জামাইষষ্ঠী পালন করতে পারেননি৷ তাই জলভরা বা অন্যান্য মিষ্টির চাহিদা কমেছে।

প্রায় দেড়শো বছর আগে চন্দননগরের সূর্য মোদক জলভরা সন্দেশ বানিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন৷ এমনিতে সারা বছর জামাই আদরে খামতি রাখেন না শাশুড়িরা। কিন্তু জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে মেয়ে-জামাই যখন বাড়িতে আসেন, তখন থাকে বাড়তি আয়োজন৷ এহেন জামাই আদরের দিনে একটু ঠাট্টা-তামাসা হবে না তা কি হয়? সালটা 1290 বঙ্গাব্দ৷ তেলেনিপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির গিন্নীরা কর্তাদের কাছে আবদার করলেন, জামাইষষ্ঠীতে এমন মিষ্টি পাতে দিতে হবে, যেন জামাই বোকা বনে যায় ৷ সব শুনে কর্তারা পড়লেন মহা ফাঁপড়ে ৷ জামাইকে বোকা বানানো, তাও আবার মিষ্টিমুখে? এদিকে গিন্নিদের কথাও তো ফেলা যায় না ৷ অবশেষে ডাক পড়ল মিষ্টি প্রস্তুতকারক সূর্য মোদকের। অনেক ভেবে সূর্য মোদক ও তাঁর ছেলে সিদ্ধেশ্বর তৈরি করলেন তালশাঁসের আকারে বিশেষ এক ধরনের মিষ্টি ৷ যথারীতি জামাইষষ্ঠীর দিন পঞ্চব্যঞ্জনের আহার শেষে জামাইয়ের পাতে বিশেষ মিষ্টি দিলেন শাশুড়ি মায়েরা৷ মনের সুখে মিষ্টিতে কামড় দিতেই গোলাপ জল ছিটকে গরদের পাঞ্জাবি ভিজল৷ জামাই তো লজ্জায় লাল ৷ জমিদারবাড়ির অন্দরে তখন হাসির রোল ৷ আর এভাবেই বাঙালির মিষ্টির তালিকায় যোগ হয় জলভরা সন্দেশের নাম।
সূর্য মোদক গোলাপ জল দিয়ে জলভরা সন্দেশ তৈরি করেছিলেন৷ বর্তমানে আম, স্ট্রবেরি, চকোলেটের জলভরাও পাওয়া যায় ৷ জি টি রোডের ধারে চন্দননগরের বড়বাজারে যে সূর্য মোদকের দোকান, সেটিই আসল ৷ তাঁর পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম শৈবাল মোদক এখন ব্যবসা দেখাশোনা করেন। শৈবাল মোদক জানালেন, পুরানো জলভরার স্বাদে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি ৷ আগে গুড়কে চিনির পর্যায়ে এনে তার নির্যাস বের করে দোলো বানানো হত৷ সেই দোলো ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে জলভরা সন্দেশ তৈরি হত ৷ এখন গোলাপ জল ছাড়াও আম, স্ট্রবেরি ও চকোলেটের মতো পুর ভরা হচ্ছে ৷
এবছর জামাইষষ্ঠী সেভাবে পালিত হচ্ছে না ৷ এই প্রসঙ্গে শৈবাল মোদক বলেন, এখন তাঁরা স্থানীয় ক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল৷ বাইরে থেকে ক্রেতারা আসতে পারছেন না লকডাউনের কারণে৷ চাহিদা কম থাকায় অন্য বছরের থেকে জলভরার পরিমাণ এবারে কম৷ ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব মেনে দোকানে আসছেন এবং মিষ্টি কিনছেন৷ সূর্য মোদকের জলভরা সন্দেশ 137 বছর পরেও সমান লোভনীয়৷

Previous articleগণসংক্রমণ রুখতে পরিযায়ীদের আঙুলে কালি লাগাতে চায় বীরভূম জেলা প্রশাসন
Next articleলকডাউনের জের: পেশা বদলে শ্রমিকের ভূমিকায় রাজস্থানের শিক্ষক