Thursday, August 28, 2025

করোনার জেরে রাজ্যে টান পড়তে পারে অক্সিজেনের, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

Date:

Share post:

করোনার জেরে মানুষকে যে আর কত দুর্ভোগের মুখে পড়তে হবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

এতদিন শুধুমাত্র শোনা যেত, ‘সেভ ট্রি’ বা ‘সেভ ওয়াটার’। করোনা-আবহে এখন এর সঙ্গে যোগ হল ‘সেভ অক্সিজেন’। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার জেরে এবার টান পড়তে পারে অক্সিজেনেও।

কী কারণে টান পড়বে অক্সিজেনে?

এখন কোভিড চিকিৎসার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল অক্সিজেন। তবে অক্সিজেনেরও যে অভাব হতে পারে একথা এর আগে কখনও ভাবেননি চিকিৎসকরা। তবে ইংল্যান্ড, ইতালি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। মহারাষ্ট্রেও অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মাস দেড়েকের মধ্যে বাংলাতেও এই চাহিদা দু’ থেকে তিন গুণ বেড়ে যেতে পারে। শহরের পাশাপাশি গ্রামে-গঞ্জেও পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে যে ভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের সব প্রান্তে, তা দেখে সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে প্রমাদ গুনছে অক্সিজেন উৎপাদক সংস্থারাও।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সিজেনের ব্যাপারে এখন থেকেই চিকিৎসকদের সঞ্চয়ী হতে হবে। অক্সিজেন সঞ্চয় করাই একমাত্র উপায়। অবিলম্বে অক্সিজেন অপচয় বন্ধ করাও জরুরি। আরজি কর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সেভ অক্সিজেনের ব্যাপারে খেয়াল না-রাখলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়তে হবে।’

অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা এয়ার-ওয়াটারের রাজ্যে একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটর সিটকো-র কর্তার কথায়, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও অক্সিজেনের চাহিদা কমেছে মাত্র ৪০%। অথচ এখন অন্যান্য অসুখ নিয়ে হাতেগোনা রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। জুনের শেষে বা জুলাইতে যখন সব ধরনের রোগীই ভর্তি হবেন হাসপাতালে, তখন অক্সিজেনের চাহিদা কিন্তু একধাক্কায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’

একমাত্র উপায়-

শহরের বিখ্যাত ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম করের নিদান, ‘অক্সিজেনের অপচয় অন্তত ২০% রোগীর ক্ষেত্রে হয়েই থাকে, যা বন্ধ করা সম্ভব।’ শ্বাসকষ্টের প্রায় সব রোগীকে শুরুতে অক্সিজেন দেওয়া জরুরি হলেও ভর্তির পর অন্তত ২০% রোগীর ক্ষেত্রেই হয় অক্সিজেনের চাহিদা কমে আসে অথবা দরকারই পড়ে না। কিন্তু এই ধরনের সিংহভাগ রোগীর ক্ষেত্রে অক্সিজেন চলতেই থাকে। এই রেওয়াজ বদলানোর সময় এসে গিয়েছে।’

অক্সিজেনের অপচয় বন্ধ না করলে কী হবে?

দেশের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদক সংস্থা লিক্যুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন-র মার্কেটিং হেড অনির্বাণ সেন বলছেন, ‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন ১৭ লক্ষ ঘনমিটার অক্সিজেন লাগে। সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডারের কথা না-হয় নাই ধরলাম। এখন যে ৩৯২টি ভেন্টিলেটর-যুক্ত কোভিড বেড রয়েছে, তার উপর আরও ৫০০টি ভেন্টিলেটর চালু করছে রাজ্য। প্রতিটি ভেন্টিলেটরে ঘণ্টায় যদি ন্যূনতম ৪.৫ ঘনমিটার অক্সিজেন ব্যয় হয়, তা হলেই তো নতুন ভেন্টিলেটরগুলির সূত্রে অক্সিজেনের চাহিদা আরও ১৬ লক্ষ ঘনমিটার বেড়ে যাবে।’ ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে যেহেতু রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় করোনা ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে অক্সিজেনের একটা বিরাট সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন অনির্বাণ। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘দেশে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনের যা ক্ষমতা, তাতে সমস্যা হবে না। মূল সমস্যা হবে সাপ্লাই চেনে। গ্রাম, মফফসল ও ছোট মাপের শহরে অক্সিজেন রি-ফিলিংয়ের তেমন পরিকাঠামোই নেই। এই পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের মারাত্মক চাহিদা তৈরি হলে তার সঙ্গে এঁটে ওঠা মুশকিল।’ তাঁর পরামর্শ, বিদেশের ধাঁচে মোবাইল অক্সিজেন রি-ফিলিং ব্যবস্থায় যদি সরকার ছাড়পত্র দেয়, তা হলে অবশ্য সুরাহা মিলবে অনেকটাই।

মোদ্দা কথা, এখন থেকেই অক্সিজেনের সঞ্চয় শুরু না করলে শুরু হবে সংকট।

spot_img

Related articles

সাত লুকের ‘বহুরূপ’ সোহমের, চ্যালেঞ্জ নিয়ে চমকে দিলেন অভিনেতা

যা কখনও হয়নি তা এখন হবে, এবার হবে। সেলিব্রেটিদের রিল - রিয়েলের আলাদা রূপ আর লুক নিয়ে কম...

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...