Tuesday, May 13, 2025

চিনকে হাতিয়ার করেই কি ফের কংগ্রেসের মসনদে ফিরতে মরিয়া রাহুল?

Date:

Share post:

লাদাখে ইন্দো-চিন সংঘাতের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া তথা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হঠাৎই প্রচণ্ড সক্রিয় রাহুল গান্ধী। যথারীতি এখানে তাঁর মূল প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খাতায় কলমে রাহুলের রাজনৈতিক পরিচয় এখন শুধুই কংগ্রেসের এক সাংসদ। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে কেন তাঁকেই এগিয়ে দিচ্ছে দল অথবা তাঁর বক্তব্যকে সর্বভারতীয় প্রচার পাইয়ে দিতে কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতাকে কেন গোমস্তার মত আচরণ করতে হবে এই প্রশ্ন তোলার স্পর্ধা জাগলে সেই ব্যক্তির আর যাই হোক কংগ্রেস করা হবে না। ফলে রাহুলের যুক্তিই কংগ্রেসের যুক্তি, চিন নিয়ে রাহুল যে সুরে কথা বলবেন তাই প্রতিধ্বনি করতে হবে দলের বাকিদের। চিন ইস্যুতে রাহুল এখন রোজ প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছেন, তাঁর সর্বদলীয় বৈঠকে করা মন্তব্যের ব্যাখ্যা চাইছেন, সীমান্তের অতি স্পর্শকাতর বিষয়গুলি রাজনৈতিক জনসভার বক্তৃতার মত মোদি কেন সবটাই প্রকাশ্যে বলছেন না তা নিয়ে কৈফিয়ত চাইছেন। এবং সর্বোপরি গ্রাউন্ডজিরোতে সেনাবাহিনীর নেওয়া সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। গান্ধী পরিবারের এই সদস্য কোনও গূঢ় উদ্দেশ্য ছাড়াই হঠাৎ বিদেশনীতি, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লাগাতার ‘জ্ঞান’ দিচ্ছেন এমন ভাবার কারণ নেই। কংগ্রেস দলের সভানেত্রী হিসাবে এই একই কাজ সোনিয়া গান্ধী করলে কিছু বলার থাকত না। সোনিয়া যেটুকু যা বলছেন তা রাহুলের বক্তব্যকে সাপ্লিমেন্ট করতে। তাহলে চিন নিয়ে রাহুলের এই সক্রিয়তার কারণ কী?

কংগ্রেসের নানা সূত্রেই এর ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। দলে নবীন- প্রবীণের দ্বন্দ্ব চরমে। রাহুলের আস্থাভাজনরা সোনিয়া জমানায় কোণঠাসা হয়ে মনেপ্রাণে চাইছেন রাহুল আবার দলের মাথায় বসুন। আবার সোনিয়াও চাইছেন কংগ্রেসের কর্তৃত্ব যেন গান্ধী পরিবারের বাইরে না যায়। অনেকেই বলেন, তিনি কংগ্রেসের ভবিষ্যতের চেয়েও নিজের ছেলের ভবিষ্যত নিয়েই বেশি চিন্তিত। কংগ্রেসে অনেকেই মনে করেন, এই নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বটা অাসলে একটা কৌশল। গান্ধী পরিবারের বিকল্প মুখ যাতে না থাকে সেজন্য পরিকল্পিতভাবেই এই দ্বন্দ্বটা জিইয়ে রাখা হয়। যাই হোক, এবারের পরিকল্পনাটা হল রাহুলের সম্মানজনক পুনর্ভিষেক। নির্বাচনে হেরে বড় বড় কথা বলে পদ ছেড়েছিলেন যিনি, তাঁকে আবার পদে বসাতে সময় ও উপলক্ষ্য দুইই তো যথাযথ হওয়া চাই! সম্ভবত চিন হচ্ছে রাহুলের সেই উপলক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রোজ চিন নিয়ে গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় নেতার ইমেজ গড়ে তুলতে চাইছেন রাহুল গান্ধী, যা তাঁর হাতে নেহরুর প্রপৌত্র হিসাবে দ্বিতীয়বার দলের ব্যাটন তুলে দেবে।

অবশ্য ইতিমধ্যেই পরপর দুটি লোকসভা ভোটে রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক পারফরম্যান্সের নমুনা দেখেছে গোটা দেশ। গত বছর লোকসভা ভোটের অাগে তাঁর রাফাল ইস্যু আর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ শ্লোগানের কী হাল হয়েছে তা দেশসুদ্ধ লোক জানে। নিজে কংগ্রেসের এককালের গড় আমেথিতে হেরেছেন, কেরালার নিরাপদ আসন ওয়েনাড়ে জিতে কোনওরকমে সাংসদ পদ বাঁচিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে তাঁর সম্পর্কে ‘ওভাররেটেড’ মূল্যায়ন করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের পথে বসিয়ে লোকসভায় দলের লজ্জাজনক হারের পর কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব ছাড়েন রাহুল। তাও বিস্তর নাটকের পর। দলের সভাপতি হিসাবে হারের দায়িত্ব নিজে না নিয়ে অন্য নেতাদের উপর চাপিয়ে বেশ কিছুদিন বিদেশে ‘উধাও’ হয়ে যান। তারপরেও কংগ্রেসের মত একদা ঐতিহ্যমণ্ডিত জাতীয় দলের এমনই অবস্থা যে গান্ধী পরিবারের বাইরে দলের হাল ধরার মত আর কোনও ‘যোগ্য’ লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। অতএব রাহুল ছাড়ার পর মসনদে তাঁর মা সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়াও পরবর্তী সভাপতি হিসাবে ফের নিজের ছেলের ফেরার রাস্তা পাকা করতে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। খোঁজ চলছে উপযুক্ত সময়ের। রাহুলের যোগ্যতা, দক্ষতা যাই থাক, তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রতিষ্ঠা করাই যে এখন সোনিয়ার লক্ষ্য, তা স্বীকার করেন কংগ্রেসের বহু নেতাই। শতাব্দীপ্রাচীন জাতীয় দলে পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপোষণের এমন বন্দোবস্তে চিনের ইস্যু রাহুলকে কতটা সহায়তা করে তা দেখার জন্য অারও কিছুদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে।

 

spot_img

Related articles

মাথার দাম ১০ লক্ষ! বিহার থেকে গ্রেফতার খালিস্তানি জঙ্গি

খালিস্তানি জঙ্গিদের নিধনে বিদেশে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়, কার্যত স্পষ্ট ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। অন্যদিকে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের...

বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাসে নতুন শক্তি নীতি রাজ্য সরকারের

বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা(Electric Demand) বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসকে সামনে রেখে রাজ্য সরকার(State Govt) নতুন  শক্তি নীতি তৈরি করতে চলেছে।...

ফের কলকাতা বিমান বন্দরে ভুয়ো বোমাতঙ্ক! আটক এক যাত্রী

ফের কলকাতা(kolkata) বিমান বন্দরে(Air Port) ভুয়ো বোমাতঙ্ক(Bomb Threat)। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় মুম্বইগামী ফ্লাইট ইন্ডিগো বিমানে(Indigo Airlines) বোমা রাখা...

পাঞ্জাবে বিষ মদের বলি ১৪! অসুস্থ ৬

পাঞ্জাবের অমৃতসরে(Amritsar) বিষ মদ(Hooch) পান করে প্রাণ গেল ১৪ জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৬। অমৃতসরের মাজিথা...