Saturday, August 23, 2025

করোনা আবহে পুজো নিয়ে কী কথা লিখলেন শ্রীজাত?

Date:

Share post:

বাড়ির সামনে নানান রঙের ঝলমলে আলোর মালা দিয়ে সাজিয়েছে। মিথ্যে বলব না, হঠাৎ চলতে ফিরতে জানলার বাইরে চোখ চলে গেলে দিব্যি লাগছে। কেমন একটা খুশি ভাব যেন, যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। গত বছরের পুজো দূর্বা আর আমি আলাদাই কাটিয়েছি। পেশার দায়ে অন্য মহাদেশের শহরে শহরে টহল দিচ্ছিলাম আমি, আর দূর্বা কলকাতার মণ্ডপসজ্জা ঝালিয়ে নিচ্ছিল। কথা ছিল, পরের পুজোয় আলো ভাগ করে নেব পাশাপাশি হেঁটে।

বেরনো যে যাবেই না বাড়ি থেকে, এতে দূর্বা এমনিতেই ভারী মুষড়ে পড়েছিল এ-বছর। তবু, ঠিক করেছিলাম, একসঙ্গে গান শুনে, ছবি দেখে, ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া করে বাড়িতেই ঠেসাঠেসি কাটাব এবারের পুজো। মনখারাপ করলে মাঝেমধ্যে দু’জনে মিলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছাতিমের গন্ধ নেব, আর জানলা দিয়ে দেখব লাল-নীল-সবজে আলোর ঝিকমিক। কিন্তু সেটাও যে হবার জো থাকবে না, সে আর কে জানত।

আপাতত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সে একটু কাবু। তবে, ওই একটুই। ক্লান্তি ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে ঠিকানা বদলে নিয়ে আজ থেকে দূর্বা দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি। ছ’তলার ঘরের জানলা দিয়ে নীচের আলো ঝলমল কলকাতা ওর মনখারাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে, জানি। আর আমারও মন নিভে আসবে আলো দেখলে, পাড়ার মাঠে মাইক বাজতে শুনলে। একা একা ছাতিমগন্ধ এ-বয়সে আর ভাল লাগে না। দূরত্বের সুতো দিয়ে পুজো সেলাই করার বছর যে এটাও, আগে বুঝতে পারিনি। বাড়িতে আমরা কয়েকজন এখনও ঠিকই আছি, কিন্তু সাবধানের মার নেই বলে, একবার পরখ করে নেব।

এ-কথা বলতে দ্বিধা নেই, আমার এই মধ্যচল্লিশের সফরে, দূর্বা’র মতো লড়াকু মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। গত দেড় দশকে যে-কোনও বিপন্নতায় বা বিপদে ওকে যেভাবে লড়ে যেতে দেখেছি, আমি তার অনেকটাই পারতাম না হয়তো। তাই আমি অন্তত নিশ্চিত, পুজোর ক’দিনে করোনাসুরকেই কাবু করে ছাড়বে ও। তাছাড়া যে-মানুষ খোদ আমার সঙ্গে এতগুলো বছর পার করেছে, করোনা তার কাছে নস্যি!

কেমন এক অসুখ এল আমাদের পৃথিবীতে, যেখানে প্রিয় মানুষের কাছে যাবার উপায় নেই, তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে আদর করার উপায় নেই, তার হাত মুঠোয় চেপে ধরে এই আশ্বাস দেবার উপায় নেই যে, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি তো আছি পাশে’। তাই যেটুকু আস্থার বাতাস হাত নেড়ে পাঠানো যায়, যেটুকু স্পর্শের আদল ইশারায় বোঝানো যায়, সেটুকুই ওর জন্য রেখে ফিরে এলাম বাড়ি।

আমার পুজো, আমাদের পুজো এবার পিছিয়ে দিলাম ক’দিন। সারা শহরের আলোর রোশনাই চেহারায় নিয়ে দূর্বা যেদিন বাড়ি ফিরবে, সেদিনই বোধন, সেদিনই পুজো শুরু।

আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করায় গুরুংকে স্বাগত তৃণমূলের

spot_img

Related articles

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...

রাজ্যে শুরু SIR প্রস্তুতি: একাধিক পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের

গোটা দেশেই এসআইআর লাগু হবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar)। বিহারে ৬৫ হাজার...

আস্থা কোথায়? প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন বুঝিয়ে দিলেন দিলীপ, কটাক্ষ তৃণমূলের

দৃশ্য এক, বিজেপির নক্ষত্রখচিত মঞ্চ। মালা, উত্তরীয়তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) বরণ করছেন একের পর এক বঙ্গবিজেপির...

বাংলা বিদ্বেষীকে পাশে বসিয়ে বাঙালি প্রেম! মোদির দ্বিচারিতাকে ধুইয়ে দিল তৃণমূল

বাংলায় এলেই বাংলা ভাষায় বক্তৃতা। এ তো নরেন্দ্র মোদির রেওয়াজ হয়েছেই। সম্প্রতি তিনি উত্তর ভারতের গোবলয়ের দেব-দেবী ছেড়ে...