Sunday, November 9, 2025

স্মরণে-শ্রদ্ধায়-চোখের জলে শেষবিদায় কিংবদন্তিকে

Date:

Share post:

কেউ বলছেন চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। আবার কারও কথায় নক্ষত্র পতন। কেউ বলছেন এমনটি আর হবে না। আর অগণিত গুণমুগ্ধ ভক্ত বলছে, বাংলা সিনেমা অভিভাবকহীন। ৪০ দিনের দীর্ঘ লড়াই। নিজেই যেন নিজেকে বলেছেন, “ফাইট-ফাইট”। লড়ে গিয়েছেন চিকিৎসকরাও। কিন্তু মৃত্যুর কাছে থামতেই হল।
দুপুর সোয়া বারোটা নাগাদ বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের কথা ঘোষণা করেন।
দুপুর একটা নাগাদ সেখানে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র কন্যা পৌলোমী বসু।

এরপরেই দেড়টা নাগাদ পৌলোমী এবং বেলভিউ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “কঠিন হলেও এটাই বাস্তব যে সৌমিত্রদা আর নেই”।

দুপুর দুটো নাগাদ তাঁর মরদেহ হাসপাতাল থেকে গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখান থেকে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ‘অপু’র দেহ যায় টালিগেঞ্জর টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। কান্নায় ভেঙে পড়েন কলাকুশলী থেকে শুরু করে সব বিভাগের কর্মীরা।

সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পরে সাড়ে তিনটের সময় রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ। সেখানেই শায়িত থাকে দুঘণ্টা। বাংলা চলচ্চিত্র জগত তো বটেই উপস্থিত হন সব পেশার মানুষ। সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু থেকে শুরু করে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী -সহ অন্যান্য বামপন্থী নেতারা।

সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফুলে সাজানো গাড়িতে চেপে ‘ময়ূর বাহন’এর দেহ চলে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে। আর সেই শেষ যাত্রার ছবি একটাই কথা বলে, “মেলালেন তিনি মেলালেন”। শেষ যাত্রার প্রথমের দিকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর একই সঙ্গে সেই যাত্রায় পা মেলান সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীরা। আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। মনে করতেন বামপন্থাই বিকল্প। ২০১১-র টালমাটাল সময়ে দাঁড়িয়েও নিজের বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বামেদের বুদ্ধিজীবী মঞ্চে উপস্থিত থেকে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের রাজনৈতিক অবস্থান। তবে তাঁর সে বামপন্থা যে শুধু বাহ্যিক বিশ্বাস নয়। তা প্রমাণ পেত তাঁর ব্যবহারেই। স্টারের তকমা ব্যক্তি মানুষকে কখনো আচ্ছন্ন করতে পারেননি। তাই ‘ফেলুদা’র মগজাস্ত্রকে শ্রদ্ধা জানালেও অপূর্ব রায় ছিল ঘরের ছেলে। সেই কারণেই সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় ছিল তাঁর।
শেষযাত্রায় পা মেলান বহু গুণমুগ্ধ ভক্ত। তাঁদের হাতে ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ক্লোজআপ ছবি। গলায় ছিল রবীন্দ্রনাথের গান। শেষযাত্রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা কবিতা পাঠ করেন কৌশিক সেন। গান পরিবেশন করেন পর্ণাভ, দেবমাল্যরা।

আরও পড়ুন- চলচ্চিত্র জগৎ চিরকাল তাঁর ঋণ স্বীকার করবে: বুদ্ধদেব

রবীন্দ্রসদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে দেহ পৌঁছনোর পর সাতটা নাগাদ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুটে কিংবদন্তিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

তারপরের সময়টি ছিল অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। বাবাকে আদর করেন কন্যা পৌলোমী। তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। যখন থেকে বেলভিউ চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা হতাশ, এবার প্রার্থনাই একমাত্র ভরসা। তখন থেকেই বারবার চোখ ভিজেছে পৌলমীর। গত ৪০ দিন ধরে বাইরে থেকে তিনি লড়ে গিয়েছেন। কিন্তু শেষ দিনে বারবার ভেঙে পড়েছেন সৌমিত্র কন্যা। স্মৃতিচারণায় বলেছেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শুধু বাবা ছিলেন না, ছিলেন বন্ধু ছিলেন সহযোদ্ধা। সেই বন্ধুকে বিদায় জানাতে মহাশ্মশানে কান্নায় ভেঙে পড়েন পৌলোমী বসু। আত্মীয়-বন্ধুরা তাঁকে সামলান।

সোয়া সাতটা নাগাদ তাঁর শেষকৃত্য শুরু হয়। পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নশ্বর দেহ। তাঁর অস্থি নিয়ে ফিরে যান আত্মীয়রা। একটা যুগ, একটা অধ্যায়, একটা শিক্ষিত-আভিজাত্যের পরিসমাপ্তি ঘটে।

আরও পড়ুন- নীতীশকে দুই উপমুখ্যমন্ত্রী দিয়ে ‘ঘিরছে’ বিজেপি! সুশীল মোদি এবার কেন্দ্রে !

spot_img

Related articles

সহপাঠীকে গুলি একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রের, ফ্ল্যাটে উদ্ধার অস্ত্রের সম্ভার

শনিবার রাতে গুরুগ্রামের সেক্টর ৪৮-এ এক অভিজাত আবাসনে ডিনারে ডেকে এনে সহপাঠীকে গুলি করার অভিযোগ উঠল একাদশ শ্রেণির...

‘অরণি সরণি’, উৎপল সিনহার কলম 

প্রথমে সিমেন্টের রাস্তায় লোহার ঠেলাগাড়ির আওয়াজ তারপর চিৎকার , ' ময়লা আছে? ' ছুটে যাই । উপুড় করে দিই ডাস্টবিন। ভাবি যদি সব ময়লা...

ফর্ম বিলি করতে গিয়ে ব্রেন স্ট্রোক! SIR-আতঙ্কে মৃত্যু এবার BLO-র

কারো নাম নেই ভোটার তালিকায়, কারো পরিচয়ে ভুল। এই সব আতঙ্কে যখন রাজ্যে একের পর এক সহনাগরিকদের মৃত্যু...

সংকটে ভারতীয় ফুটবল, কঠিন সময়ে সরব হলেন ইস্টবেঙ্গলের দুই তারকা

ভারতীয় ফুটবলে বিপণন করার কেউ নেই।দেশের সর্বোচ্চ লিগ না হলে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে ভারতীয় ফুটবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।...