ফের রাজনৈতিক “অজ্ঞাতবাস” শোভন-বৈশাখীর? মানহানি মামলার বয়ান রেকর্ড আদালতে

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে (Political Agenda) ফের “নিখোঁজ” শোভন-বৈশাখী জুটি! গত ১১ জানুয়ারি দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গেরুয়া জার্সিতে পথে নেমেছিলেন বিজেপির (BJP) কলকাতার পর্যবেক্ষক শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) ও তাঁর বিশেষ বান্ধবী সহ-পর্যবেক্ষক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Boishakhi Banerjee)। ওই সময়ে বিজেপির হয়ে একের পর এক মিছিল, সভা, পদযাত্রা করছিলেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু সেখানে রাজনীতির থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় ও কেচ্ছা নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন তাঁরা। যা জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তাঁদের বক্তব্যের জন্য মামহানি মামলাও হয়েছে। এরপরই নড়েচড়ে বসে গেরুয়া শিবির। পারিবারিক সমস্যা তুলে কেন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে? শোভন–বৈশাখীকে প্রশ্ন করে বিজেপি নেতৃত্ব। এর পর থেকেই ফের “অজ্ঞাতবাস” শোভন ও বৈশাখী। ভোট এগিয়ে আসছে। বেশকিছুদিন হয়ে গেলেও সেভাবে আর দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না শোভন-বৈশাখিকে। শোভনের দায়িত্বে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানা-কাকদ্বীপে সম্প্রতি দলীয় কর্মসূচিতে এসেছিলেন অমিত শাহ, সেখানেও দেখা যায়নি শোভন-বৈশাখীকে।

এরপরই জোর জল্পনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। ফের কি শোভন( Sovan Chatterjee)–বৈশাখী ( Baishakhi Banerjee) জুটির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে চলেছে বঙ্গ বিজেপির (BJP)? আবার কি দলের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের একটা অংশের সঙ্গে সংঘাত বা ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও তাঁর বিশেষ বান্ধবীর সঙ্গে? রাজনৈতিক মহলে এখন এই আলোচনাই ঘোরাফেরা করছে।
গেরুয়া শিবিরের একটি সূত্রের খবর, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পারিবারিক সমস্যাগুলি (Family Matter) নিয়েই যেন বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে এই জুটি। বিধানসভা ভোটের (Assembly Election) আগে আগে প্রকাশ্যে জনসভায় কিংবা র‌্যালিতে (Rally) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কেচ্ছাকেই তুলে আনছেন শোভন-বৈশাখী। যার সঙ্গে দূর দূর পর্যন্ত বিজেপি বা রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। খুব স্বাভবিকভাবেই জনমানসে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এবং ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে দলেরই। সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে বিরোধীরা।

জানা যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপির কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করা হয়েছে। কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে দু’জনকেই।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) সরাসরি শোভন-বৈশাখীকে ডেকে কিছু না বললেও তাঁদের চারপাশে থাকা অন্য নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে দু’জনের কাছেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামীদিনে যেন দলীয় কর্মসূচিতে কিংবা বিজেপির মঞ্চ থেকে রাজনীতির বাইরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কেচ্ছা নিয়ে তাঁরা যেন মুখ না খোলেন।

সম্প্রতি, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনবাবুর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আবার দু’জনেই শোভনবাবুর শ্বশুর তথা মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাসকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। যেখানে পারিবারিক কেচ্ছার কাহিনীও নগ্নভাবে উঠে আসছে জনসমক্ষে। যা মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেই খবর পেয়েছে গেরুয়া শিবির।

স্ত্রী রত্না কিংবা শ্বশুর দুলাল দাস নয়, রায়দিঘিতে দলীয় সভা মঞ্চ থেকে শোভন তাঁর “পারিবারিক বন্ধু” বিধায়ক তথা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের সঙ্গেও করুচিকর মন্তব্য করেন। যার দরুণ দেবশ্রী রায় শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলাও করেছেন। এই বিষয়টিকেই ভাল নজরে নিচ্ছেন না বঙ্গ বিজেপির প্রভাবশালী নেতাদের একাংশ। সব মিলিয়ে ভোটের আগে নতুন করে শোভন-বৈশাখী জুটি নিয়ে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। দেওয়া হয়েছে কড়া বার্তা।

আরও পড়ুন:আদালতের নির্দেশে ১৬ হাজার ৫০০ শিক্ষক পদে নিয়োগ আপাতত স্থগিত

অন্যদিকে, আলিপুর আদালতে আজ, সোমবার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলায় কুণাল ঘোষের বয়ান রেকর্ড করেন বিচারক। একইসঙ্গে এই মামলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে এজলাসে হাজির করেন কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। সব মিলিয়ে বেশ চাপে শোভন-বৈশাখী জুটি। আর তাঁদের নিয়ে নতুন করে অস্বস্তিতে বিজেপি শিবির।

Advt