রাত পোহলেই রাজ্যের ৫ জেলায় ৩৪ আসনে ভোট গ্রহণ। অর্থাৎ, ম্যারাথন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় “ভোট সপ্তমী”! নবান্ন নামক নীল বাড়ির দখলের লড়াইয়ে এই দফা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই দফায় ভোটের ময়দানে খেলতে নামছেন একঝাঁক রথী-মহারথী। যার মধ্যে বেশকিছু সেলিব্রিটি ও মন্ত্রীদের ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে।

ভোট সপ্তমীতে কারা নামছেন লড়াইয়ের ময়দানে?

• শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়: রাজ্যে বিদ্যুৎমন্ত্রী। ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের টিকিটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর থেকে জিতে প্রথমবার বিধায়ক। এরপর তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর ১৯৯৮ থেকে রাসবিহারী কেন্দ্রের বিধায়ক। তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিহাসে তিনি প্রথম দলের প্রতীকে নির্বাচিত বিধায়ক। এবার দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন ভবানীপুরে প্রার্থী তিনি।

আরও পড়ুন- রাজনৈতিক হিংসার সঙ্গে করোনার চোখ রাঙানি! সোমবার সপ্তম দফায় মোতায়েন ৮০ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী

• রুদ্রনীল ঘোষ: মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ভবানীপুরে এই টলিউড অভিনেতা এবার বিজেপির প্রার্থী। এক বছর আগেও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাস কয়েক আগে যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে।

• সুব্রত মুখোপাধ্যায়: রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী। ভোটে দাঁড়ানোর ৫০ বছর পূর্তি সুব্রতবাবুর। ১৯৭১ সালে বালিগঞ্জেই প্রথম দাঁড়িয়ে বিধায়ক। এবার সেই বালিগঞ্জেই তৃণমূলের প্রার্থী। সংসদীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্রার্থী তিনি। এর আগে সুব্রতবাবু বালিগঞ্জ ছাড়াও জোড়াবাগান এবং চৌরঙ্গি থেকেও বিধায়ক হয়েছেন।

• ফুয়াদ হালিম: পেশায় চিকিৎসক। বালিগঞ্জে তিনি সিপিএম প্রার্থী। আগে ২ বার বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরেছেন। লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েও হার সঙ্গী হয়েছে তাঁর।
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার প্রয়াত হাসিম আবদুল হালিমের ছেলে ফুয়াদ। আবহে সপ্তমবারের জন্য প্লাজমা দিয়ে এর মধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

• ফিরহাদ হাকিম: রাজ্যের পুরমন্ত্রী, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র। ২০০৯ সালে আলিপুরে উপনির্বাচনে জিতে প্রথম বিধায়ক। ২০১১, ২০১৬ সালে কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। এবারও সেখানেই প্রার্থী মমতা ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা।

• দেবাশিস কুমার: মে্যর পারিষদ দেবাশিস কুমার এবার রাসবিহারী কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী। এই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। কলকাতায় ৪ বারের কাউন্সিলর তিনি। রাসবিহারীতে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রাক্তন সেনা আধিকারিক সুব্রত সাহাকে। ৪০ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন সুব্রত।

• সায়নী ঘোষ: টলিউড অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ এবার লড়ছেন কেন্দ্র আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে। মাস কয়েক আগে বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের সঙ্গে টুইট–যুদ্ধে জড়িয়ে শিরোনামে আসেন সায়নী। তারপরই তুরুপের তাস হিসেবে শাসক দল তাঁকে টিকিট দিয়েছে।

•অগ্নিমিত্রা পল: আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে এবার বিজেপির তারকা প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার। লকেট চট্টোপাধ্যায় দায়িত্ব ছাড়ার পর বছর কয়েক আগে রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তিনি। বাবা অশোক রায় আসানসোল অঞ্চলের নামী চিকিৎসক। সেই অর্থে অগ্নিমিত্রা এই কেন্দ্রের ভূমিকন্যা। প্রতিদ্বন্দ্বী সায়নী ঘোষের মতো তিনিও এই প্রথম ভোটের ময়দানে।
আরও পড়ুন- রাত পোহালেই রাজ্যে ভোট সপ্তমী, ভবানীপুর-সহ একাধিক নজরকাড়া কেন্দ্র
• মলয় ঘটক: রাজ্যের শ্রম এবং আইন মন্ত্রী। ২০১১ সাল থেকে আসানসোল উত্তরের জনপ্রিয় বিধায়ক তিনি। এবারও সেখানেই লড়ছেন তৃণমূলের টিকিটে।
• ঐশী ঘোষ: দিল্লির স্বনামধন্য জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্ৰাক্তন সভানেত্রী ঐশী ঘোষ লড়ছেন বর্ধমানের জামুড়িয়াতে। তিনি সংযুক্তা মোর্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী। বামেদের একঝাঁক নতুন প্রজন্মের প্রার্থীদের মধ্যে উজ্জ্বলতম ঐশী। দুর্গাপুরের মেয়ে ঐশী এই প্রথমবার ভোটে। বছর কয়েক আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে “বহিরাগত”দের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর রাতারাতি শিরোনামে চলে এসেছিলেন এই বাম ছাত্রনেত্রী।
আরও পড়ুন- ২০১১-এর পুনরাবৃত্তি, বেলেঘাটায় ঐক্যমঞ্চ দেখালেন কুণাল
•অশোক লাহিড়ী: স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী এ এবারই প্রথম রাজনীতির ময়দানে। প্রথমে আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হয়ে যায়। পরে দলীয় কোন্দল সামলাতে কেন্দ্র বদল করে তাঁকে বালুরঘাটের প্রার্থী করে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের খবর, দল ক্ষমতায় এলে এবং বালুরঘাটের প্রার্থী জিতলে অশোকবাবু হবেন অর্থমন্ত্রী।
•জিতেন্দ্র তিওয়ারি: কেন্দ্র পাণ্ডবেশ্বর। বিতর্কিত এই কেন্দ্র থেকেই এবারও প্রার্থী হয়েছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তবে তৃণমূল নয়, তিনি প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির টিকিটে। নির্বাচনের আগে বারবার তাঁকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কার্যত ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো একবার তৃণমূল, আরেকবার বিজেপি, দলবদল করেছেন পাণ্ডবেশ্বরের বিদায়ী বিধায়ক তথা আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র। তাঁর রাজনৈতিক গ্রহণ যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার ভোটাররা।